সকল মেনু

বাম চোখ দিয়ে আর দেখবেন না দ্বিজেন টুডু

d9f8af38f5a58c3e7633681778e171ca-582d9623039ecহটনিউজ২৪বিডি.কম : ‘বাম চোখ দিয়ে কিছুই দেখি না। শরীরেও রক্ত নেই। হাঁটতে গেলে পড়ে যাই। বাড়িঘর ছাই করে দিয়েছে, আমাদের এখন আর কিছু নাই। ক্যামনে বাঁচবো আমি।’ এভাবেই নিজের দুর্দশার কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত দ্বিজেন টুডু।বৃহস্পতিবার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন টুডু হটনিউজ২৪বিডিকে আরও বলেন, ‘শরীরের ভেতরে জ্বালা-পোড়া করে, কপালে গুলি, মাথায় গুলি। মাথার যন্ত্রণায় জ্বর আসে,কিন্তু এখানে কোনও চিকিৎসা পাচ্ছি না।’ এদিকে চিকিৎসক ডা.সাইফুদ্দিন আহমেদ পিন্টু বলেন, ‘দ্বিজেন টুডু আর কখনও বাম চোখে দেখতে পাবেন না।’ চোখের ভেতরে থাকা বুলেট কবে বের করা হবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।

গত ৬ নভেম্বর রবিবার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকল এলাকার মাদারপুর ও জয়পুরে সাঁওতাল পল্লিতে হামলার ঘটনায় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত দ্বিজেন টুডুকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও পরে রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ পাহারায় সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগও করেছেন দ্বিজেন টুডুর পরিবার এবং স্বজনরা।কিন্তু তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালক ও দ্বিজেন টুডুর চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যালের বোর্ডের সদস্যরা।

শরীরের ভেতরেও গুলি আছে বলে মনে করেন দ্বিজেন টুডু। চোখে কালো চশমা পরা, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দ্বিজেন টুডু বলেন, ‘শরীরের ভেতরে জ্বালা-পোড়া করে। কপালে গুলি, মাথায় গুলি। মাথার যন্ত্রণায় জ্বর আসে। কিন্তু এখানে কোনও চিকিৎসা পাচ্ছি না।’ ভাইয়ের বিছানার পাশে বসা দ্বিজেন টুডুর ছোট বোন মার্থা টুডু মাথা নেড়ে সায় দেন ভাইয়ের কথায় এবং বলেন, ‘সারা শরীরে গুলি নিয়ে সেই কবে থেকে আমরা এখানে আছি। অথচ কোনও চিকিৎসা শুরু হয়নি। সিটিস্ক্যান, এমআরআই, রক্ত পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা করিয়েছি হাসপাতালের বাইরে থেকে। সরকারি হাসপাতাল, অথচ আমাদের মতো মানুষের জন্য এখানে কিছুই নাই।’

মার্থা টুডু বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর রাত ৩টায় এখানে এসেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ডাক্তাররা আমাদের সঙ্গে স্পষ্ট করে কিছু বলে নাই। অপারেশন কবে হবে, নাকি হবেই না, সেসব কিছুই জানি না।ভাইয়ের শরীরের ভেতরে থাকা গুলিতো বের করতে হবে।’

ভাইয়ের মাথায় চুলের ভেতরে হাত বুলিয়ে দিয়ে মার্থা টুডু বলেন, ‘সেদিন (৬ নভেম্বর) রংপুর মেডিক্যালে নেওয়ার পর সেখানেই আমাদের বলা হয়েছিল, বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এই চোখে আর দেখতে পারবে না।’ এরপর নিজে কেঁদে দিয়ে মার্থা টুডু বলেন, ‘ওরা হাতে থাকা হাতকড়া খুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু চোখটা কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমার ভাই কি সুস্থ হবে কোনোদিন?’ হামলার দিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে মার্থা বলেন, ‘সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার ভেতরে পুলিশ প্রথম গুলি ছোড়ে। তখনই ওর শরীরে গুলি লাগে। চোখ আর মাথা থেকে এমনভাবে রক্ত পড়ছিল যে, পোশাক দেখা যাচ্ছিল না। আমি গিয়ে ভাইরে জড়ায়ে ধরলাম। রক্তে আমার সারা শরীর মেখে গেল।রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে গেলাম। ভাই আমার নড়তে পারে না। তখন পুলিশ এসে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিলো।’ এখানে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না জানিয়ে মার্থা বলেন, ‘গত মঙ্গলবারে অনেকগুলো পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেছেন ডাক্তররা। বুধবার থেকে ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, এখনও চিকিৎসা শুরু হচ্ছে না ।’

এসময় সঙ্গে থাকা বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি পরিবষদের সদস্য জাকিয়া শিশির বলেন, ‘চিকিৎসায় যদি এত দেরি হয়, তাহলে এখানে এনে কী লাভ হলো? এখনও কোনও অপারেশন হচ্ছে না। চিকিৎসা যদি দেরিতে শুরু হয়, তাহলেতো মানুষটা এমনিতেই মরে যাবে।’ এসময় পাশ থেকে বিছানায় শুয়ে থাকা দ্বিজেন টুডু বলেন, ‘আমরা বেঁচে আছি এখনও, আমরাতো মরেই গেছি।’

তবে চিকিৎসা শুরু না করার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অস্বীকার করেছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দ্বিজেন টুডুর জন্য পাঁচ সদস্যের একটি শক্তিশালী মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার চিকিৎসার সবকিছু হচ্ছে এই বোর্ডের সম্মতিতে এবং নির্দেশনানুযায়ী। রোগী এখানে ভর্তি আছে এবং নিয়মিত তার ফলোআপ করা হচ্ছে। তবে এখন আমরা আরও বেশি নজর দেবো তার প্রতি।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিজেন টুডুর বিষয়টি মারাত্মক সেনসিটিভ।আমরা বিশেষভাবে খেয়াল রাখছি তার প্রতি ।’

এসময় পরিচালকের কক্ষে থাকা মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য এবং দ্বিজেন যার অধীনে চিকিৎসাধীন, সেই চিকিৎসক ডা.সাইফুদ্দিন আহমেদ পিন্টু বলেন, ‘আমরা ওর প্রতি যথেষ্ঠ সহানুভূতিশীল। ওর জায়গায় অন্য কোনও রোগী থাকলে, তাকে আমরা ছেড়ে দিতাম। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই আমরা তাকে চিকিৎসাধীন রেখেছি এখানে। এখন ওর বেড রেস্ট ছাড়া আর কোনও চিকিৎসা নেই।’

সাইফুদ্দিন আহমেদ পিন্টু আরও বলেন, ‘ওষুধ আর চোখের ড্রপ দিচ্ছি নিয়মিত। ওর বাম চোখ পুরোটাই ড্যামেজ হয়ে গেছে। কতটুকু দৃষ্টি ফিরবে, সেটা বলতে পারছি না।ভেতরে স্প্লিন্টার রয়েছে। রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমি বলতে পারি না যে, এই চোখে দেখবে না সে। কিন্তু সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। কিন্তু দ্বিজেন টুডুর পুরো শরীরে, মাথা এবং চোখের গুলির কী হবে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন আহমেদ পিন্টু বলেন, ‘চোখের গুলি ইরিটেবল না। এসব গুলি রিঅ্যাকশন করে না। ভবিষ্যতে যদি বের করার প্রয়োজন হয়,তখন আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আগে তাকে (দ্বিজেন টুডু) শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে পুরোপুরি। আমাদের আরও সময় প্রয়োজন তাকে অপারেশনে উপযোগী করে তোলার জন্য। তারপর মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে চিকিৎসার বিষয়ে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top