সকল মেনু

ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন নার্গিস

1e2e829fa25d2e502b8cbdc7bb115a5f-57f72446d3dd9হটনিউজ২৪বিডি.কম : সিলেটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির কোপে মারাত্মকভাবে আহত খাদিজা আক্তার নার্গিস সুস্থ হয়ে উঠছেন। খুব ধীরে হলেও বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন, পরিবারের মানুষদেরকে চিনতে পারছেন। তবে নার্গিসের বাম হাত এবং বাম পায়ের সমস্যার কারণে তাকে সাভারের সিআরপিতে (সেন্টার ফর দ্য রিহাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড) নেওয়া হবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন নার্গিসের বাবা মাশুক মিয়া। আজ বুধবার স্কয়ার হাসপাতালে মাশুক মিয়া এসব কথা বলেন।

প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন হলো নার্গিসকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে হাসপাতালের একটি কেবিনে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাশুক মিয়া। জানালেন, গত এক মাস ধরে মেয়ের কাছে বাবা-মা দুজনই রয়েছেন। তিনি বলেন, নার্গিস সুস্থ হয়ে উঠলেও তার বাম হাত এবং বাম পায়ে প্রায় ৭৫ ভাগ সমস্যা রয়েছে বলে চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ‘গত এক মাস আগে মেয়েকে আইসিইউতে দেখেছিলাম, এখন একটু সুস্থ হয়ে উঠছে। তারপরও এখনও দুই হাতে কিছু ধরতে পারে না, বসতেও পারে না, পাও ফেলতে পারে না। ওরে এখন আমরা ধরি ধরি (ধরে ধরে) হাটাই।’

চার সন্তানের মধ্যে নার্গিস একমাত্র মেয়ে এবং পুরো পরিবারের সবার আদরের বলেও জানান মাশুক মিয়া। তিনি বলেন, বদরুল অনেক বছর আগে বাড়ির ছোটদের পড়ানোর জন্য তাদের বাড়িতে লজিং থাকতো, কিন্তু সেটাও দুই মাসের বেশি নয়। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘সেই বদরুল যে এমন একটা কাজ করবে, মেয়েটাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করাবে যদি জানতাম তাহলে মেয়েকে সারাজীবন আড়াল করে রাখতাম।’

আর নার্গিসের মা আনোয়ারা বেগম কেবলই বলতে থাকেন ‘বদরুলের ফাঁসি চাই, বিচার চাই। আর কোনও কথা নাই।’

মাশুক মিয়া বলেন, মেয়ের এ অবস্থার পর থেকে ওর মায়ের কথা বলাও কমে গেছে, প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গেই কথা বলেন না তিনি। এরপর নিজের মনেই মাশুক মিয়া বলেন,‘সেই কবে থেকে সৌদি আরবে থাকি। ইচ্ছা ছিল, মেয়েটাকে লেখাপড়া করাবো, অনেক বড় হবে সে কিন্তু সবকিছু ঐ ছেলেটা নষ্ট করে দিল। আমার মেয়েটা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে কীনা আর সুস্থ হলেও তার মানসিক অবস্থা কতোটুকু ঠিক হবে সে ভাবনাতে রাতে আমার ঘুম হয় না।’

গত ৩ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটার পর ৬ তারিখে দেশে ফিরি ৫ মাসের ছুটি নিয়ে। আমরাওতো গরিব মানুষ, কিন্তু মেয়ের জন্য আসছি, মেয়েটা সুস্থ না হলে আর সেখানে যাবো কীনা এখনও বলতে পারি না।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মাশুক মিয়া বলেন, ‘ওর হাত পায়ের ব্যালেন্স এখনও ঠিক হয় নাই। তাই চিকিৎসকরা ঠিক করেছেন এখান থেকে আগামী ২৩ কিংবা ২৪ তারিখে সাভারের সিআরপিতে নার্গিসকে পাঠানো হবে।’ তিনি আরও জানান, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নার্গিসের পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময়ের প্রয়োজন।

মাশুক মিয়া আরও বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের সুস্থতার জন্য যা কিছু দরকার সব করবো, একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি, আমার মতো অবস্থা যেন আর কোনও বাবার না হয়, বাংলাদেশের আর কোনও মেয়ের যেন আমার মেয়ের মতো অবস্থা না হয় সে জন্যে বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এই সমাজে যেন আর কোনও বদরুলের জন্ম না হয় সেজন্যও তাকে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। প্রথমে তাকে সিলেটে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ভোরে হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় আনা হয় ও স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন থেকেই এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নার্গিস। অন্যদিকে ওই ঘটনার পরপর বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। আর এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর অসুস্থ নার্গিসের চিকিৎসাভার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top