সকল মেনু

মহাসড়কে বেহাল দশা, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি কমছে

399abb1210b1be1b03eea1bec7c33d92-58266ee3819adহটনিউজ২৪বিডি.কম : লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর-বড়বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার মহাসড়কটি সংস্কার না করায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কমছে। মহাসড়কটি সংস্কারের অভাবে প্রায়ই পণ্যবোঝাই গাড়ি বিকল বা উল্টে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে এই মহাসড়ক দিয়ে বন্দরের পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর ভাড়ার বৃদ্ধি ও চালকদের এ রাস্তায় গাড়ি চালাতে অনিহার কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

বৃহস্পতিবার সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর থেকে বড়বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার মহাসড়কের দুই ধারে আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই কয়েকশ ট্রাক আটকা পড়ে আছে। মহাসড়কের ‘ইন্দিরারপাড়’ নামকস্থানে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পাথরবোঝাই একটি ছয় চাকা ও একটি দশ চাকার ট্রাক বুধবার রাতে বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ওই মহাসড়কের উপর দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর এ ধরণের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এদিকে, স্থায়ীভাবে কোনও সমাধান না হওয়ায় ট্রাক চালকরা বুড়িমারী স্থলবন্দর অভিমুখে গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ইন্দিরারপাড় নামকস্থানে বিকল হওয়া ট্রাকের চালক আব্দুস সামাদ ও আসলাম হোসেন বলেন, ‘ভাড়া পাওয়া বড় কথা নয়। ভাড়ায় গিয়ে যদি আমার গাড়িই নষ্ট হয় তাহলে সে ভাড়া পেয়ে লাভ কি? এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতোদিন বুড়িমারী স্থলবন্দর চলাচলের রাস্তা ভালো হবে না ততোদিন এ রুটে গাড়ি চালাবো না। এ বিষয়টি মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি।’

যানজটে আটকে থাকা অপর ট্রাক চালক মামুন মিয়া বলেন, ‘আমার ট্রাকে ৫০ লাখ টাকার পান রয়েছে । এগুলো পাটগ্রাম যাবে। প্রায় ১২ঘন্টা ধরে আটকা আছি। জানি না কখন রাস্তা ঠিক হবে। ভেতরে পানগুলো নষ্ট হচ্ছে কি না কে জানে। এভাবে কি গাড়ি চালানো যায়?’

বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর সওদাগর, শামীম হোসেন ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, বিগত দুইবছর থেকে বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের ১০৬ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। আর্ন্তজাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি ব্যস্ততম মহাসড়ক সংস্কার করতে যদি এতো সময়ের প্রয়োজন হয় তাহলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ার কথা। বুড়িমারী স্থলবন্দরে সেটাই ঘটেছে। শুধু আমদানি-রফতানি হলেই তো হবে না। মহেন্দ্রনগর-বড়বাড়ী পর্যন্ত মহাসড়ক খারাপ থাকার কারণে পণ্য সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যহত হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার রিজভী আহম্মেদ বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর-লালমনিরহাট-বড়বাড়ী পর্যন্ত মহাসড়কটি খুবই খারাপ ছিল। প্রথম দফার কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তৃতীয় দফার অংশটুকুতে মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এ কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কিছুটা কমেছে।’

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, ‘মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে ট্রাক চালকরা এ রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না। এ কারণে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অতিরিক্ত ভাড়া এবং পণ্য স্বাভাবিকভাবে সরবরাহ করতে না পারায় ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এজন্য আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য করতে আগ্রহ হারাচ্ছে।’

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আগে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ পেতে বিলম্ব হওয়ায় মহাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছিল। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমও একটা সমস্যা ছিল। দ্বিতীয় দফার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তৃতীয় দফা কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। পূর্বের দরপত্রের কিছু ত্রুটির জন্য আবারও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করছি ৫-৬ মাসের মধ্যে বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো.আলাউদ্দিন খান বলেন,‘ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে একটি চিঠি পাওয়া গেছে। মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করা হলে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top