সকল মেনু

সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও কৌশলে চলছে প্রচারণা

5167069f01941af26511c64e7eb9ed48-582532e932c4eহটনিউজ২৪বিডি.কম : আইন করে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে নেই প্রচারণা। ভিন্ন কৌশলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাহারী এসব প্রচারণার মাধ্যমে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ধারা ৫ এর ‘ক’ উপধারায় বলা আছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না, বা করাবেন না।’

আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসেবে আইনের ধারা ৫ এর ৪ এ বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে, তিনি পর্যায় ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ধানমণ্ডি ৩২, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের স্টিকার, লিফলেট, আকর্ষণীয় লাইটার, টি-শার্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চায়ের দোকানে চায়ের কাপ উপহার দিচ্ছে। এসব চায়ের কাপে নির্দিষ্ট সিগারেটের লোগো দেওয়া আছে।

এছাড়া,বছরব্যাপী কয়েক মাস পর পর যেসব নতুন বা পুরনো ব্র্যান্ড বাজারে কম চলে, সেসব সিগারেটের মার্কেট বাড়ানোর জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করে চালাচ্ছে প্রচারণা। এসব প্রতিনিধিরা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বাস স্ট্যান্ড, হাসপাতালসহ জনসমাগম রয়েছে,এমন সব স্থানে সিগারেটের খুচরা বিক্রেতাদের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সিগারেটের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরে সেগুলো সেবন করার জন্য ক্রেতাদের অফার করে থাকেন। কখনও কখনও প্রচারণার খাতিয়ে বিনামূল্যে সিগারেটও দিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল এলাকার চায়ের দোকানগুলোর সামনে ‘মার্লবোরো’ সিগারেটের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে কয়েকজন যুবককে। তারা একই ডিজাইনের টি-শার্ট পড়ে দোকানগুলোর আশে পাশে ঘুরছে। কেউ একজন দোকানে আসলেই তিনি কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট সেবন করেন, সেটা জেনে নিয়ে তাদের ব্র্যান্ডের সিগারেট নিতে বলেন ওই যুবকরা। সঙ্গে তাদের সিগারেটের বিভিন্ন গুণাবলীও তুলে ধরেন। কেউ নিতে না চাইলে তাকে বিনামূল্যে নেওয়ারও প্রস্তাব দিতে দেখা গেছে ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা এখানে চুক্তিভিক্তিক কাজ করছি। এই এলাকায় আমাদের কোম্পানির মোট ৫০ জন প্রতিনিধি কাজ করছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা কাজ করতে হয়। প্রতিদিন একেকজনকে ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এই প্রমোশন টাইম চলবে অন্তত তিন মাস।’

তিনি বলেন,‘মার্লবোরো ভাল সিগারেট হলেও বেনসন বা অন্য সিগারেটগুলোর মতো বাংলাদেশে এটা চলে না। মার্লবোরোর মার্কেট বাড়ানোর জন্য এই প্রমোশন চলছে।’

টিএসসি এলাকায় দেখা গেছে আরেক চিত্র। ছোট একটি সিগারেটের বাক্স নিয়ে ঘুরছে জয়নাল নামের এক কিশোর। পুরো বক্সটি মার্লবোরো সিগারেট দিয়ে সাজানো। অন্যকোনও ব্র্যান্ডের সিগারেট সে বিক্রি করে না। তবে পরিচিত মুখ দেখলে অন্য একটি ব্যাগ থেকে অন্য ব্র্যান্ডের সিগারেট বের করে দেয়।

জয়নাল জানায়, মার্লবোরো কোম্পানি তাকে এই বাক্স ও সিগারেট বিক্রির জন্য নিয়োগ করেছে। প্রতিমাসে তাকে এ কাজের জন্য আট হাজার টাকা করে দেবে। তবে শর্ত রয়েছে মার্লবোরো ছাড়া অন্য কোনও সিগারেট সে বিক্রি করতে পারবে না।

রাজধানীর এফডিসি মোড়ে চায়ের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলোর ভিন্ন কৌশল। চায়ের কাপে সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন। দোকানি জানান, উইংস্টোন কোম্পানি থেকে কাপগুলো তাকে ফ্রিতে দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে করে কাস্টমারদের চা দিলেই নাকি ওদের লাভ।

প্রচারণা কৌশল হিসেবে রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় দেখা গেছে, খুচরা সিগারেট বিক্রেতারা সুদৃশ্য শোকেজে নিয়ে সিগারেট বিক্রি করছে। এসকল দামি ও সুদৃশ্য শোকেজগুলো কোম্পানির কাছ থেকে বিনামূল্যে পেয়েছে ,যার প্রতিটির দাম ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে সিগারেট বিক্রেতা রিপন মিয়া বলেন, ‘আমার শোকেজটি দিয়েছে গোল্ড-লিফ ও বেনসন কোম্পানি থেকে। কোনও কিছু ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে তারাই এসে ঠিক করে দিয়ে যায়।’ সবাইকে এই বক্সগুলো দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। কারা বক্স পাবেন, লোকেশন ও দৈনিক বিক্রির ওপর নির্ভর করে সেটা নির্ধারণ করা হয।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার নবীন একরাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা নিশ্চয় আইনবিরোধী। আমরা এর আগেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অবগত আছি।’

তিনি আরও বলেন,‘এ মাসেই আমরা আবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো। মাঝে মাঝেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রচারণা চলছে। এটা জানার পরও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে সবসময় তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top