সকল মেনু

‘মকবুলের নির্দেশেই সেদিন হত্যাকাণ্ড চালায় রাজাকাররা’

566b5bd942e6d46f0effe73bce79578e-5823f2790ea55হটনিউজ২৪বিডি.কম : ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের বর্তমান আমির ও তৎকালীন শান্তি কমিটির প্রধান মকবুল আহমাদের নির্দেশেই ফেনী কলেজের সাবেক ভিপি ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাওলানা ওয়াজ উদ্দিনকে ফেনী থেকে ধরে নিয়ে চট্টগ্রামে অজ্ঞাতস্থানে হত্যা করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের লাশের আর কোনও হদিস পায়নি তার স্বজনেরা।’ ফেনী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মীর আব্দুল হান্নান ও দাগনভুঞা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শরিয়ত উল্যাহ বাঙ্গালী এই অভিযোগ করেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও তথ্য অনুসন্ধানী দল জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মকবুল আহমাদের বিষয়ে ফেনীতে তদন্তে আসার পরপরই এই অভিযোগ করেন তারা।

মীর আব্দুল হান্নান ও শরিয়ত উল্যাহ বাঙ্গালী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘দাগনভুঞা উপজেলার লালপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানার পর স্থানীয় শান্তি কমিটি তা পাকিস্তানি বাহিনীকে জানিয়ে দেয়। পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ও শান্তি কমিটির প্রধান মকবুল আহমাদের নির্দেশে ওই গ্রামের রাজাকার সাহাব উদ্দিন, বদিউর জামান ও লাতু মিঞার নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণ চালায়। পাড়ার লোকজনের চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধা আনা মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে এবং সেখানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।’

তারা জানান, ‘এরপর হাত ও চোখ বেঁধে ১০ ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নেয় পাকিস্তানী বাহিনী। পরে তাদের একটি গর্তে জীবিত অবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। একই এলাকার খুশিপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্যাহ, মোমারিজপুর গ্রামের সিদ্দিক মেম্বার, কাশেম, ফাজিলের ঘাটের মফিজ, আজিজ ফাজিলপুরে তিন জন নারী, বৈরাগীর হাটে বিরলীর দুই মুক্তিযোদ্ধকেও হত্যা করা হয়। ’

গত মঙ্গল ও বুধবার ফেনীতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মকবুল আহমাদের একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও তথ্য অনুসন্ধান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। এসময় তদন্ত ও তথ্য অনুসন্ধানী দল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজ উদ্দিনের পরিবার ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেন ও তথ্য সংগ্রহ করেন।

এছাড়া, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনালের অনুসন্ধানী দল।

ট্রাইব্যুনালের সহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্যের গোপনীয়তা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথা রেখে এই বিষয়ে কোনও বক্তব্য গণমাধ্যমকে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। ভুক্তভোগীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ এগিয়ে আসা ছাড়া এই কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।’

তদন্ত দল মঙ্গলবার দিনব্যাপী ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর লালপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০ শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নেন সহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত দল বুধবার রাতে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে ফেনী ছেড়ে ঢাকা ফিরে আসেন।

উল্লেখ্য , জামায়াতের আমীর মকবুল আহমাদ স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ফেনী মহাকুমার শান্তি কমিটির কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রক্ষা করা ও তাদের এই দেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদর ও আল সামসের সমন্বয় করা। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top