সকল মেনু

চাঙ্গা হচ্ছে বেসরকারি খাত!

1c5ab1f4daebc302ed6633142e5e2000-581e8cb592ac7হটনিউজ২৪বিডি.কম : আজ থেকে ঠিক ছয় মাস আগেও জঙ্গি হামলাসহ বহুমুখী নাশকতার শঙ্কার মধ্যে ছিল দেশ। এখন সেই আতঙ্ক নেই। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এ কারণে দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে মন দিচ্ছেন। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। এর আগে গত জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছিল। ব্যাংক ঋণের এই প্রবৃদ্ধি বিগত ৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছিল। দীর্ঘদিন দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অবশ্য গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের পর থেকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ২০১৫ সালের জুনের পর থেকে গত ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত কোনও মাসেই প্রবৃদ্ধি কমেনি। তবে জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ছন্দপতন হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ।

এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশ সফর করায় দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও আগ্রহের সৃস্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করায় এদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃস্টি হয়েছে। তিনি বলেন, চীন প্রমাণ দিয়ে গেলো, যে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে উর্বর স্থান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগের নিরাপদ স্থান। তিনি বলেন, যে সব দেশ জঙ্গি ইস্যুসহ নানা অজুহাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত রয়েছে, তাদের চোখ খুলে দিলো চীন। এখন থেকেই প্রতি মাসেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বলে দিচ্ছে দেশের বিনিয়োগ খরা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কোনও সংকট নেই। জঙ্গি হামলার যে ভয় ছিল, তাও কেটে গেছে। ব্যবসার পরিবেশ এখন বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরাও এখন বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহী। চীনের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসার পর দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ যে আছে, তা আরও পরিষ্কার হয়েছে।’

ড. বিরূপাক্ষ পাল আরও বলেন, ‘অনেকে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে পড়তে শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন উদ্যোক্তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বিনিয়োগের জায়গা। এছাড়া ব্যাংকগুলোর কাছেও বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। সুদ হারও আগের তুলনায় অনেক কম।বিগত তিন বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশের নিচে। এখন ১৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে।’

তবে শিল্প উদ্যেক্তারা বলছেন, ঋণ প্রবৃদ্ধি হলেও অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য কাঙ্ক্ষিত শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ঋণপ্রবাহ আশানুরূপ বাড়েনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক ও ভোক্তা খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। গত অর্থবছরে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ হিসেবে ৬৫ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম (৯শতাংশ)। আলোচ্য সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে ঋণ বিতরণ কম হওয়ায় অর্থবছর শেষে এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতের সমস্যা এখনও কাটেনি। এ প্রসঙ্গে রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও হওয়া দরকার। এ জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতের সমস্যাগুলোর সামাধন করা জরুরি।’

নতুন শিল্প গড়ে তোলা ও বর্তমান শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি স্থাপনে মেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকেন উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিরা। এই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়লে এবং ওই ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। কিন্তু অন্য খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হলেও এই খাতে তুলনামূলক কম।

গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয় ৪২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা ৪১ শতাংশ বেড়ে হয় ৫৯ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বিতরণ হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৩৮ কোটি। ঋণ বৃদ্ধির হার মাত্র ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি প্রান্তিকেই শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ বেড়েছে। কিন্তু শেষ সময়ে এসে বিতরণে হঠাৎ পতন ঘটেছে। অর্থবছরে শেষ প্রান্তিক এপ্রিল-জুন সময়ে ১৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় দেড় হাজার কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ কম।

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এই খাতে ১৮ হাজার ২৬৪ টাকা ঋণ বিতরণ হয়। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় আড়াই শতাংশ বেশি। এ ছাড়া অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১৭ হাজার ৮১৮ কোটি এবং প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মেয়াদি শিল্প ঋণ বিতরণ হয়। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ প্রবদ্ধি হয় ৫ হাজার কোটি টাকা বা ৪০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১০ সালে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৩ সালের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঋণ প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা পরের বছরেও প্রলম্বিত হওয়ায় ঋণপ্রবাহে মন্দাভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে কমে ১৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫ সালের জুনে ছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি দাড়ায় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশে। এই প্রবৃদ্ধি জানুয়ারিতে ছিল ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণে সুহার কম। এ কারণে উদোক্তারা ঋণের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেক নতুন উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করেছেন। পুরনো অনেকে ঋণসীমা বাড়িয়েছেন। এ কারণেই ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top