সকল মেনু

নারী নেতৃত্বের সংকট ‘নারীবান্ধব’ সিপিবিতেও

00d900a4e293bb1eada547e8f1d4e373-580e3281ed652হটনিউজ২৪বিডি.কম : রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে নারীবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতেই নারী নেতৃত্বের সংকট দেখা গেছে। সক্রিয় নারীকর্মীরা বলছেন,নারী নেতৃত্বের জায়গায় সংখ্যা কম থাকার বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কিছু না। আমাদের সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলনই রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায়। কাজের ধরণগুলো এমনভাবে নির্ধারিত থাকে, যা মোটেই নারীবান্ধব না।

এদিকে পার্টির বর্তমান সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘নির্বাচন কমিশনের বেধে দেওয়া সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি করতে আমরা আগ্রহী, কিন্তু আপাতত কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার মতো নারী নেই। এবারের সম্মেলনেও সেটা পূরণ সম্ভব হবে বলে মনে করছি না।
গতবারের ৪৯ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর সংখ্যা ছিল সাত জন। চারজন উপদেষ্টার মধ্যে কোনও নারী নেই। প্রেসিডিয়াম সদস্য আট জনের মধ্যে একজন লক্ষ্মী চক্রবর্তী। কেন্দ্রীয় কমিটির চার সদস্য অধ্যাপিকা এএন রাশেদা, মনিরা বেগম অনু, অ্যাড. মাকছুদা আখতারও জলি তালুকদার। কন্ট্রোল কমিশনের সদস্যদের ১৫ জনের মধ্যে রয়েছেন লীনা চক্রবর্তী ও হোসনে আরা রুবি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’র শর্ত অনুযায়ী ‘‘রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিতে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।”

২০০৯ সালের আরপিও’র ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারী সদস্যদের জন্যে সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং এ লক্ষ্যমাত্রা পর্যায়ক্রমে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ অর্জন করার কথা বলা হয়েছে।

নারী প্রগতি সংঘ সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদে নারী সদস্যদের আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের একটিও সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধন করেনি, করতে পারেনি বা করতে চায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রোকেয়া কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে গতানুগতিক ‘মহিলাবিষয়ক সম্পাদক’ পদেই নারীকে সীমাবদ্ধ করে রাখার প্রবণতা আছে। সংসদের সংরক্ষিত আসনে ৫০ ভাগ নারী সদস্যকে রাখা হলেও তাদের কার্যক্ষমতা খুবই সীমিত। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা জরুরি।’’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার মনে করেন, ‘মূল নেতৃত্ব নারীদেরকে সামনে আনার বিষয়ে ইতিবাচকভাবে ভাবলেও সার্বিকভাবে নারী সংগঠক কম থাকার কারণেই নারীদের নেতৃত্বে দেখা যায় না।’ বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন,‘কোনও নারী গণসংগঠন না থাকলে নারীদের জাগরণ তৈরি করা মুশকিল। একসময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যে দায়িত্বটা পালন করতো, সেটি এনজিওকরণের কারণে নারী নেতৃত্বে সংকটের জায়গা তৈরি হয়েছে।’ করণীয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি গণসংগঠনকে শক্তিশালী করার। তাছাড়া, নারীমুক্তি আন্দোলনকে সক্রিয় করা কঠিন।’ ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার বিষয়ে তিনি বলেন,‘এ বিষয়েও নেতৃত্ব যথেষ্ট কনসার্ন ।’

সিপিবি ঢাকা কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য লুনা নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নেতৃত্বের জায়গায় নারী সংখ্যাগত কম থাকার বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কিছু না। আমাদের সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলনই রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমাদের নারী কর্মী কম। যতজন আছে ততজনকেই সক্রিয় দেখা যায় বলে সংখ্যাগত স্বল্পতার বিষয়টি বোঝা যায় না ততটা।’

কেন তারপরও নেতৃত্বে আসতে পারছে না প্রশ্নে লূনা বলেন, ‘পার্টির শৃঙ্খলা মেইনটেইন করতে গিয়ে নারীরা অনেকসময় পিছিয়ে পড়ে। কেননা, সে কাঠামো যথেষ্ট নারীবান্ধব না।’ তিনি বলেন, ‘নারীর জন্য উপযুক্ত সাংগঠনিক কাঠামো নেই। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় চাইলেই নারীরা পুরুষদের মতো কাজ করতে পারছে না। ফলে যখন নারীমুক্তি আন্দোলনে পুরুষদের সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, তখন নারীদেরকে সাংগঠনিকভাবে গড়ে তোলাও সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের ধরণগগুলো নারীর কথা ভেবে নির্ধারণ করা হয় না। ফলে এখন সময় এসেছে নারী-পুরুষের কাজের সক্ষমতা নির্ধারণের মানদণ্ড তৈরি করা। আসলে নারীর কাজকে পুরুষের কাজের সঙ্গে তুলনা করা হবে, নাকি শত বাধা সত্ত্বেও নারী যে জায়গায় এসে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে, সেটাকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। সবার আগে এ বিষয়টি মূল্যায়ণ হওয়া জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top