সকল মেনু

আমাদের মন বাবা মায়ের মনের কাছে কতটা ঋণী

unnamedউজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: একবার লক্ষ করি আমাদের দেহের প্রতি। এই বিশাল দেহের একটি মাত্র অর্গানকে নির্দিষ্ট করুন, যেটাতে পিতামাতার অবদান নাই । চেষ্টার পর চেষ্টা করে দেখুন । নিশ্চয়ই বারবার ব্যর্থ হবেন । এই দেহের প্রতিটি রক্তবিন্দু, অস্থি-মজ্জার অনু-পরমানুর পরতে পরতে বাবা-মায়ের অবদান জড়িয়ে । আসুন, দেহকে বাদ দিয়ে একটু মনের কাছে জিজ্ঞাসা করি, আমার,আমাদের মন বাবা মায়ের মনের কাছে কতটা ঋণী । খুব সহজেই উত্তর পাবেন যদি আপনি,আমি আমাদের বাবা মায়ের স্বপ্ন অনুধাবন করার শিক্ষা ও যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন। প্রত্যেক পিতামাতার স্বপ্নে ভাঁজে ভাঁজে তাদের সন্তানের মঙ্গলচিন্তা লুকিয়ে । কাজেই সন্তান হিসেবে প্রত্যেকেই সুসন্তানের পরিচায়ক হওয়া আমাদের দায়িত্ব । আমাদের বাবা-মায়েরা বয়সে বুড়ো হয়েছে বলে তাদের মন কিন্তু বুড়ো হয়না কখনো । তারাও ছোট্ট শিশুর মত লোভী । এটা-ওটা খেতে ইচ্ছা করে, ঘুরতে ইচ্ছা করে, বিলাসিতার ভোগে মত্ত হওয়ার আকাঙ্খা জাগে । কিন্তু যেদিন তাদের সন্তানের পৃথিবীতে আসা সেদিন থেকে বাবামায়েরা সেচ্ছায়-সজ্ঞানে তাদের সকল লোভকে হত্যা করেছে’ শুধু সন্তানকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসার লোভ ছাড়া । ভোগ্যের ইচ্ছাকে দমিয়ে দেয়া হয়েছে চিরতরে । একজন তরুণ বয়সী ছেলে-মেয়ে সন্তানের জনক হওয়ার পরেই শুধু সন্তানের মঙ্গলার্থে শুরু হয় তাদের কঠোর-কঠিন ত্যাগের তপস্যা । প্রার্থণার সবটুকু জুড়ে স্থান পায় সন্তানের কল্যান কামনা । অথচ দূর্ভাগ্য, আমরা বারবার প্রতিযোগিতা করে ভুলে যাই পিতামাতার অবদান । ভুলে যাই তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য । বিবেকের বিচারলয় যখন ব্যর্থ হয় তখন রাষ্ট্রের বিচারালয়কে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য বাতলে দিতে হয় । অথচ আমাদের লজ্জা জাগেনা তবু ! যে পিতামাতা তাদের সুখের সবকিছু বন্ধক রেখে সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় হাড়, দৃষ্টি, চুল ও দাঁতের ক্ষয় করে ফেললেন সেই পিতামাতার সম্মান রক্ষা কেন্দ্রিক কাজে আমরা উদ্ভূদ্ধ নই । হুট,হাট করে এমন কিছু কাজ করে বসি যার কারনে পিতামাতাকে সমাজে লাঞ্ছিত-অপমানিত হতে হয়। অথচ আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহনের পূর্বে ভাবা উচিত কি করে সমাজে পিতামাতার সম্মান বৃদ্ধি করা যায় । বর্তমান সমাজে পিতামাতার সাথে সন্তানের বেশিরভাগ মতানৈক্য বাধে বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারে । এরেঞ্জ নাকি লাভ ! যে মানুষগুলো যুগের পর যুগ সাধণায সেই ছোট্ট শিশুটিকে পুষ্প-পল্লবের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত করে সজ্জিত করলো সেই মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বাবামায়ের কর্তৃত্ব থাকবে না-এটা মানতে সবার কষ্ট হওয়া উচিত । তারপরে আমরা বাবামায়ের স্বাদ-আহ্লাদকে উপেক্ষা করি । আমি সর্বদা লাভ ম্যারেজের পক্ষে তবে ভালোবাসা এমন মানুষের সাথে হওয়া উচিত যা দু’পক্ষের পিতামাতা তথা সমাজ মেনে নিতে প্রতিবন্ধকতা দেখানোর যৌক্তিকতা না পায় । তাছাড়া যারা এরেঞ্জ ম্যারেজ করেছে তারা যে লাভ ম্যারেজের দম্পতির চেয়ে অসুখী এমন দৃষ্টান্ত খুব কম বরং বাবা-মায়ের পছন্দে যারা বিবাহ করে তাদের সুখী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং হয়ও । অতি আবেগ দ্বারা যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তার পরিনাম কোনকালেই মঙ্গল আনয়ন করেনি । চরম অসহায়ত্বের সময় যে মা একফোঁটা দুধ মুখে না দিলে মৃত্যু অনিবার্য হত সেই মাকে অবমূল্যায়ণ করলে সভ্যতা ধিক্কার জানায় । যে বাবা তার প্রতিটি দিনের বিশ্রামকে অবসরে পাঠিয়ে দিনরাত তীব্র পরিশ্রম করেছে কেবল সন্তানের কষ্ট লাঘবের জন্য সেই বাবা যদি সন্তানের আচরণে কষ্ট পায় তবে ঘৃণা তীব্র হয়ে তা মানবসভ্যতাকে দহনের অপেক্ষা করে । আমরা প্রত্যেকেই নানাভাবে পরিবারের কাছে ঋণী । আমাদের অস্তিত্বের সবটা জুড়েই শুধু পরিবারের একচ্ছত্র অবদান । কাজেই কোন অবস্থাতেই যেন বাবামায়ের কষ্টের কারন কেহ না হই । রক্তের শক্তি যখন প্রবল তখন মনে অনেক কিছু চায়, বিদ্রোহ-বিপ্লব, তবুও বাবামায়ের মতামত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top