সকল মেনু

আগমনী আশঙ্কামুক্ত হলেও বাঁচলো না আরিয়া

83c9368229d21efac0142172180ffa37-580ce95584f2fমেহেদি হাসান নিয়াজ, হটনিউজ২৪বিডি.কম: বাড্ডায় দুই মেয়েসহ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মা। স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি দেড়বছর বয়সী ছোট মেয়ে আরিয়াকে। রবিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যায় আরিয়া। তবে চিকিৎসার পর আগমনী (৪) আশঙ্কমুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এখনও অচেতন তাদের মা শাহানা আক্তার (৩৩)।

পারিবারিক কহলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে। তবে স্বজন ও প্রতিবেশিদের দাবি তাদের মধ্যে কোনও কোন্দল তারা কখনও দেখেনি। শিশুদের মা সুস্থ হলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।

এর আগে, শনিবার গভীর রাতে উত্তর বাড্ডার খান মসজিদের পাশের ‘পঞ্চকুল’ ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে অচেতন ২ শিশু ও তাদের মাকে উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লোর পরিস্কার করার ‘ক্লিনার’ পান করে মা তার সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
শনিবার রাতের ঘটনা বর্ণনা করে প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই শিশুদের প্রতিবেশি সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আগে ওই বাসাতেই ভাড়া থাকতাম। এখন ওই ভবনের পাশের একটি বাসায় ভাড়া থাকি। শনিবার রাত ২টার দিকে শিশুদের বাবা আমজাদ হোসেন আমাকে ফোন করে। তিনি জানান, বাসায় নক করলেও কেউ দরজা খুলছে না, ফোনও রিসিভ করছে না। এরপর আমি ওই বাসায় আসি। তখন দেখতে পাই সেখানে বাড়িওয়ালাসহ আরও লোকজন আছে। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। এরপর দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে গিয়ে দেখতে পাই দুই মেয়ে ও তাদের মা খাটের উপর অচেতন হয়ে পড়ে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসময় দ্রুত দুই মেয়েকে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এরপর আমি আর আমার স্ত্রী একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে দুই মেয়েকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসি। তখন ছোট মেয়ে আরিয়ার শরীর ঠাণ্ডা ছিল, বড় মেয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিল। রাতে পুলিশকে জানালে তারা এসে শিশুদের মাকেও ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। ভোরে আরিয়ার মৃত্যু হয়।’

ওই প্রতিবেশি আরও জানান, আমজাদের বড় মেয়ে আগমনী স্থানীয় সানরাইস কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের প্লে’তে পড়ছে। আমজাদ ও তার স্ত্রীর মধ্যে কখনও ঝগড়া বিবাদ দেখিনি। তবে একান্ত পারিবারিক বিষয় আমরা নাও জানতে পারি।’

ঘটনার সময় শিশুদের বাবা আমজাদ হোসেন উপস্থিত থাকলেও শনিবার সকালে তাকে ঢামেক হাসপাতালে দেখা যায়নি। মিষ্ট নামে তার এক ভাতিজা হাসপাতালে শাহানা আক্তার ও আগমনীর সঙ্গে রয়েছেন। আমজাদের বড়ভাই নূরুল ইসলাম নিহত আরিয়ার লাশ গ্রহণ করেছেন। আমজাদ হোসেনের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘আমজাদ হোসেন আমার ছোটভাই। আটবছর আগে পারিবারিকভাবেই শাহানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে কখনও অশান্তি দেখিনি। হঠাৎ কি হয়েছে আমি জানি না। তবে শুনছি গতকাল আমজাদ বগুড়াতে ছিল। সে একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ে চাকরি করনে। বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে থাকে। রাতে বাসায় গিয়ে সে ওই পরিস্থিতি দেখতে পায়।’

ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বড়মেয়ে আগমনী আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তবে মা এখনও অচেতন। শনিবার রাতেই তাদের পাকস্থলী ওয়াশ করা হয়েছে। এখন স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।

এছাড়া নিহত আরিয়ার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হতে পারে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ভিসেরা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখনও মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’

বাড্ডা থানার এসআই বজলুর রহমান জানান, ‘প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণে মা তার দুই সন্তানকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে এখনই কিছু নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না। ফ্লোর পরিস্কার করার ‘ক্লিনার’ পড়ে থাকতে দেখিছি বাসায়। তাও পান করতে পারে। তবে কোনটাই নিশ্চিত না। শিশুদের মা সুস্থ হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও কোনও মামলা হয়নি। শিশুদের বাবা হয়তো ভয় পাচ্ছেন। তবে শাহানা আক্তার সুস্থ হলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। নিহত আরিয়ার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top