সকল মেনু

বেনাপোল সীমান্তে বেপরোয়া বিএসএফ

images (5)রিপন হোসেন, যশোর থেকে :ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ’র বেপরোয়া আচরণে অশান্ত হয়ে উঠেছে যশোরের সীমান্ত। প্রতিদিন ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানি। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। প্রতিকারে বিজিবির নিষ্ফল চেষ্টার ত্রুটি নেই। পতাকা বৈঠক হচ্ছে। জানানো হচ্ছে প্রতিবাদ। কিন্তু প্রতিকার মিলছে না। বিএসএফ’র পক্ষ থেকে সীমান্তে নমনীয় আচারনের আশ্বাস মিলছে। কিন্ত তার বাস্তবায়ন ঘটছে না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ খুন করছে বিএসএফ। নির্বিচারে বাংলাদেশী নারীদের ধর্ষণ করছে। আটক করে পাঠাচ্ছে কারাগারে। বেপরোয়া বিএসএফ’র হাত থেকে রেহায় পাচ্ছেন না পাসপোর্ট যাত্রীরাও। নিয়ম না থাকলেও বেনাপোল চেকপোষ্টে কাস্টমস তল্লাসীর পর নোম্যান্স ল্যান্ডে বিএসএফ বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীদের জোর করে ল্যাগেজ তল্লাসী করছে। ইচ্ছে মতো তারা বিভিন্ন যাত্রীর ল্যাগেজ থেকে পণ্য বের করে নিচ্ছে। বিএসএফ’র বেপরোয়া আচারণে ক্ষুব্ধ বেনাপোল পোর্ট ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টরাও। কিন্তু প্রতিকারের কোন উপায় জানা নেই কারোর। ফলে দিন দিন বিএসএফ’র এই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সরকারের কুটনৈতিক তৎপরতার অন্ত নেই। সীমান্ত শান্ত রাখতে বিএসএফ আর বিজিবি’র মধ্যে বছরে কমপক্ষে ৫ বার সীমান্ত সম্মেলন হচ্ছ্ েপ্রতি মাসে হচ্ছে পতাকা বৈঠক। এছাড়া আন্ত:বাহিনীর মধ্যে আলাপ আলোচনা চলছে বিরামহীন ভাবে। কিন্তু বিএসএফ’র বন্দুকের নল থেকে গুলি বের হওয়া বন্ধ হচ্ছে না। নানা কারনে অকারনে বিএসএফ সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৪ বছরে যশোর সীমান্তে বিভিন্ন ঘটনায় বিএসএফ’র হাতে ৭৫ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। একই সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরো কয়েকশো বাংলাদেশী। যাদের অনেকে হাত, পা, চোখ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এসময় শতাধিক নারী বিএসএফ সদস্যদের হাতে ধর্ষণসহ নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সীমান্তে কর্মরত বাংলাদেশী কৃষক, গরুর রাখাল, চোরাচালানী ও অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীরা বিএসএফ’র গুলির টার্গেটে পরিনত হচ্ছে। গত মাসে পুটখালী সীমান্তে ইছামতি নদীর পাড়ে হাবিবুর রহমান ও ফারুক হোসেন নামে ২ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। সর্বশেষ গত ৭ জুলাই বেনাপোলের সাদীপুর খালে ইব্রাহিম নামে এক বাংলাদেশী যুবকের লাশ পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে নির্যাতনের পর হত্যা করে তার লাশ বিএসএফ ওই খালে ফেলে দেয়। পরে ওই লাশ চব্বিশ পরগনার বনগাঁ থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত নিহতের পরিবার ইব্রাহিমের লাশটি পায় নি। এর কয়েক দিন আগে একই এলাকার আংরাইল থানা এলাকার খেদাপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য সুরোজিত বর্মা এক বাংলাদেশী নারীকে তার সন্তানের সামনে জোর করে ধর্ষণ করে।পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই বিএসএফ সদস্যকে বরখাস্ত করে বিএসএফ’র কোম্পানী কমান্ডার। নির্যাতনের শিকার ওই মহিলার বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। অসুস্থ্য পিতাকে দেখতে তিনি মুম্বাই থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছিলেন। গত পরশু চৌগাছার মাশিলা সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ জন গরুর রাখাল।

এদিকে বেনাপোল বন্দরেও বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল দিন ভর বেনাপোল বন্দরের নোম্যান্স ল্যাল্ডে খোঁজ খবর নিয়ে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতন আর হয়রানির দৃশ্য চোখে পড়ে। ৭ দিন ভারতে চিকিৎসা শেষে গতকাল দেশে ফিরছিলেন যশোরের নজরুল ইসলাম। সাথে স্ত্রী রোজিনা বেগম। তিনি জানান, পেট্রাপোলে কাস্টমস চেকিং করার পর তিনি যখন তার ল্যাগেজ নিয়ে নোম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করছিলেন তখন সেখানে দায়িত্বরত বিএসএফ সদস্যরা তাকে থামিয়ে তার ল্যাগেজ তল্লাসী করে। তিনি নিষেধ করলেও তারা শোনেনি। বিএসএফ সদস্যরা তার ল্রাগেজ থেকে ২টি দামি শাড়ি বের করে নেয়। বিষয়টি তিনি বেনাপােল কাস্টমসকে জানান। বেনাপোল কাস্টমসের সুপার নাসির উদ্দিন মাহমুদ খান বলেন, ঘটনাটি লিখিত আকারে পেট্রাপোল বিএসএফ ক্যাম্পের কমান্ডারকে জানানো হয়েছে । তিনি বলেন, কাস্টমস রুলে বিএসএফ বা বিজিবি সদস্যদের কাস্টমস চেকিংয়ের পর কোন যাত্রীর ল্যাগেজ তল্লাসী করার কোন বিধান নেই। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দরে বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই এভাবে যাত্রীদের ল্যগেজ তল্লাসী করে তাদের কে হয়রানি করছে। বিষয়টি বার বার অবহিত করলেও বিএসএফ কানে নিচ্ছে না। বেনাপোল বন্দর আইসিপির বিজিবি ক্যাম্প ইনচার্জ নায়েক সুবেদার আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের বিজিবির কোন সদস্য কোন যাত্রীর ল্যাগেজ তল্লাসী করে না। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের কাজ হচ্ছে যাত্রীদে পাসপোর্টে সীল সহি ঠিক মতো আছে কিনা তা দেখা। এর বাইরে তাদের কোন ডিউটি নেই। অথচ বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই যাত্রীদের ল্যাগেজ নিয়ে টানা হেচড়া করে। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯৫০ জন বাংলাদেশী এবং ১৩৫ জন বিদেশী ভারতে প্রবেশ করেন। একই সময়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ৭৬৫ জন বাংলাদেশী এবং ৩৫ জন বিদেশী নাগরিক বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশীকে পেট্রাপোলের ন্যেম্যান্স ল্যান্ডে বিএসএফ সদস্যদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএসএফ সদষ্যদের হাতে আমদানি ও রপ্তানী কারক এবং সিএন্ডএফ এ্যাজেন্টরাও প্রতিনিয়ত হচ্ছেন নাজেহাল। ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যখন সরকারী বেসরকারী উদ্যোগের কমতি নেই তখন দেশের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ সদস্যদের এই মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি দুই দেশের সম্পর্কে ফাঁটল ধরাচ্ছে। ফলে শত চেষ্টা করেও অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top