সকল মেনু

শুধু নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে দল বেশি দিন টিকবে না : সৈয়দ আশরাফ

sayed-asraf_38436হটনিউজ২৪বিডি.কম : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও উন্নতির দিকে যাবে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সুবিধা দেওয়া হলে তা দলের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। উন্নয়ন হতে হবে সমষ্টিগত। দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, জাতি আগাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এগিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন। সৈয়দ আশরাফ বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালো থাকলে আমরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ভালো থাকব। দেশ রসাতলে গেলে আমরাও রসাতলে যাব। যারা আওয়ামী লীগ করেন, যারা রাজনীতি করেন, যারা রাজনীতি করেন না, যারা সাধারণ মানুষ— সবার ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। সরকার সবার জন্য সমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার। কেবল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভাগ্যের পরিবর্তন করলে এই দল বেশি দিন টিকবে না। জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। সব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। মূল কথা হলো, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হলে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হবে। সৈয়দ আশরাফ স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পরে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় তিনি যুক্তরাজ্যে প্রবাস জীবন কাটান। ১৯৭৬ সালে তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি পাসপোর্ট ফিরে পান। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিন হন। তিনি ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সালে এবং ২০১২ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের সরকারে প্রতিমন্ত্রী, ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং বর্তমানে জনপ্রশাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে থাকাকালে তিনি সক্রিয়ভাবে লেবার পার্টির রাজনীতি করেছেন।
টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক এবং দল প্রথমবারের মতো টানা দুবার ক্ষমতায় গেল— এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দল এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই। দলের একক নেতা, যিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নেতৃত্বে দল সার্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। দলে এখন রাজনীতি আছে। দলের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও লক্ষ্য না থাকলে সে দল চলতে পারে না। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও মহানগরের কাউন্সিল উৎসবমুখর পরিবেশে সংগঠিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এখন আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তার মতে, দলীয় ঐক্য, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, ইতিবাচক রাজনীতি এবং জাতির কাছে সুদৃঢ় অঙ্গীকার— এসব মানুষের কাছে সাংঘাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে টানা দুবার দল ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর সরকার ও দলের মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, দল ও সরকারের মধ্যে কোনো ফারাক বা সমন্বয়হীনতা আছে বলে আমার মনে হয় না। আওয়ামী লীগ একটা শক্তিশালী দল। তার নিজস্ব কার্যক্রম দলগতভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে কেবল কেবিনেটে বসে আছে তা নয়, মাঠে-ময়দানে দলীয় কার্যক্রম চলছে। এর কোনো রকম বিঘ্ন ঘটেনি। এ ছাড়া দলে কোনো বিভেদ নেই, দলাদলি নেই। এই ভাইয়ের গ্রুপ, সেই ভাইয়ের গ্রুপ নেই। সে কারণেই আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

বলা যায়, গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং নেই। বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আওয়ামী লীগের জয়লাভে সহায়ক হয়েছিল কিনা— এমন প্রশ্নে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছিল যে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। তাই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে বিএনপি গত নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলে তারা লাভবান হতে পারবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচন বর্জন করা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে খুব কমই নির্বাচন বর্জনের ঘটনা আছে। জেনারেল আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদের আমলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করেনি। বঙ্গবন্ধু বলতেন, নির্বাচনে যাওয়া কেবল জয়লাভের জন্য নয়, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে বার্তা দেওয়া যায়। আপনি আগে একটি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, এখন একটি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।

সরকার ও দল এ দুইয়ের সমীকরণ কীভাবে মেলাবেন— এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা সমষ্টিগতভাবে কাজ করে। যেমন আমি জনপ্রশাসনমন্ত্রী, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে। একটি টিম রাষ্ট্র পরিচালনা করে। আমাদের টিমের লিডার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে কোনো ব্যক্তি নন। রাষ্ট্র পরিচালনা একটি টিমওয়ার্ক। আগামী নির্বাচন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের নির্বাচন হবে বলে অনেকে মনে করেন।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলকে কীভাবে ঢেলে সাজানো দরকার জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দুবারের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা দলের সব শাখার সম্মেলন শেষ করে এরই মধ্যে দল গুছিয়ে এনেছি। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলগতভাবে আমরা প্রস্তুত। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে এবং তার নেতৃত্বে বিপুল ভোটে দল জয়লাভ করবে। দল আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক দল যেমন কংগ্রেস পার্টি ভারতের স্বাধীনতার পর টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। টানা দুবারের বেশি কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না তা সংসদীয় গণতন্ত্রে নেই। এখানে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী টানা কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচার টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টি এই মুহূর্তে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে। লেবার পার্টির যে অবস্থা তাতে মনে হয় তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোনো দলের একাধিকবার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।

ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে বর্তমান যে নীতিতে এগোনো হচ্ছে, সেটাকে কীভাবে দেখেন— জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। আমরা একদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছি, একইভাবে চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখছি আবার রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারি। এটাই বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। যে কারণে সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। কারও সঙ্গে বৈরিতা নেই।

এক-এগারোতে দলের কঠিন দুঃসময়ে আপনি দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই পথ-পরিক্রমায় আজকের অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, এক-এগারোর একটা সময়ে বিএনপি এবং আমাদের দলের একটি অংশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উত্খাত পরিকল্পনা নিয়েছিল। তখন আমার কথা ছিল, আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নির্বাচন আদায় করা। আমরা যদি নির্বাচন আদায় করতে না পারতাম, তাহলে সামরিক শাসন দীর্ঘায়িত হতো। আইয়ুব, জিয়া, এরশাদের সামরিক শাসন দেশে দীর্ঘ সময় ছিল। সে কারণেই তখন আমাদের অনেক কৌশল করতে হয়েছে। তখন আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল দুটি, প্রথমত দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করা, দ্বিতীয়ত নির্বাচন আদায় করা। আমরা দুটোতেই সফল হয়েছি। দলীয় সভানেত্রী কারামুক্ত হয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছি। তখন যদি আমরা ভুল করতাম, বিএনপির সঙ্গে মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উত্খাতে মনোযোগী হতাম তাহলে এক-এগারোর সরকারের বিদায় হতো না, নির্বাচনও হতো না, আমরা ক্ষমতায়ও যেতে পারতাম না। সৈয়দ আশরাফ বলেন, এক-এগারোর সময় জিল্লুর রহমান (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) সাহেবের একটা ভূমিকা ছিল। তিনি ইতিবাচক ছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন, একটা নির্বাচন হোক।

আমাদের ধারণা ছিল, নির্বাচন আদায় করতে পারলে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে এবং শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। জিল্লুর রহমান সাহেব খুব শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। উত্তেজিত হতেন না। তিনি বলেন, বিএনপি সে সময় নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে। কারণ তারা জানত যে, নির্বাচনে তারা জয়লাভ করতে পারবে না। সে বিপর্যয় কিন্তু বিএনপি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিএনপি যে গত নির্বাচন বর্জন করল এটাও তাদের রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে। একবার ট্রেন লাইনচুত্য হলে তা আবার লাইনে নিয়ে আসা অনেক কঠিন। (সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top