সকল মেনু

ভবদহে চোখের জলের সাথে বন্যার জল স্থায়ী রুপ নিতে যাচ্ছে

unnamedভবদহ অঞ্চল থেকে ফিরে, আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: মণিরামপুরে জলাবদ্ধতার প্রত্যাশিত তেমন উন্নতি হয়নি। বরং হরিহর নদীর উপচে পড়া পানি যেন স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিচ্ছে। দিন দিন কর্মহীন মানুষের কাফেলার আয়োতন বাড়ছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংকট বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির, মিটছেনা অন্ন-বাসস্থান সমস্যা।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান কালে দেখা গেছে, হাজার হাজার ক্ষুধার্ত আদম সন্তানের চোখের জলের সাথে বন্যার জল একাকার হয়ে তা এখন কমতে থাকায় নোংরা ও বিশাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দুধ নেই উপবাসী মায়ের বুকে, তাইতো ক্ষুধায় ছটপট করছে কোলের শিশুরা।

unnamed

শুরু হয়েছে পেটের পীড়া ও পানি বাহিত রোগ। গৃহপালিত গবাদি পশুর পরিমান শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। হাজার হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। এক প্রকারে গোটা মনিরামপুর উপজেলা এলাকা এখন মাছের ঘেরে পরিনত হয়েছে। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকতে না পেরে সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার পরিবার এখন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে পৈত্রিক ভিটায় ফিরতে শুরু করেছে। তবে মহা চিন্তা পড়েছে কি খাবে, আর কোথায় ঘুমাবে। জলাবদ্ধ মানুষের আর্তি কোথায় আমাদের এমপি, কোথায় জেলা প্রশাসক।
জলাবদ্ধ হাজারো মানুষ এই প্রতিবেদকের কাছে অনুযোগ করেছেন, মানবেতর জীবনযাপনের দৃশ্য কতটা দুর্বিসহ ও যন্ত্রনার তা অনুধাবন করতে পেরে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিএস-২ ড. নমিতা হালদারকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি গত সোমবার ভবদহ এলাকা ঘুরে গেছেন। জলাবদ্ধ এলাকার মানুষরা তাকে বলছেন, সরকারি সাহায্য পাচ্ছিনা বলে¬ই চলে। স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার শুধুই আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক এক প্রকার চুপ রয়েছেন। সব থেকে দুঃখজনক ঘটনা হলো এমপি স্বপন বাবুর দেখা মিলছেনা। ফলে ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষেভ বাড়ছে।

unnamed

মণিরামপুরের সব এলাকার খালবিল, ডোবা, পুকুর ভেসে একাকার হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপজেলার মনোহরপুর, ঝাঁপা, দুর্বাডাঙ্গা, মশ্মিমনগর, হরিহরনগর, কুলটিয়া, শ্যামকুড়, হরিদাসকাটি ইউনিয়নসহ আশপাশের অনেক গ্রামের হাজারো পরিবার। বসতঘর ও রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা রান্না করতে পাচ্ছে না। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়ে তা ইতিমধ্যে পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এলাকাগুলোর টিউবওয়েল তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও স্থায়ী রুপ নিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের। হরিহর নদীতে পলি জমাসহ অবৈধ পাটার কারণে পানি নামতে পারছে না। ফলে নদী উপচে পানি ঢুকে পড়েছে ইউনিয়নের চিনেটোলা, ফকির রাস্তা, হাসাডাঙ্গা, শ্যামকুড়, নাগোরঘোপ ও জামলা গ্রামের অনেক এলাকায়। এতে প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।

unnamed

ঘরের মধ্যে মানুষের পাশাপাশি আশ্রয় হয়েছে সাপ, পোকা-মাকড়ের। পানিবন্দি হয়ে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ইউনিয়নের প্রায় বিশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে পানি ঢুকে ধর্মীয় ক্রিয়াদি বন্ধ হয়ে গেছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও ভেতরে হাঁটুপানি থাকায় চিকিৎসাসেবাও বন্ধ। এলাকার কোনো কোনো পাকা সড়কের ওপর দিয়ে প্রায় এক ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় ছোট যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়ে পড়া এসব মানুষ তারা এখনো পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ বা সহযোগিতা পাচ্ছেনা।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ এপর্যন্ত এক দিন কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে কিছু ত্রাণ দিয়েছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে সামর্থ অনুযায়ী আজ পর্যন্ত ত্রান সামগ্রী বিতরন করে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top