সকল মেনু

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে দম্পতি হত্যাকান্ড: পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

unnamedডাঃ জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম জেলা: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিজেদের ঘর থেকে  উদ্ধার হওয়া দম্পতিকে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে বাদ দিয়ে মামলা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এলাকার একটি প্রভাশালী মহল ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হত্যাকান্ডের শিকার দম্পতি গোলাম হোসেন এবং শিল্পি খাতুনের পরিবারের লোকজন।জানা যায়,নিহত গোলাম হোসেন পাবনায় তাঁত শ্রমিকের কাজ করতেন। স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে স্ত্রী শিল্পী খাতুনকে স্থানীয় বখাটে কামরুল, সানাউল্লাহ, আবদুল আউয়াল, মাজম আলী ও শামসুল হক প্রায়ই উত্যক্ত করতো বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছে একাধিকবার। আর এরাই এই হত্যাকান্ডে জড়িত বলে দাবি স্বজনদের। নহত শিল্পি খাতুনের মা মিলন মালা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে সাবেক চেয়ারম্যান কাদেরের ছেলে কামরুল সহ আরও চারজন বিরক্ত করতো। আমার মেয়ে ব্রাকের স্বাস্থ্য কর্মির কাজে রাস্তায় বের হলে তারা (অভিযুক্তরা) মেয়ের কাপড় ধরে টানতো, বিভিন্ন কু-প্রস্তাব দিত। রাতে ঘরের পিছনে গিয়ে বেড়ায় শব্দ করত । তারে টাকার লোভ দেখাইয়া কু-প্রস্তাব দিত। কিন্তু পুলিশ তার নামে মামলা নেয় নাই। চেয়ারম্যানের ছেলেরে বাদ দিয়া মামলা করতে বাধ্য করছে। তনি আরও বলেন, আমার ফুলের মত মা,হেরা সকলে মিইলা তারে হত্যা করছে। আমার ঘরের বাতি নিভায় দিছে, আমি এর বিচার চাই।
শিল্পির ছোট বোন সেলিনা জানায়, চেয়ারম্যানের ছেলে কামরুল ও তার সহযোগী আউয়াল,সানোয়ার (সানাউল্লাহ),মাজম আলী ও শামছুল হক আমার বোনকে বিভিন্নভাবে উত্তক্ত করতো। পুলিশে অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার পাই নাই।
এদিকে নিহত গোলাম হোসেনের প্রতিবেশী ময়না খাতুন জানান, গোলাম হোসেন বাইরে কাজ করতো। এই  সময় এলাকার কিছু ছেলে স্ত্রী শিল্পিকে নানা ভাবে বিরক্ত করতো। এই  নিয়ে এলাকায় দুই দফা সালিশও বসেছিল। তারা সেই  বখাটেদের নামে থানায় জিডিও করেছিল।  হত্যাকান্ডের দিন সকালে গোলাম হোসেনের মা বাহাতনের ডাকে ছুটে এসে প্রথম লাশ দেখেন প্রতিবেশী ভাবি মালেকা। তিনি জানান, ঘরের দরজা চাপানো ছিল। হাত দিয়ে জোরে ঠেলা দিতেই  দরজা খুলে যায়। কিন্তু পুলিশ কেন বলছে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল তা তারা জানেন না।মালেকা বলেন,’গোলাম হোসেনের বৌ শিল্পি দেখতে অনেক সুন্দর আছিল। এলাকার ৪/৫ জন পোলাপাইন শিল্পিরে অনেকদিন থাইকা বিরক্ত কইরতো। তারাই দুই স্বামী-স্ত্রীকে হত্যা কইরছে। আমি নিজে দরজা খুলছি, দরজা খুলতে কোনও জোর করতে হয়নাই, দরজা ভাঙতেও হয়নাই।’

unnamed

গোলাম হোসেন-শিল্পী খাতুন দম্পতি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে কামরুলের নাম বাদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও নিহত শিল্পির বাবা আব্দুস ছাত্তার।  তিনি বলেন, আমি কাদের চেয়ারম্যানের ছেলে কামরুল সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার নাম বাদ দিয়ে চার জনের নামে মামলা নিছে।  তিনি আরও জানান, তার মেয়ে শিল্পিকে বাইটকামারী গ্রামের কাদের চেয়ারম্যানের ছেলে কামরুল, একই গ্রামের শরীয়ত উল্যাহর ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩০) শামছুল হক (২৭), তালু শেখের ছেলে সানোয়ার হোসেন (২৬) ও আবুল হোসেনের ছেলে মাজম আলী (২৮) তাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এই নিয়ে তারা থানায় জিডি করেন এবং সাবেক চেয়ারম্যান কাদেরের বাড়িতে একধিকবার সালিশও হয়েছিল। তারপরও প্রতিকার না পেয়ে শিল্পি খাতুন পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের জীবন রক্ষা হলো না। অভিযুক্ত বখাটেরাই তার মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে, ছেলের নাম অভিযুক্তের তালিকায় না নিতে কাদের চেয়ারম্যানকে নিয়মিত রৌমারী থানায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ ছেলে কামরুলের নাম এজাহারে উল্লেখ করতে দেননি বলে অভিযোগ নিহত দম্পতির পরিবার ও এলাকাবাসীর।  রৌমারী থানার অফিসার ইন চার্জ এবিএম সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে, তদন্তে যাকেই দায়ী পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কেউ বাদ যাবে না। আশা করি খুব দ্রুত আসামী গ্রেফতার হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাইটকামারী নামক এলাকায়  নিজ ঘরের ভিতরে গোলাম হোসেন এর ঝুলন্ত ও স্ত্রী শিল্পী খাতুন এর মেঝেতে পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top