সকল মেনু

শুল্ক ফাঁকির ২০০ গাড়ি রাস্তায়

কারনেট সুবিধায় আনা বিএমডব্লিউ গাড়ি। বহু বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল এ গাড়ি। সম্প্রতি এ গাড়ি নিলামে তোেল কাস্টমস l ছবি: সংগৃহীত২০১০ সাল থেকে ২০১২। এই সময়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯০টি বিলাসবহুল গাড়ি এসেছে। গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসি কম দেখানো ও কারনেট সুবিধায় এগুলো আনা হয়। এ ধরনের ৩২টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। ফিরে গেছে অর্ধশতাধিক গাড়ি। এখনো দেশের ভেতরে আছে অন্তত ২০০ গাড়ি। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে এসব গাড়ি অবৈধভাবে চলছে। এসব গাড়ি আমদানির সময় শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ তথ্য স্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, পোরশে, ল্যান্ড রোভার, রোলস রয়েলস, সেডান কার মডেলের ৩২টি গাড়ি আটক করেছেন। এর মধ্যে একজন সিলেটের শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে স্বেচ্ছায় একটি লেক্সাস গাড়ি জমা দেন। সম্প্রতি কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই গাড়ির ভেতরের আসনে একটি খোলা চিঠি পাওয়া যায়। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমার দখলে থাকা গাড়িটি শুল্ক গোয়েন্দার সদর দপ্তরে জমা করছি। আমি এই গাড়িটি জমা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যে আমার মতো অন্যরাও যেন অবৈধ গাড়ি জমা দেন।’
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ সুবিধায় বিলাসবহুল গাড়ি এ দেশে এসেছে। এর মধ্যে কারনেট সুবিধায় দেড় শ গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। বিদেশি পর্যটকেরা কারনেট সুবিধা পেয়ে থাকেন। কারনেট সুবিধায় আনা একটি গাড়ি বিদেশি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ এক বছর চলাচল করতে পারবে। গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার দিন থেকে এই সময় গণনা শুরু হবে। সময় শেষ হলে ওই গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর আগে ওই পর্যটককে নিজ দেশের অটোমোবাইল সংস্থা ও পর্যটন সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে।
২০১৩ সালে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, জাতিসংঘের কারনেট সনদের আওতায় ১৯৬৩ সাল থেকে কারনেট সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে প্রায় ৩০০ গাড়ি আনা হয়েছে। কিন্তু সেই সনদে কখনো সই করেনি বাংলাদেশ। তাই শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের।
কারনেটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাড়িগুলো দেশে এনেছেন বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ২০০ গাড়ি এসেছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৫০টি গাড়ি ফেরত গেছে। একই সময়ে গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসি কম দেখিয়ে অবৈধ উপায়ে ৬০টির মতো গাড়ি আমদানি করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত জাপানি, ভারতীয়, কোরিয়ান, মালয়েশিয়ান প্রাইভেট কার ও জিপ চলাচল করে। এগুলোর ইঞ্জিেনর ক্ষমতা সর্বোচ্চ ২০০০ সিসি। কিন্তু ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়িগুলো ২০০০ সিসির বেশি হয়ে থাকে। সিসি বেশি হলে শুল্কের হারও বাড়তে থাকে। তাই সিসি কম দেখিয়ে ও পুরোনো মডেল দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। অনেক সময় ভুয়া নম্বরপ্লেটও ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া সাংসদ, বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি কূটনীতিক ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিশেষ সুবিধায় গাড়ি আনতে পারেন। এসব গাড়ি চার বছরের আগে হস্তান্তর বা বিক্রি করা যায় না। আর হস্তান্তর করতে হলে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। তবে শর্ত ভঙ্গ করে বিশেষ সুবিধায় ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি আসার তথ্য রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ২০০টি গাড়ি শনাক্ত করার কাজ চলছে জানিয়ে মইনুল খান বলেন, আটক গাড়িগুলোয় কর ফাঁকি হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আর আটক না হওয়া গাড়িগুলোয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। অবস্থান নিশ্চিত হলেই এগুলো আটক করা হবে।
মইনুল খান বলেন, আটক ৩০টি গাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকজন মালিক শুল্ক পরিশোধ করার আবেদন করেছেন। অনেক মালিক আবার গাড়ি ফিরিয়ে নিতে অনাগ্রহী। অনেকেই ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়ি আমদানি করেছেন। যেসব গাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি বা অনাগ্রহী মালিকদের গাড়িগুলো নিলামে নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top