সকল মেনু

৫ শ্রমিকের মৃত্যুর দেড় মাস পাড় হলেও মরদেহ পৌছেনি স্বজনদের কাছে

shariatpur Sarja Tragedy Pic-1 (4)শরীয়তপুর সংবাদদাতা :সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজা শহরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে শরীয়তপুরের ৫ শ্রমিকের মৃত্যুর দেড় মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনো মরদেহ আনা হয়নি দেশে। মৃত ব্যক্তিদের ডিএনএ পরীক্ষা করে সনাক্ত করনের পর মরদেহ দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘ দিন পার হলেও দেশে মরদেহ ফেরত না আসায় পরিবার গুলো রয়েছে চরম উৎকন্ঠায়।

গত ২ জুন ২০১৩ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শারজাহ শহরে আলী মুসাহ শিল্প এলাকায় আল নাফী ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল ট্রেডিং নামক একটি ফ্যাক্টরীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরন ঘটে। এতে বাংলাদেশের ৬ শ্রমিক নিহত হয়। ৬ শ্রমিকের ৫ জনই শরীয়তপুর জেলার সদর ও নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। মৃত শ্রমিকেরা হলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার গ্রামচিকন্দী গ্রামের জয়নাল বেপারীর ছেলে খবির উদ্দিন, একই গ্রামের মৃত হোসেন দেওয়ানের ছেলে আলী একাব্বার, সুজানদোয়াল গ্রামের ইউছুব আলী মল্লিকের ছেলে আল আমিন মল্লিক, নড়িয়া উপজেলার দুলুখন্ড গ্রামের আব্দুল হামিদ শেখ এর ছেলে জাকির হোসেন শেখ এবং চাকধ গ্রামের গিয়াস উদ্দিন হাওলাদেরর ছেলে বাচ্চু মিয়া হাওরাদার।

অগ্নিকান্ডে নিহত ব্যাক্তিরা উল্লেখিত ফ্যাক্টরিতে অবৈধভাবে কর্মরত থাকায় তাদের তাৎক্ষনিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ৬ শ্রমিকেরই শরীর ও চেহারা আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যায়। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শারজার আল শাজা’আ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে ১৭ জুন শারজা শরীয়াহ্ আদালত থেকে ৬ মৃত ব্যাক্তিকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। ফ্যাক্টরীর পাকিস্তানি মালিক অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনার পর পলাতক থাকায় ৬ মৃতদেহ শনাক্তকরন ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

শরীয়তপুরের নিহত ৫ শ্রমিকের মধ্যে আলামিন মল্লিকের ভাই মতিউর রহমান মল্লিক সে দেশে থাকায় তার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আল আমীনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও মোঃ খবির উদ্দিনের হাতের ছাপ থেকে তার মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকী তিন জন জাকির হোসেন শেখ এর ভাই আকতার হোসেন, বাচ্চু হাওলাদারের ভাই নাছির উদ্দিন হাওলাদার ও আলী একাব্বর এর ভাই আকবর দেওয়ান এর কাছ থেকে ডিএনএ এর নমুনা সংগ্রহ করে করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানোর কথা থাকলেও বাংলাদেশ জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো ও জনশক্তি কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের গাফলতির কারনে এখনো ডিএনএ পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে মৃত শ্রমিকদের স্বজনদের মধ্যে ক্রমশই উৎকন্ঠা বাড়ছে।

এদিকে শারজাহ থেকে আল আমীনের বড় ভাই মতিউর রহমান মল্লিক মুঠোফোনে শুক্রবার জানান, “ আমার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমার ভাইর মৃতদেহ শনাক্ত করা হলেও দুবাইস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের অসহযোগিতার কারনে লাশ দেশে নিতে পারছিনা। এখানকার বাংলাদেশ দুতাবাসের কর্মকর্তারা (নাসরিন বেগম, মোঃ জাকির হোসন ও মোঃ ইউনুষ আলী) নিজেরা কোন কাজ না করে আমাদের শুধু ভোগান্তির মধ্যে রেখেছে। তাদের সদিচ্ছা থাকলে আরো আগেই আল আমীন ও খবিরের লাশ দেশে নেয়া সম্ভব হতো”।

খবির উদ্দিনের স্ত্রী রতœা আক্তার বলেন, “আমি শুনেছি আমার স্বামীর লাশ চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু কবে, কী ভাবে লাশ দেশে আনা হবে সে বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি সরকারের কাছে কিছুই চাইনা, শুধু আমার স্বামীর লাশটা ফেরত চাই” ।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের ফরিদপুর অফিসের সহকারী পরিচালক ষষ্ঠিপদ রায় জানান, গত ৮ জুলাই দুবাইতে মৃত তিন জনের স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মচারী ধর্মঘট চলার কারনে সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের পাঠিয়ে ডিএনএন সংগ্রহ করে আরব আমিরাতে পাঠানো হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস জানান, শারজায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের মধ্য থেকে নির্ধারিত ব্যক্তিদের ডিএনএ এর নমুনা সংগ্রহরে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নমুনা পাঠানোর পরে তা পরীক্ষান্তে লাশ সনাক্ত করা গেলে আমিারাতস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের সহায়তায় মরদেহ দেশে ফেরত আনা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top