সকল মেনু

কলসিন্দুরের মেয়েদের ‘জুতাপেটা’র হুমকি শিক্ষকের!

32a8c0060a6374b0cd52ccbf23d90252-untitled-4

কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের একজন শিক্ষক স্কুল থেকে ‘জুতাপেটা’ করে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে, তাঁর কথামতো একটি ম্যাচে খেলতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করায় এমন হুমকি দিয়েছেন কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক জুবেদ তালুকদার।
শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, সেই সঙ্গে নারী ফুটবলার তাসলিমার বাবাকে তিনি মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাতে কলসিন্দুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। সদ্য শেষ হওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলের বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দলের নারী ফুটবলারদের ওপর একের পর এক আঘাত এসেই যাচ্ছে। টুর্নামেন্ট শেষে লোকাল বাসে বাড়ি ফেরা, উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ার পর এবার তাদেরকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিলেন ওই শিক্ষক। তাসলিমাসহ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের নয়জন সদস্য কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষার্থী।

কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, ফুটবলার মেয়ে ও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের নয় সদস্য গত মঙ্গলবার বিকেলে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরে ফেরে। গতকাল বুধবার বিকেলে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ওই নয়জন ফুটবলার ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ সভা করে। সভায় অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনসহ অন্য শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জুবেদ তালুকদার মেয়েদের বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় একটি স্কুলের সঙ্গে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার মেয়েদের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি ফুটবল ম্যাচ হবে। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের নয়জনকেই ওই খেলায় অংশ নিতে হবে। তখন মেয়েরা জানায়, বাফুফের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর বাফুফেতে উপস্থিত হতে হবে। ১৭ সেপ্টেম্বর এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের সাফল্যের জন্য বাফুফে মেয়েদের সংবর্ধনা দেবে। তার পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে সাফ গেমসের অনুশীলন। ফলে মেয়েরা বাফুফের সংবর্ধনা ও সাফ গেমসের অনুশীলন বাদ দিয়ে স্কুলের ম্যাচ খেলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

এতে জুবেদ তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েরা ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্কুলের সিদ্ধান্ত না মানা বেয়াদব মেয়েদের জুতাপেটা করে বের করে দেওয়া হবে। আপনারা (অভিভাবকেরা) মেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে যান।’ এ সময় অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা উপস্থিত থাকলেও কেউ জুবেদ তালুকদারের কথার প্রতিবাদ করেননি। তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়াসহ কয়েকজন অভিভাবক জুবেদ তালুকদারের কথার প্রতিবাদ করলে বাগ্‌বিতণ্ডায় সভা শেষ হয়ে যায়।

পরে গতকাল বুধবার রাতে কলসিন্দুর বাজারের মহিলা মার্কেট এলাকায় সবুজ মিয়া স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে স্কুলের সভার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ওই সময় জুবেদ তালুকদার এসে সবুজ মিয়াকে গালাগালি ও কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে বাজারের লোকজন এসে জুবেদ তালুকদারকে থামান।

এ ব্যাপারে সবুজ মিয়া বলেন, ‘মেয়েদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার কথা বললে আমি প্রতিবাদ করেছি। এ ঘটনার জের ধরে তিনি (জুবেদ) আমাকে মেরেছেন।’ খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সবুজ মিয়া বাদী হয়ে ধোবাউড়া থানায় জুবেদ তালুকদারকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

জুবেদ তালুকদার আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে সবুজ মিয়ার সঙ্গে আমার কথা-কাটাকাটি হয়েছে। তবে মারধরের অভিযোগটি সঠিক নয়। এটা অপপ্রচার করা হচ্ছে।’

কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনা কিছুটা ঘটেছে। তবে অতিরঞ্জিত হয়ে মানুষের মুখে মুখে প্রচার পাচ্ছে। আমরা জরুরি সভা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’

এ ব্যাপারে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম বলেন, ‘সবুজ মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top