সকল মেনু

২০ মিনিট দড়িতে ঝুলে থাকে কাসেমের দেহ

image-35148-1472915077

একাত্তরে নৃশংসভাবে হত্যাকারী বাহিনী আলবদর নেতা ও জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি শনিবার রাতে কার্যকর করা হয়। এদিন রাত ১০টা ৩০ মিনিটে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গত ৩০ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে ফাঁসিকাষ্ঠ এড়াতে তার সামনে খোলা ছিল শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ। মীর কাসেম সেই সুযোগ নেবেন না বলে গত শুক্রবার জানিয়ে দেন।

শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারাগারে পৌঁছায় মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করতে সরকারের নির্বাহী আদেশ।

কাশিমপুর কারা কর্মকর্তারা মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যদের শেষবারের মতো দেখা করতে খবর পাঠায়। বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের জন্য কারাগারে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তারা সোয়া ৪টায় দেখা করার সুযোগ পান। পরিবার ও নিকট আত্মীয়সহ ২২ জন দেখা করেন। ছোট ছোট দলে ধাপে ধাপে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সব শেষে দেখা করেন স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলের বউসহ আটজন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

পরিবারের সদস‌্যরা দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করেন মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। এর পর কারাগারের ভেতর প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন, জেলার, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশ তাকে পড়ে শোনানো হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি।

রাতে কনডেম সেলে গিয়ে মীর কাসেমকে গোসল করিয়ে রাতের খাবার দেওয়া হয়। এরপর ধর্মীয় রীতি অনুসারে কাসেমকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ইমাম হাফেজ মুফতি হেলাল উদ্দিন তওবা পড়ান। এ সময় তার কাছ থেকে তার শেষ কোনো কথা থাকলে তাও শুনে নেন কারা কর্মকর্তারা।

মুফতি হেলাল উদ্দিন তাকে বলেন, ‌‘আপনার কৃতকর্মের জন্য আদালত আপনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আপনি একজন মুসলমান ব্যক্তি। এ কারণে আপনি আল্লাহ’র এই দুনিয়ায় কৃতকর্মের জন্য তওবা করেন’।

এর আগেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন কারা চিকিৎসক ডা. মিজান ও ডা. কায়সার।

তওবা পড়ার মিনিট চারেক পর কনডেম সেলে জল্লাদরা আসেন। রাত পৌনে দশটার দিকে তারা মীর কাসেমকে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে। ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার পর তার মাথায় পরানো হয় একটি কালো রংয়ের টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি’।

ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর নিজামীর দুই হাত পেছন দিকে বাধা হয়। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত ছিলেন জল্লাদও। মঞ্চে তোলার পর তার দুই পাও বাঁধা হয়। পরানো হয় ফাঁসির দড়ি।

কারা কর্তৃপক্ষের হাতে ছিল একটি রুমাল। রুমালটি হাত থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই  জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে টান দেন। লিভারটি টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসির মঞ্চের নিচে চলে যান শিবির প্রতিষ্ঠাতা বদর নেতা কাসেম আলী। এ সময় মাটি থেকে ৪-৫ ফুট শূন্যে তাকে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে মুহূর্তের মধ্যেই তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মরদেহ তোলা হয়। এরপর কারা চিকিৎসক ডা. বিপ্লব কুমার ও ডা. আহসান হাবিব, গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খানের তত্ত্বাবধানে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন। এ সময় তার ঘাড়ের রগ কাটা হয়।

মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দায়িত্ব পালন করেন জল্লাদ শাহজাহান, দীন ইসলাম, রিপন ও শাহীন জল্লাদ।

ফাঁসি কার্যকর করার সময় ফাঁসির মঞ্চ ও কারাগারের ভেতরে ছিলেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি প্রিজন) কর্নেল ইকবাল হাসান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ, সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান, কাশিমপুর কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক, জেলার নাশির আহমেদ। মঞ্চের চারপাশে ছিলেন ২০ জন কারারক্ষী।

রিভিউ খারিজের যত দিন পর ফাঁসি কার্যকর
আবদুল কাদের মোল্লা: ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আবেদন খারিজ হয়, ওই দিন রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান: ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল আবেদন খারিজ, ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসি কার্যকর হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী: ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর আবেদন খারিজ হয়, ২১ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয়।
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ: ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর আবেদন খারিজ হয়, ২১ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর।
মতিউর রহমান নিজামী: ২০১৬ সালের ৫ মে আবেদন খারিজ হয়, ১০ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top