সকল মেনু

হুইল চেয়ারের ফেরিওয়ালা

polashi-bg20130719054147স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম,ঢাকা: পঞ্চাশ বছর বয়স আব্দুল জলিলের। ২০০২ সালে রোলারের নিচে চাপা পড়ে প্রথমে দুই পায়ের পাতা কাটা যায় তার। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে দু’বছর পর কেটে ফেলতে হয় দুই পা।
৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে পুরনো ঢাকার হোসনী দালান সংলগ্ন আমেনা হোটেলের পাশে ছোট দুই রুমের জীর্ণ বাসায় বসবাস করেন আব্দুল জলিল।
ছোট্ট মেয়ে রেখাকে নিয়ে ভাঙা ঘরের ভেতর আব্দুল জলিলকে বর্ষায় বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে ঘরের এক কোনে বসে বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়। যেন কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের ‘মহেষ’ গল্পের আমেনা ও গফুর!
সংসারের অনটন ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা কিছুই দমানে পারেনি জলিলকে।
শারীরিকভাবে নিজের পায়ে না দাঁড়াতে পারলেও আর্থিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। জলিল যেন এক সংগ্রামী নাম।
শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও আব্দুল জলিল ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেননি। হুইল চেয়ারে বসে নগরীতে ফেরি করে বেড়ান পান, বিড়ি, সিগারেট, লজেন্স, চুইংগামসহ বিভিন্ন পণ্য। আব্দুল জলিল হোসনী দালান হয়ে ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও নিউমার্কেট এলাকায় হুইল চেয়ারে ঘুরে ফেরি করেন এসব পণ্য। কারোর সাহায্য ছাড়াই জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন তিনি।
বছরের অন্যান্য সময় বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রি করেন দ্রব্যাদি। কিন্তু রমজান মাসে মাগরিবের পর বের হয়ে সারারাত ফেরি করেন। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকার বেচাকেনা করে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা মুনাফা করে ঘরে ফেরেন।
একদিন ফেরি করলে পরের দিন বিশ্রাম নিতে হয়। শরীর ব্যথা কিছুটা কমলে আবার বেরিয়ে পড়েন হুইল চেয়ারের ফেরিওয়ালা আব্দুল জলিল। নগদ পুঁজি নেই তার। বাকিতে পণ্য কিনে বিক্রি করে পরিশোধ করেন পণ্যের মূল্য।
কথা হয় হুইল চেয়ারের ফেরিওয়ালা আব্দুল জলিলের সঙ্গে হটনিউজের। তিনি বলেন, ‘হুইল চেয়ার নিজে চলাফেরা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। আর আমার হুইল চেয়ার আমার অভাবের সংসার চালানোর জন্য ব্যবহার করি। তবে হুইল চেয়ারে দোকান বানিয়ে ঢাকা শহর পাক দিলে কষ্ট তো হবেই।’
তেতো হাসি হেসে জলিল বলেন, ‘দুঃখ অভাবে যার জীবন গড়া তার আবার দুঃখ কিসের!’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top