সকল মেনু

দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের রড

বাংলাদেশ এখন রড তৈরিতে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু ভবন নির্মাণেই নয়, দেশে তৈরি এই রড ব্যবহার হচ্ছে উড়ালসড়ক থেকে শুরু করে পাওয়ার প্ল্যান্ট কিংবা বড় বড় সেতু নির্মাণের কাজেও। যেকোনো স্থাপনার মূল কাঠামোই তৈরি হয় রড দিয়ে। তাই এ ক্ষেত্রে রড ব্যবহারে ফাঁকি দিলে পরবর্তী সময়ে পস্তানো ছাড়া উপায় নেই—এমন কথাই বলছেন এই খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কোনো স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে খরচের কথা চিন্তা করে অনেকেই রড কম দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু নিরাপদ নির্মাণে ভালো রড ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ভালো রড ব্যবহার করলে নানান দুর্যোগেও স্থাপনার ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায় অনেকখানিই। আমাদের দেশের বাজারে বর্তমানে ৩ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ৪, ৫, ৮, ১০, ২০ ও ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের রড পাওয়া যায়। তবে ভবন তৈরিতে সাধারণত তিন ধরনের রডের ব্যবহারই বেশি দেখা যায়। পাইলিং, স্ল্যাব, বিম বা কলাম তৈরিতে একেক ধরনের রড ব্যবহার করা হয়। তবে যে রড কংক্রিটের সঙ্গে ভালো বন্ধন তৈরি করতে পারে, সেই রডকেই ভালো বলছেন এই খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাজারে ৪০, ৬০ ও ৭৫ গ্রেড এমনকি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ৮০ গ্রেড পর্যন্ত রড পাওয়া যায়। ৪০ গ্রেডের রড এখন খুব কমই ব্যবহৃত হয়। ভবন তৈরিতে সাধারণত ৬০ গ্রেডের রডই বেশি ব্যবহৃত হয়। ৭৫ গ্রেডের রড হচ্ছে এক্সটিম গ্রেড। বহুতল ভবন তৈরিতে এই গ্রেডের রডের ব্যবহার বেশি। আর ৮০ গ্রেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিশেষ বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে, যার মধ্যে অন্যতম হলো পাওয়ার প্ল্যান্ট।

বাংলাদেশে এখন বড় বড় ভবন, অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এসব অবকাঠামোর অধিকাংশ তৈরিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি রড ও স্টিল ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিচিত রড নির্মাতা হিসেবে সুনাম রয়েছে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম), রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের (আরএসআরএম)। এ ছাড়া জিপিএইচ ইস্পাত, আনোয়ার ইস্পাত, রহিম স্টিল মিলস, সীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান রড তৈরি করছে। এই শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে স্টিলের বার্ষিক চাহিদা ৩০ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে দেশে চার শর বেশি কারখানায় তৈরি হচ্ছে রড। এর মধ্যে ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রড তৈরি করে থাকে।

জিপিএইচ ইস্পাতের পরিচালক ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাছ শিমূল বলেন, ‘নিরাপদ নির্মাণের জন্য রড একটি অত্যাবশ্যকীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর তাই রড উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা অত্যাধুনিক এলআরএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি, ফলে উৎপাদনের সময় কাঁচামালে যদি কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় কিংবা খারাপ উপাদান থাকে, তাহলে তা সেখানেই বাদ পড়ে যায় এবং রডের গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। অনেক কোম্পানিই উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে না; কিন্তু ক্রেতাদের কাছে মানসম্পন্ন পণ্য তুলে দিতে আমরা সব সময়ই অঙ্গীকারবদ্ধ, আর তাই আমরা কখনোই আমাদের পণ্যের মান নিয়ে আপস করি না।’

বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এম ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশে রডশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শিল্প। এই খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগকারীরা আসছেন এবং প্রতিবছরই এই খাত আরও বড় হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘উন্নত মানের রড উৎপাদনের জন্য আমরা ভালো কাঁচামাল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি। সেই সঙ্গে আমাদের রয়েছে কঠোর মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার কোর, যাঁরা প্রতিনিয়ত আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও নিখুঁত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যার জন্য এযাবৎ বাংলাদেশের বড় বড় স্থাপনাগুলো যেমন পদ্মা সেতু, হাতিরঝিল প্রজেক্ট, মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের মতো বড় প্রজেক্টগুলোতে আমাদের রড ব্যবহৃত হচ্ছে।’

কেএসআরএমের হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট কর্নেল (অব.) মো. আশফাকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি নিরাপদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভালো রডের পাশাপাশি কংক্রিট, পাথর, বালু, সিমেন্ট সবকিছুই ভালো হতে হবে, কারণ সবগুলো উপাদান মিলেই একটি রি-ইনফোর্স ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে। তবে একটি নিরাপদ নির্মাণে রডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর তাই রড উৎপাদনের জন্য আমরা সব সময়ই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে থাকি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top