সকল মেনু

ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলা

unnamedএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: চলতি বর্ষা মৌসূমে ভোলায় ব্যাপক হারে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০ বছরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন এক লাখের বেশী মানুষ। ভাঙ্গন রোধে এলাকাবাসীর দাবীর মুখে পানি উন্নয়ন সামান্য কিছু কাজ করলেও কিছুতেই যেন ভাঙ্গন বন্ধ হচ্ছে না। এতে একের পর এক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সমগ্র উপকূল। দিন দিন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে দ্বীপজেলা ভোলা। গবেষণার মাধ্যমে দ্বীপজেলাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষার দাবী জানিয়েছে এ জেলার আতকিংত মানুষ।
সুত্র জানায়, ১২৩৫ সালের দিকে বঙ্গোসাগরের কোষ ঘেষে দ্বীপজেলা ভোলার জেলার জন্ম। সত্তর দশকে এ জেলায় ভাঙ্গন শুরু হলেও ৮০ দশকে এই ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, উজানের পানির তীব্রতা এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারনেই এ ভাঙ্গন বাড়ছে। গত ১৩ বছরে ১৭ কিলোমিটার বাধের কাজ হলেও এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৮২ কিলোমিটার। এরমধ্যে ডিভিশন-১ এর আওতায় ৩৮ ও ডিভিশন-২ এর আওতায় ৪৪ কিলোমিটার।
এতে ভোলা সদর, চরফ্যাশন, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন উপজেলার মানুষকে শংকিত করে তুলছে। যে কারণে ঘরভীটা হারিয়ে দুভোর্গে পড়ছেন বাস্তুহারা লাখো মানুষ।
ভাঙ্গন কবলিত ইলিশা ও রাজাপুরের রহিমা, কহিনুর, রাবেয়া, নিরুতাজ ও মমতাজ জানায়, নদীতে তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে, এ পর্যন্ত ৫/৬ বার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন তারা, এখন কারো অন্যের জমিতে কারো বা রাস্তার পাশে আশ্রয় মিলেছে।
ইলিশা-রাজাপুর ভোলা বাঁচাও কমিটির নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত বর্ষা থেকে এ পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ ঘরভীটা হারিয়েছেন। এছাড়াও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩টি গুচ্ছগ্রাম, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৫ কিলোমিটার সড়ক, একটি ফেরীঘাট, মসজিদ ও ৩টি মৎস্যঘাটসহ বহু স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এখন ইলিশা জংশন বাজার, একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রসহ স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা হুমকির মুখে, তাই আমরা ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে, ইলিশা-রাজাপুর, বোরহানউদ্দিন দৌলতখান ও শাহবাজপুরসহ ৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড চেষ্টা চালিয়ে গেলেও যেন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা এই ভাঙ্গন।
বসতভীটা, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ হাটবাজারসহ নানা স্থপনা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় এলাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে  আগামী কয়েক বছর পর এক ভয়ানক  অশনি সংকেত দেখা দিবে।
সুশিল সমাজের প্রতিনিধি দৈনিক দক্ষিণ প্রান্ত সম্পাদক এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহন করে কিছুতেই ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে না, ভাঙ্গন রোধ করতে নদী শাসন করে বড় বড় প্রকল্প গ্রহন করতে হবে।
ভোলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক অমিতাব অপু বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে ভাঙ্গছে, এতে ক্রমেই ভোলার আয়তন কমে যাচ্ছে। তাই নদীর ড্রেজিং করে ভাঙ্গন রোধ করতে হবে। অন্যথায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলা।
এদিকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একটি বৃহৎ প্রকল্প এনেছেন, যার কাজ ইতমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুরো কাজ সমাপ্ত হলেই ভাঙ্গন রোধে রক্ষা পাবেন ইলিশা ও রাজাপুরের মানুষ।
এ ব্যপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আকতার বলেন, ১শ’ ১৯ কিলোমিটার বাধের মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার বাধ এ মুহুর্তে ঝুকির মধ্যে রয়েছে, তবে এ পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এছাড়াও সুস্ক মৌসূমে ২শ’ ৫১ কোটি টাকার প্রকল্পর কাজ শুরু হবে। এদিকে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহনের মধ্যে দিয়ে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলাকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন ভোলার মানুষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top