সকল মেনু

চাঁদপুরে ছাত্রীর আত্নহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা : আলাউদ্দিন গ্রেফতার

unnamedশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুরের বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাত্র ২০ টাকা পরীক্ষার ফি কম দেয়ায় শিক্ষকের শাস্তির অপমান সইতে না পেরে  অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাথী আক্তার আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে চার শিক্ষককে  আসামি করে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন । মামলায় আসামি করা হয়েছে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন, সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর,সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন, অফিস সহকারী কাম সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমকে । এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুরের বাগড়া বাজার এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি সহকারি প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । একটি সূত্র জানায়, আজ ঘটনা সম্পর্কে জানতে শিক্ষা সচিব ওই বিদ্যালয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান সহ উর্ধতন কর্মকতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন । এসময় তারা সাথীর মা শায়লা বেগম ও বাবা দেলোয়ার শেখের সাথে কথা বলেন । এই ঘটনার পর আজ কিছুটা দেরীতে স্কুল খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম । অন্য দিকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২২ জন শিক্ষক কর্মচারির মধ্যে ৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন । পুলিশ জানিয়েছে,  মৃত সাথী আক্তারের লাশ ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাথীকে গতকালই সন্ধ্যায় তার পৈত্রিক পুরোনো বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর বালিথুবা ইউনিয়নের সেকদি গ্রামে সমাহিত করা হয়েছে।  গত সোমবার চাঁদপুরের বাগাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক শংকর ও শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমসহ শিক্ষক দেলোয়ার, শংকর ও জাহাঙ্গীর আত্মগোপনে রয়েছে।  ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে। গতকাল বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্কুলে পরীক্ষা থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়নি।  ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার শামসুনাহার বলেন, আমি ডিসি সাহেবসহ মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয় ও সাথী আক্তারের বাড়িতে যাই। সাথীর পরিবারকে শান্তনা দিয়ে আসি। তিনি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, সাথী  তার মার কাছ থেখে ৩শ’ টাকা টিউশন ফি চায়। তার মা তাকে ২শ’ টাকা দিয়ে অন্য বাড়ি থেকে ১শ’ টাকা ধার করতে যায়। এরই ফাঁকে মেয়েটি ঘরের মধ্যে আত্মহত্যা করে। কারণ আগের দিন তার স্কুল শিক্ষক টিউশন ফির পুরো টাকা না আনায় ভীষনভাবে অপমান করে। এব্যাপারে মামলা হয়েছে এবং তদন্তকাজ চলমান। আসামীরা পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর বাবা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আমার ৩টি মেয়ে, আমি দিন মজুর হয়েও মেয়েকে স্কুলে পাঠাইতাম। সাথী আমার ছোট মাইয়া বড় আদরের। স্কুলের ফির জন্য সাথী আমার কাছে টাকা চায়। আমি পুরা টাকা দিতে পারি নাই। স্কুলে গেলে ফাতেমা মেডাম সাথীকে ক্লাশ থেকে বাইর কইরা দিয়া পুরা টাকা নিয়া স্কুলে যাইতে বলে। এজন্য তাকে ক্লাশের বাইরে দাড়া করাই রাহে ও বিভিন্ন ভাষায় বকাবকি করে। ২০টাকা কমের লিগা মেডাম তারে অপমান করে। মাইয়া আমারা স্কুলের অপমান সহ্য করতে না পাইরা নিজে নিজেরে মাইরা লাইলো। আমি সরকারের কাছে আমার মাইয়রা মৃত্যুর জন্য দায়ী শিক্ষকের বিচার চাই। এ ব্যাপারে এলাকবাসী মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদ মিয়া, সাইফুল ইসলাম, নাজির শেখ, মোস্থাফিজ, আনোয়ারা বেগম, খাদিজা আক্তারসহ আরো কয়েকজন জানান, এই পরিবারটা নানার বাড়িতে থাকে, তাদেরর কোন বসত ভিটা না থাকায়। স্কুলের অনেক শিক্ষকই ছাত্র/ছাত্রীদের বিভিন্ন সময় পরীক্ষার ফিস, টিউশনের টাকার জন্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ও অপমান করে। বিশেষ করে এলাকার মেম্বার এছহাকের আত্মীয় দেলোয়ার মাস্টার। এছাড়াও শিক্ষক শংকর ও  কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা জাহাঙ্গীর। আমরা ঘটনার বিচার দাবি করছি। এর বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরো ছাত্র/ছাত্রী সাথীর মতো কাজ করে বসতে পারে। আত্মহত্যার শিকার সাথী আক্তারের পিতা হতদরিদ্র দেলোয়ার হোসেন তালুকদার চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে একটি তেলের আড়ৎ ঘরে শ্রমিকের কাজ করে।
জানা যায়, চাঁদপুর বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাত্র ২০ টাকার জন্য শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে সাথী অক্তার (১৬) নামের ৮ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার  চাঁদপুর সদরের বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় শেখ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিলসহ অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
স্কুলছাত্রী সাথীর মা চায়না বেগম ও এলাকাবাসী জানায় বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সে। স্কুলের অফিস সহকারী ফাতেমা বেগম ও সহকারী শিক্ষক শংকর তারা দু’জন জেএসসির মডেল টেস্ট পরীক্ষার ফি বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছে ২শ ৮০ টাকা করে নেন। রোববার (২৮ আগস্ট) সাথী আক্তার স্কুলে গেলে শিক্ষক ফাতেমা বেগমের কাছে ২শ ৬০ টাকা দিলে ২০ টাকা কম দেয়ায় তাকে এবং অন্যান্য যারা কম টাকা দিয়েছে তাদের সবাইকে বিদ্যালয়ের বাহিরে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে কান ধরে উঠবস করায়। পরেদিন সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে সাথী আক্তার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরে সে বাড়িতে গিয়ে টাকার জন্য মায়ের সাথে কান্নাকাটি করে।
তার মা চায়না বেগম টাকা যোগাড় করতে বাইরে অন্য বাড়িতে গেলে এ সুযোগে সাথী শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে রাগে ক্ষোভে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসি উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়। পরে বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি, সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং তাকে দেখে এসেছি। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা অবস্থায়ই বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ভাংচুর শুরু হওয়ায় তিনি পুরোপুরি বক্তব্য দিতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগম ও শংকরের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তার আগেই জনতার মারমুখী অবস্থান দেখে গা ঢাকা দেন।
এদিকে এলাকাবাসী ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরে বলেন এর আগেও এ স্কুলের শিক্ষকদের এমন নিষ্ঠুর আচরণের কারণে আরো ক’জন ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে এবং বিষ পানে আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটেছে।
আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে যদি কোন শিক্ষার্থী প্রাইভেট কিংবা কোচিং না পড়ে তাহলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়। এরকম আরো অনেক অনিয়মসহ লাখ টাকার বাণিজ্যের কথা ক্ষোভের সাথে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। বাণিজ্যের পেছনে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটিকে দায়ী করে বিক্ষুব্দরা বক্তব্য প্রদান করেন। আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তাই এমন ঘটনার জন্য বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি অভিযুক্ত স্কুল এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লা অলি ও সেকেন্ড অফিসার মনিরুল ইসলামসহ একটি টিম সেখানে পৌঁছান। স্থানীয়দেরকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top