সকল মেনু

মীর কাশেম’র এখন শুধু বাকী প্রাণ ভিক্ষা

4470_69477শাহজাহান ফিরোজ তুহিন: সর্বোচ্চ সাজার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে জামায়াতের অর্থযোগানদাতা হিসাবে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষ হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করে।

কাসেম হলেন ষষ্ঠ যুদ্ধাপরাধী, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের পর্যায়ে এসেছে। এর আগে জামায়াতের কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের দণ্ড কার্যকর করে সরকার।

তাদের রায় বাস্তবায়নের আগে পালিত প্রক্রিয়াগুলো মীর কাসেমের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত হিসাবে থাকছে।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে দণ্ডাদেশ পাওয়া সব আসামিই শেষ সুযোগ হিসেবে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে। একাত্তরের হত্যাকারী মীর কাসেমকেও সে সুযোগ দেওয়া হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, রিভিউ খারিজের রায়ে বিচারকদের স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশ করেবে সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হবে।

রিভিউ রায়ের তিনটি প্রত্যায়িত অনুলিপি সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো হবে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেগুলো ট্রাইব্যুনাল, কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুই পক্ষের আইনজীবীকেও অনুলিপি পাঠানো হবে।

ট্রাইব্যুনাল ওই রায় পাওয়ার পর সেই আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবে। আদেশে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সই নিয়ে রায়ের কপিসহ পাঠানো হবে কারা কতৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে।

এরপর কারা কর্তৃপক্ষ আসামি কাসেমকে রিভিউ খারিজের রায় ও আদেশ পড়ে শুনিয়ে জানতে চাইবে- তিনি প্রাণভিক্ষা চান কি না।

দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনি (কাসেম) যদি মনে করেন প্রাণভিক্ষা চাইবেন, তার দরখাস্ত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রাষ্ট্রপতি যদি প্রাণভিক্ষা দেন সেটা আলাদা কথা। আর যদি না দেন তাহলে দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকর করা যাবে।

এই দণ্ড কার্যকরের এখতিয়ার সম্পূর্ণ সরকারের। তবে তার আগে স্বজনেরা কারাগারে গিয়ে কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদনের নিষ্পত্তি না হলে ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না।

রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই দণ্ড কর্যকরের এই প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান মাহবুবে আলম।

চিকিৎসার জন্য বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশে ফিরবেন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে মীর কাসেম ক্ষমার আবেদন করলে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি-না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রপতি যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে এটা অবহিত করা যায়। সেটাতে কোনো অসুবিধা নাই।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে।

আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই দিনে, গতবছর ২১ নভেম্বর। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আর সর্বশেষ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় গত ১১ মে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছিল, প্রাণভিক্ষার জন্য কারাবিধিতে বেঁধে দেওয়া ৭ থেকে ২১ দিনের সময়সীমা যুদ্ধাপরাধ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আসামি প্রাণভিক্ষা চাইলে তার নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

কিন্তু আসামি প্রাণভিক্ষার জন্য কত সময় পাবেন এবং কতদিনের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া না থাকায় অস্পষ্টতা কাটেনি।

কামারুজ্জামান এবং তারপর সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার সুযোগ নেবেন কি না- তা জানাতে আসামি যৌক্তিক সময় পাবেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, একটি মার্সি পিটিশন লিখতে যে সময় লাগে এক্ষেত্রে সেটাই যৌক্তিক সময় বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top