সকল মেনু

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী

hasina-14হটনিউজ২৪বিডি.কম : রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দেশের উন্নয়নবিরোধী একটি মহল অপপ্রচার করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ শনিবার বিকেল ৪টায় রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আছে তা প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর। অদূর ভবিষ্যতে গ্যাসের সঙ্কট হবে। এ জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দেশের উন্নয়নবিরোধী একটি মহল বেশ কিছু দিন যাবৎ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য এবং তথ্য দিয়ে এ প্রকল্প সম্পর্কে মানুষের মনে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব এবং ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে।’

‘আমি আপনাদের সামনে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিচ্ছি, বাস্তবায়নাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন জনবহুল এবং বনাঞ্চলের পাশে স্থাপিত বিদ্যুতকেন্দ্রের ছবি দেখান।

প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে, আমি সেগুলো করবোই।’

‘আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোনো কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না- যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে।’

রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশেষে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এতদিন অন্তরালে থেকে ইন্ধন জোগালেও ওই দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্স করে এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে সামিল হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে বিএনপির এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে যোগ দেওয়ার পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতেন।’

হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা নিয়ে ফায়দা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকে উসকে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে কয়লা এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি।

আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।’

এই এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের বিপরীত দিকে- এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থও যদি নিঃসরণ হয়, তবে তা সুন্দরবনের দিকে নয়, উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে।’

রামপাল নিয়ে খালেদা জিয়া তার পুরো বক্তব্যে ‘উদ্ভট, বানোয়াট এবং অসত্য’ উপাত্ত পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করবে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কথা মোটেই সত্য নয়। বরং এটি নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন আর হবে না। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে। লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।’

ভারতে বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আইনি বাধা রয়েছে খালেদার এই তথ্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বিশাল আয়তনের দেশ। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের সঙ্গে তুলনা সঠিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তারপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top