সকল মেনু

নৌশ্রমিক ধর্মঘটে নদীবন্দর অচল

নৌশ্রমিক ধর্মঘটে নদীবন্দর অচল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রমিকদের বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের নৌ-ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান প্রধান নদী বন্দরগুলো। এতে বিপদে পড়েছেন যাত্রীরা। পণ্য পরিবহন নিয়ে সঙ্কটে আছেন ব্যবসায়ীরাও। মঙ্গলবার দিনের প্রথম প্রহর থেকে বেতন ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা প্রদান দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে দূরপাল্লার নৌ-শ্রমিকরা এই ধর্মঘট পালন করছেন। তবে ধর্মঘটের মধ্যেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সদরঘাট নদী বন্দর থেকে ১৫টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এদিকে মঙ্গলবার বিআইডব্লিউটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আগামী এক অথবা দুই সেপ্টেম্বর থেকে ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে এক সেপ্টেম্বরের বৈঠক থেকে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাহ্ আলম ভূঁইয়া বলেন, নৌ-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে চার দফা দাবিতে ডাকা ধর্মঘট সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে সারাদেশে শুরু হয়েছে।

ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বেতন স্কেল ঘোষণা, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনঃনির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাস-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নাব্য রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের খবর না জানার কারণে বন্দরে এসে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে যাত্রীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্মসূচীতে ১৭টি নৌযান শ্রমিক সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে বলে জানান শ্রমিকনেতা শাহ্ আলম।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা গত জানুয়ারিতে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নৌযান শ্রমিকদের মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করার ঘোষণা দেয়া হয়।

গত ২০ এপ্রিল শ্রমিকরা সারাদেশে ধর্মঘট শুরু করলে ছয় দিন পর ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

তেলবাহী নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ায় তারা আন্দোলনে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য সব নৌ-শ্রমিক চার দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম বলছেন, মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের। আমরা নৌমন্ত্রীর নির্ধারিত মজুরি দিতে পারব না বলে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এতে নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেলে তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই।

এদিকে ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট চললেও সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ ছেড়ে যায়। বিকেলে সদরঘাট লঞ্চটার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এক এক করে ১৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ এবং ৭ সোনারতরী-২, এমভি আবে জমজমসহ আরও বেশ কয়েকটি। ঘাট সূত্রে জানা যায়, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে ধর্মঘট চললেও মালিকপক্ষ এবং এ নৌ শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ সমঝোতার ভিত্তিতে সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এ ধর্মঘট পালনে বাধ্য করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর সদরঘাট টার্মিনালের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী জনকণ্ঠ’কে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দফতরের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঈদ সামনে আসায় লঞ্চ মালিকরা শ্রমিক ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা লঞ্চ চালাতে আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু শ্রমিক নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাদের দাবি আদায় না হলে কাজে ফিরবে না।

তিনি জানান, ধর্মঘটের কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে সদরঘাট থেকে ৩৫টির মধ্যে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ৭০টির মধ্যে ৩৭টি লঞ্চ ঘাটে আসার কথা জানান তিনি। আগামী এক সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএ মিলনায়তনে ফের ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তারিখ চূড়ান্ত হবে।

সচিবালয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ধর্মঘটের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। নৌপরিবহন শ্রমিকরা কোন নোটিস দিয়ে ধর্মঘট ডাকেনি। তারা বলছেন কর্মবিরতি। ধর্মঘট হলে তো নোটিস দেয়ার কথা। আমাদের কাছে কোন নোটিস নেই। তিনি বলেন, সমস্যা শুধু মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। মজুরি নির্ধারণ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। তিনি বুধবার ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। শ্রম পরিদফতর মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা করবে। সেখানে সমঝোতা না হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে’ বলেন শাজাহান খান।

বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ ॥ চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ নৌ শ্রমিক পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার ঘোষিত মজুরি মালিকরা সংঘবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করছে না। ফলে শ্রমিকদের ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নৌযান শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখায় বহির্নোঙ্গরে সাধারণ পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের লাইটারিং কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা কাজ করছে।

এদিকে, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, আমি শুনেছি এটা কর্মবিরতি। কারণ ধর্মঘট হলে নোটিস দেয়াসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। আমি আশা করি অতি দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুব আলম জানিয়েছেন, ধর্মঘটের কারণে পণ্য খালাস না হওয়ায় সমস্যা বাড়বে, পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। সঙ্গতকারণে বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top