সকল মেনু

‘মনে অইছিল ওরসে আবার জঙ্গি হামলা’

বার্ষিক ওরস উপলক্ষে হাজারো ভক্তের আনাগোনায় মুখরিত হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ভক্তরা মাজারে গিলাব ছড়াতে আসেন। ছবিটি সকাল ১০টার দিকে তোলা: আনিস মাহমুদ

‘কী আর বলব ভাই, আমরা ভাবছিলাম জঙ্গি, মনে অইছিল ওরসে আবার জঙ্গি হামলা, ওদের ধরার পরে দেখা গেল জঙ্গি না!’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ককাতে ককাতে কথাগুলো বলছিলেন আহত এক কনস্টেবল।

শুধু তিনি নন, তাঁর মতো এমন শারীরিক ক্ষত নিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রি খাতায় তাঁদের নাম লেখা এসআই শাহীন, এএসআই আজিজ, ফরহাদ, কনস্টেবল মুসলেম, আলফাজ ও ফয়জুল।

সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে গতকাল সোমবার রাত থেকে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ওরস। সেখানে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দরগাহর প্রধান ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ সময় পুলিশ-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতা-কর্মীকে আটক করে।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ছয় পুলিশ সদস্যের একজনের ইউনিফর্ম ছেঁড়া। বুকে-পিঠে নখের ক্ষত। জানান, হামলাকারী একজনকে ধরতে গিয়ে তাঁর এ অবস্থা।

হাসপাতালে ভর্তি ছয় পুলিশের চিকিৎসা তদারক করছিলেন সিলেট কোতোয়ালি থানার লামাবাজার ফাঁড়ি ইনচার্জ বেনু দেব। তিনি জানান, হামলার আকস্মিকতায় জঙ্গি হামলা বলে প্রথম দিকে মনে করা হচ্ছিল। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ছাড়াও ২০০৪ সালে মাজারে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন ধারণা ছিল পুলিশের। ২০০৪ সালে মাজারে ওরসের প্রথম রাতেই হামলা হয়েছিল। এতে পাঁচজন মাজারভক্ত ঘটনাস্থলে নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছিলেন।

রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। সাধারণ লোকজন এতে আশ্বস্ত বোধ করছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশসহ সাতজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে জঙ্গি হামলা বলে ধারণা করছিলেন। তবে খুব দ্রুত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় ওরসে আতঙ্ক ছড়ায়নি।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের একজন বাউলশিল্পী বলেন, পুলিশ ছাড়াও অন্তত ১০ জন দর্শনার্থী আহত হয়েছেন।

মাজারের পাশের রাজারগলি আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘দর্শনদেউড়ি গ্রুপ’-এর মাধ্যমে নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পর দেখা গেছে, পাশের হাউজিং এস্টেট এলাকায় ওই নেতার অনুসারীরা ককটেল ছুড়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগোচ্ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, মহানগর পুলিশ (এসএমপি) দরগাহর প্রবেশমুখসহ চারদিকে চারটি নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করে। আম্বরখানা রোড দিয়ে মাজারে প্রবেশের মূল ফটকের কাছে নিরাপত্তাচৌকি দিয়ে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে ঐতিহ্যবাহী গিলাফ ছাড়ানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে ওরসের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জানান, বুধবার ভোররাতে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ওরস। দরগাহের মূল ফটকসহ সাতটি স্থানে পুলিশের অস্থায়ী নিরাপত্তাচৌকি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top