সকল মেনু

অসহ্য এক যন্ত্রনা: ২১ আগস্ট আহত হেনা,শাহনাজ ,লায়লার জীবন

4053_feরাকিবুল ইসলাম রাকিব,হটনিউজ২৪বিডি.কম: ঘুম আসে না,সারারাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে রাত কাটে। অসহ্য এক যন্ত্রনা,-শরীর চুলকায়,ক’দিন পরপর পা ফুলে যায় .মাথা ঝিমঝিম করে। কিডনীতে ইনফেকশন শুরু করেছে।ডাক্তার বলছে এটা ভেতরে স্প্রিন্টিারের প্রভাব। মাসে কম করে হলেও আট থেকে দশ হাজার টাকার  ঔষুধ লাগে। এখন হাসপাতাল আর বাসা এটাই আমাদের নিয়তি হয়ে দাড়িঁয়েছে। এটা তো গেল শরীরের কথা। জীবন আরো কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। আয় রোজগার নেই,ছেলে মেয়েরা বেকার। বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়,খাবারই জোটে না তারপর প্রতিমাসে ঔষুধ। কোথায় টাকা পাবো। পরিবারের লোকেরা বলে,মহল্লার লোকেরা খোটা দেয় তোমাদের দল ক্ষমতায় এখন অভাব কেন? তাদের কোন জবাব দিতে পারি না। আসলে এ মহল্লায় আমরা সব গরীবরাই শেখ হাসিনার ভক্ত। তবে দুখের কথাও আছে শেখ হাসিনা বাদে অন্যকোন নেতা আমাদের খবরও নেয় না। সব সময় তো আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা যায় না, এই শহরে বহু সরকারী জায়গা আছে,সেখানে যদি আমাদের মাথা গোজার ঠাই পেতাম,কিন্ত কথাগুলো কাকে বলবো। কোন নেতাদের আমাদের সাথে কথা বলার সময় নেই। ছেলে মেয়েদের যদি একটি সুইপারের চাকুরীও দিতো কেউ তা হলেও একটু বাচঁতাম। কথা গুলো বলছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হাজারীবাগের মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মীরা। গতকাল দুপুরে হাজারীবাগের এনায়েতগঞ্জ লেনে তাদের ভাড়ার বাসায় বসে কথা হয় হেনা ,শাহনাজ ও লায়লা বেগমের সঙ্গে। এক কক্ষের ছোট্ট খুপরির মত ঘরে পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস তাদের। আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় গিয়েছিলেন তারা। সেদিন হাজারীবাগ থেকে গিয়েছিলেন ২০ জন নারী কর্মী। তাদের মধ্যে গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হন রিজিয়া ও রেজিয়া নামের দুই জন। বাকী ১৮ জনই আহত হন গ্রেনেডের স্প্রিন্টিারে। এখনও তারা শরীরে বহন করে চলেছে স্প্রিন্টিার।
২১ আস্টের সেই ভয়াল স্মুতি হাতড়িয়ে হেনা বেগম জানান, সেদিন প্রচন্ড গরম ছিলো । বেলা ২টার দিকে আমরা হাজারীবাগের নেত্রী আয়েশা মোকাররমের নেতৃত্বে এলাকা থেকে রওনা করি। আমরা ছিলাম ২০জন। জনসভা শুরুর বেশ আগেই আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পৌছাই। তখনও নেত্রী আসেনি। রোদের মধ্যে আমরা দাড়িঁয়ে থাকি। খোলা ট্রাকে মঞ্চ করা হয়েছিলো। নেত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার আগে আইভি আপা পেছনে দাড়িঁেয়ছিলেন। নেত্রীর বক্তব্যর মাঝামাঝি সময়ে আইভি রহমান পেছন থেকে সামনে আসলেন,আমাকে বললেন,হেনা আমাকে একটু জায়গা দাও। তিনি পেছন থেকে সামনে আসার সময়ে বললেন,তোমরাও যেও না মিছিল হবে। এর খানিক্ষন পর নেত্রী কেবল জয়বাংলা বলে ট্রাক থেকে নামার জন্য পা বাড়িয়েছেন তখনই বিকট শব্দ। চারদিক ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। কেবল মানুষের চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ। রাস্তায় পড়ে গেলাম। উঠতে গিয়েছি দেখি পা আর উঠে না। পা দু’টি যেন লোহার মত ওজন হয়ে গেছে। তাকিয়ে দেখিয়ে রক্ত ঝরছে। কেউ একজন আমাকে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসের ভেতরে নিয়ে গেল। সেখানে নিজের রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে দেখি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লোরে শোয়া। আমার ভগ্নিপতি গিয়ে স্যালাইন কিনে আনলে নার্স শরীরে স্যালাইন দিলো  এটা পরদিনের ঘটনা।
হেনা বেগম এখন হাজারীবাগ ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদিকা। জানালেন বড় কস্টে চলছে জীবন। স্বামী মারা গেছে আরো বেশ কয়েক বছর আগে। ছেলেটা কলেজে পড়ে,মেয়ে স্কুলে। আট হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকে। বাড়ি বাড়ি ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে জীবন চালান ,তাও হাটতে পারেন না, শরীরের ভেতরে থাকা স্প্রিন্টারের কারনে। প্রতিমাসে দশ হাজার টাকার ঔষুধ লাগে। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন থেকে চিকিৎসাবাবদ পান মাসে দুই হাজার টাকা। ঈদের সময় পান দশ হাজার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হেনা বেগমের আর্তি কামরাঙ্গীর চরে কত খালি জায়গা আছে সেখানে যদি তাদের একটু মাথা গোজার ঠাই দিতো সরকার । অভিযোগ আছে নেতাদের প্রতি,জানালেন এক শেখ হাসিনা বাদে কেউ খবর নেয় না। এর মাঝে স্টোক করে হাসপাতালে ছিলেন,ছেলে মেয়েরা স্থানীয় এমপির কাছে গিয়ে দেখাটা পর্যন্ত পাননি।
শাহনাজ বেগম হাজারীবাগ ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২১ আগস্টের ক্ষত নিয়ে বেচেঁ আছেন। দুচোখে জল মুছে বললেন,কি আর বলবো দুখের কথা। ১২টা বছর রাতে ঘুমাতে পারি না। কি যে যন্ত্রনা। শরীরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে গ্রেনেডের স্প্রিন্টিার ঢুকেছে কিডনীর ভেতরে। সে কারনে কিডনী দু’টি নষ্ট হয়ে গেছে। শরীর ফুলে যায়। মাসে দশ থেকে বার হাজার টাকার ঔষুধ লাগে । নেত্রীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা পাই মাসে। ছেলেরা বেকার। মাঝে মধ্যে ভাবি কেউ যদি ছেলেদের একটা সুপারের চাকুরীও দিতো তাও বেচে যেতাম। তাও পাই না। মেয়র আমাদের দলের,কোন খবরও নেয় না। শাহনাজ বেগম জানালেন, আহত হওয়ার পর তিনদিন তার খবর পায়নি পরিবার। ঢাকা মেডিকেলে জায়গা ছিলো না,আমি ছিলাম হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারও আকুল আবেদন একটু মাথা গোজার ঠাই। বড় বেদনার সঙ্গে বললেন, ছেলের চাকুরীর জন্য এমপির কাছে গিয়েছিলাম একটি সুপারিশের জন্য,তাও পাইনি।
লায়লা বেগম এখন জীবন সায়াহ্নে ,বর্তমানে হাজারীবাগ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বললেন, আমাদের জীবন এখন বাড়ি আর হাসপাতাল। তবুও শেখ হাসিনার নাম শুনলে মনটা কেমন করে উঠে,মিছিলে যাই। নির্বাচন আসলে পাচঁতলা,সাততলা সিড়ি বেয়ে ভোট চাইতে যাই,চিন্তা করি আমার নেত্রী ক্ষমতায় আসলে ভালো থাকবো। অন্যদের মত স্প্রিন্টিারের ক্ষত তার শরীরেও। একই যন্ত্রনা। নির্ঘুম রাত। বেশীর ভাগ সময় ঔষুধ কেনার টাকা থাকে না। ঠিকমত বাসা ভাড়া দিতে পারেন না। হার্টে অসুখ ধরা পড়েছে। চিকিৎসার টাকা নেই। তারও কথা ছেলের জন্য একটা সুইপারের চাকুরী পেলেও বেচেঁ যেতাম। লায়লা বেগম জানালেন,সেদিন আমাদের মত আরো আহত হয়েছিলেন, তাদের মহল্লার রানী বেগম,মেহের বানু,বেলী আখতার,আয়েশা বেগম,মনি আখতার,জরিনা বেগমসহ আরো কয়েকজন,তাদেরও জীবন চলছে একই যন্ত্রনায়। লায়লা বেগমেরও আর্তি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী একটু মাথা গোজার ঠাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top