সকল মেনু

সেই ভয়াল ২১ আগস্ট আজ

21-august_28758হটনিউজ২৪বিডি.কম : আজ রবিবার, সেই ভয়াল ২১ আগস্ট। উপমহাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১২তম বার্ষিকী আজ। জাতি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা দিবস পালন করবে। ১২ বছর আগের এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এ ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও অপর ২৪ জন নিহত হন। ২০০৪ সালের এই দিন বিকেলে পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশে একটি ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এ ভয়াবহতম হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান এবং আরও ২৩ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। এছাড়াও এ হামলায় আরো অন্তত ৪০০জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূণ্য করতে এ হামলা করা হয়েছিল বলে পরবর্তি সময়ে অভিযোগ করেছিলেন দলটির নেতৃবৃন্দ।

এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলপক্ষে আজ বিকেল ৪ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, সংসদ সদস্য, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসময় উপস্থিত থাকবেন। এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অনুরূপ কর্মসুচিতে যোগদান করবেন। পরে একই স্থানে শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আহতদের সাথে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃংখলা, ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঢাকার তৎকালিন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে এক মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে তাকে গ্রেনেড ও গুলির আঘাত থেকে রক্ষা করেন। এদিকে শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

হীমশীতল মৃত্যুর স্পর্শ থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে এখনও বিশ্বাসই করতে পারেন না আসলে তারা জীবিত আছেন কি-না। মৃত্যুর এতো কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়তো তারা নতুন জীবন পেয়েছেনÑ কিন্তু যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন ততদিন তাদের বহন করে যেতে হবে সে দুঃস্বপ্নের মত তাড়িয়ে বেড়ানো স্মৃতিকে, হঠাৎ করে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার সে ঘটনাকে। এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় দলের নিহত নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিলেন- আইভি রহমান, ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।

মারাত্মকভাবে আহত হলেন যারা তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

অভিযোগ রয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এ হত্যাকান্ডের প্রতিকারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয় এ হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত ৫টি গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল। হামলার পর তৎকালিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

অতপর সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুকুল পরিস্থিতিতে সরকার এ হামলার পুনারায় তদন্তের নির্দেশ দিলে এবং সাড়ে ৩ বছর পর বিলম্বিত পুলিশ চার্জ শিট নথিভুক্ত করা হয়। অথচ বিএনপির কতিপয় সংসদ সদস্য এ জঘন্য হামলাকে আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছিলেন। পুনরায় তদন্তে পুলিশ এ হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে চিহ্নিত করে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু হয়। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান কারাগারে রয়েছে।

এছাড়া পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক ৩ তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডির সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছে। আর পলাতকদের মধ্যে তারেক রহমান রয়েছে লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতা, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।

জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপির তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে। তবে সাবেক অভিযুক্ত হারিছ চৌধুরীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পলাকতকদের মধ্যে মওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু আটক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।

অবশ্য কয়েকটি বিদেশী মিশন যেমন ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, ইউএস ফেডারেল ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশী তদন্তকারীদের যোগ দিলেও এসব প্রতিষ্ঠান বিএনপি সরকার তাদের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেছিল।

মামলার সাথে সম্পৃক্ত সরকারি কৌসুলি এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে। জাতি দীর্ঘ প্রত্যাশিত এ মামলার রায় আগামী ৩ মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, ‘দুইজন তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরা সম্পন্ন হলেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেয়া হবে এবং এজন্য প্রয়োজন দুই থেকে ৩ মাস। ৪৯১ জনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ২২৪ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top