সকল মেনু

দূরে নয় উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন

  • ’১৮ সালেই পদ্মা সেতুতে চলবে যানবাহন
  • বিকাশ ঘটবে উৎপাদনমুখী শিল্পের
  • ’৪১ সালেই মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ডলার
  • ঘটবে দারিদ্র্যবিমোচন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান

1471651332_Lid

এম শাহজাহান ॥ উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে নেয়া ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ খ্যাত ১০ মেগা প্রকল্পের কাজের গতি পাচ্ছে। এর মধ্যে সোনাদিয়া গভীর বন্দর ছাড়া বাকি নয় প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। ইতোমধ্যে এ সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩২ শতাংশ এবং প্রায় ২৪ ভাগ মূল সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। যানজট মুক্ত নগরী গড়তে নেয়া হয়েছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করা হবে। তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির ৩৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৮০ শতাংশ ভৌত অবকাঠামো অগ্রগতি হয়েছে।

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষের পর শুরু হয়েছে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ। একমাত্র সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলো আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে কিংবা এরও আগে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থসংস্থানের পাশাপাশি আরও নতুন নতুন প্রকল্প এই মেগা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে নৌপথ রক্ষায় ড্রেজিং ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে এনে নদীমাতৃক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এটি শুধু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যই গতিশীল করবে না বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশের পর এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন পূরণে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী দশটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদনমুখী শিল্পের দ্রুত বিকাশ হবে। ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার মার্কিন ডলার। ওই সময় মানুষ পাবে উন্নত জীবন। দেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আর তাই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।

শুধু তাই নয়, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থসংস্থানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি বাজেটে ১৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর এই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নিজস্ব অর্থায়নের যোগানে যাতে কোন সমস্যা না হয়, সেজন্য ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ গঠন করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এই ফান্ড মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়ার প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশী ডলার আসবে বাংলাদেশে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সরকার বাজেটের আওতায় প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল সম্পদ বিনিয়োগের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। এছাড়া মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মোট দশটি প্রকল্পকে জনগুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প মনিটরিং’ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক অবকাঠামো রূপান্তরের জন্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন। আর বাস্তবায়নের কৌশল হচ্ছে- এগুলোকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। এ উদ্যোগের সাফল্যের জন্য প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু ॥ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে সম্পাদিত প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু নির্মাণ কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া অবস্থানে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। এই সেতু করার মূল উদ্দেশ্য হলো-রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করা।

এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১৩ দিন পর ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভায় পদ্মা সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাওনসেল ইকোম নিয়োগ দেয় সরকার। ২০০৯ এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩২ শতাংশ, মূল সেতু নির্মাণ হয়েছে ২৩ দশমিক ৯২ ভাগ, নদী শাসন ১৮ দশমিক ২৭, জাজিরা সংযোগ সড়ক ৬৩ দশমিক ৪৮, মাওয়া সংযোগ সড়ক ৭৪ দশমিক ৪৪ এবং সার্ভিস এ্যারিয়া ৭৯ দশমিক ১৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল এ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে। বহুমুখী এ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।

আগামী ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু যানবাহন পারাপারের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মধ্যম আয়ের পর এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। আগামী ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ডলার। এটা বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে জোর দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থায়ন কোন সমস্যা নয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিন্যান্সিয়াল লাইনআপ করা আছে। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে আগামী মাসে সভরেন ওয়েলথ ফান্ড অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। এসব প্রকল্পের পাশাপাশি আগামীতে নৌপথ রক্ষায় ড্রেজিংয়ে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সারাবছর যাতে নৌপথ সচল থাকে সে লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মানসম্মত ভৌত অবকাঠামোর উপস্থিতি কেবলমাত্র বিনিয়োগ বৃদ্ধিই করে না বরং অর্থনীতির সকল কর্মকা-কে সচল করে গণমানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এ কারণে পরিবহন বিশেষত যোগাযোগ (সড়ক, রেল, নৌপথ) এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের সামগ্রিক উন্নতি প্রয়োজন। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে।

এদিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলা রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।

এই সেতুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নদী শাসন। এই কাজে ৩০ মিটার গভীর পর্যন্ত নদী ড্রেজিং করার জন্য সম্পূর্ণ অটোমেটিক ও অত্যাধুনিক ড্রেজার আনয়ন করা হয়েছে এবং নদী শাসন কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন করা হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জসমূহ ॥ পদ্মা নদীর গভীরে রয়েছে অতি ঘন চিকন বালি। এই প্রকার বালিতে পাইলের কাজ অত্যন্ত কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যথা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞগণ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছেন।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ॥ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা হতে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ উন্নয়ন করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং এতে নিজস্ব খাত (জিওবি) থেকে ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া চীনা সরকারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতির অর্থায়নে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক দিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও সমীক্ষা ও বিস্তারিত ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য মোট দৈর্ঘ্যকে চারটি সেকশনে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সেকশন- ১, ঢাকা-গে-ারিয়া, সেকশন-২, গে-ারিয়া-মাওয়া, সেকশন-৩, মাওয়া-ভাঙ্গা জংশন-ভাঙ্গা, সেকশন-৪, ভাঙ্গা জংশন-যশোর। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন (ডে-ওয়ান) হতে মাওয়া ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ভাঙ্গা স্টেশন হতে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ সেকশনের কাজ আগামী আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাওয়া-ভাঙ্গা রেললাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-ফরিদপুর-পাঁচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। প্রকল্পের অন্য তিনটি সেকশনের নির্মাণ কাজ আগামী সাড়ে চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় ১০০ ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৭০০ একর প্রাইভেট ভূূমি অধিগ্রহণ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২০০ দশমিক ৪৮ একর এবং সেতু কর্তৃপক্ষের ৬৮ একর ভূমি স্থানান্তর।

প্রকল্পটির চ্যালেঞ্জ ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাজের সমন্বয় করা। বছরভিত্তিক প্রয়োজনীয় জিওবি অর্থায়ন, বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ। যথাসময়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং সড়ক ও জনপথ এবং সেতু কর্তৃপক্ষ হতে দ্রুত জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারকে সাইট এক্সেস প্রদান এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন হতে ভাঙ্গা-মাওয়া অংশে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু করা।

দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ ॥ দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার অর্থাৎ মোট প্রায় ১৩০ কিলোমিটার নতুন সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে গত ২০১০ সালের জুন মাসে এবং আগামী ২০২২ সালের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজস্ব (জিওবি) ৪ হাজার ৯১৯ দশমিক ৭ কোটি টাকা এবং এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পের সাহায্যের পরিমাণ ১৩ হাজার ১১৫ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ৩১৩ দশমিক ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিপরীতে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ ভাগ। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৬১৩ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভবিষ্যত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। এতে আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রুট (চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে বিদ্যমান রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া পর্যটন শহর কক্সবাজার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ॥ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং সড়ক ও জনপথ বন বিভাগ হতে দ্রুত জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারকে নির্মাণস্থল প্রদানের ব্যবস্থা করা। দ্রুত পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং রিসেটেলমেন্ট কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করা। এছাড়া বছরভিত্তিক প্রয়োজনীয় জিওবি অর্থায়ন বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ নিশ্চিত করা।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) ॥ ঢাকা শহরের বিদ্যমান যানজট নিরসন, নিরাপদ কার্যকরী দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা চালু এবং গণপরিবহন সুবিধা নিশ্চিতকরণে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মেট্রোরেল তথা এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১২ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। দ্রুত প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মোট আটটি কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। যেসকল এলাকা হয়ে রুটটি সম্পন্ন হবে তা হলো উত্তরা তৃতীয় পর্ব-মিরপুর-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি- দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড-বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ডিপট ল্যান্ড এবং সিভিল ও বিল্ডিং ওয়ার্কস ইন ডিপোট করতে জাপানিজ টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রি কোয়ালিফিকেশন (পিকিউ) সম্পন্ন হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল তারিখে বিড আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া পিকিউ ডকুমেন্ট প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। গত ২ মে বিড ডকুমেন্টের ওপর জাইকার কনকারেন্স পাওয়া যায়। বোর্ড সভায় অনুমোদিতে হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। শুধু তাই নয়, রোলি স্টক এবং ডিপট ইকুইপমেন্টের পিকিউ সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ জুন বিড দাখিলের সর্বশেষ সময় নির্ধারিত হয়েছিল।

এই প্রকল্পে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে জিওবি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ এবং জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পে সাহায্যের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৭৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং এতে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ ॥ এমআরটি লাইন-৬ বা মেট্রোরেল প্রকল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য মতিঝিল প্রান্তে রিসিভিং সাবস্টেশন (আরএসএস) নির্মাণের জন্য ৫০ শতক ভূমি প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটি কমলাপুর টিটিপাড়ায় উত্তর ব্রাহ্মণচিরণ মৌজার (জেএলনং-০৫) ১০০০ নং দাগভুক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন ভূমির মধ্যে ৫০ শতাংশ ভূমি আরএসএস নির্মাণ উপযোপী বিবেচনায় ওই ভূমি বাংলাদেশ রেলওয়ে হতে বরাদ্দ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ॥ দেশের মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলের অনগ্রসরতা, ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ভবিষ্যত ধারণক্ষমতা বিবেচনা করে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বন্দর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০১৮ সাল নাগাদ বন্দরটি পুরোদমে চালু হতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। প্রাথমিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৩১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং এর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ১ ভাগ। চলতি বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরী জানান, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো সময়সমতো বাস্তবায়নে একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা করা দরকার। কোন প্রকল্প মেগা প্রকল্পে নেয়া হবে তা নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা উচিত হবে। তা না হলে অন্য কোনা কারণে প্রকল্প যুক্ত করা হলে ফাস্ট ট্র্যাক গঠনের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

এদিকে, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির ৩৮ দশমিক ২৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২০১৬-২৩ অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মূল বন্দরের অবকাঠামোকে ১৯টি কম্পোনেন্টে ভাগ করে একটি প্রাথমিক ডিপিপি প্রস্তুত করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে বৈদেশিক অর্থ সংস্থানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি দেশের মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলের সার্বিক প্রয়োজন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পায়রা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জসমূহ ॥ পায়রা বন্দর সচল রাখতে ড্রেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারীভাবে আমদানিকৃত খাদ্যশস্যের ২০ শতাংশ এ বন্দরের মাধ্যমে খালাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। বন্দরের সাফল্যের জন্য নৌ-রুটের সঙ্গে একইভাবে রেল ও স্থলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া বন্দর পুরোদমে চালু করতে হলে ৬০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর ॥ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য ২০০৭ সালে জাপানের প্যাসিফিক কনসালটেন্ট ইন্টারন্যাশনালকে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের দাখিলকৃত সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া দ্বীপে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপানের সুপারিশ করে। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে তিনটি ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করার পর তা সম্পন্ন করতে ৫ বছর প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজ যথাক্রমে ২০৩৫ এবং ২০৫৫ সাল নাগাদ সমাপ্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কর্তৃক পিপিপি’র মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন, ভারত, নেদারল্যান্ড ও দুবাইয়ের ৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করেছে। এ সকল প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এগুলো পর্যালোচনা করছেন।

এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আনুমানিক মোট ব্যয় ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পিপিপি’র আওতায় সম্পাদনযোগ্য প্রকল্প ব্যয় ৭৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয়ের শতকরা ৬৫ দশমিক ৬ অংশের প্রয়োজনীয় ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার লিংক প্রজেক্টের দশমিক ৫৫৯ বিলিয়ন ডলারসহ সরকার কর্তৃক মোট ২ দশমিক শূন্য ১৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের সংস্থান রয়েছে। নন-পিপিপি অংশের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ॥ পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে গত ২০১১ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি (আইজিএ) প্রস্তুতিমূলত কাজের জন্য ২০১৩ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট চুক্তির ভিত্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত স্থাপন কেন্দ্র (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ মার্চ ২০১৩ থেকে জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে জিওবি ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৪ হাজার ৪০১ কোটি ২ লাখ টাকা। এতে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

প্রকল্পটিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল বাধ্যবাধকতা বিবেচনায় এবং আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করে যথাযথ উপায়ে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফাস্ট ট্র্যাকের প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। চ্যালেঞ্জ থাকার পরও এসব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের যেমন সক্ষমতা বেড়েছে তেমনি মনিটরিংয়ের সক্ষমতাও বেড়েছে।

এদিকে, মধ্যমেয়াদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নের লক্ষ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে জেনারেল কন্ট্রাক্ট ফর রূপপুর (এনপিপি) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মূল্য ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১ দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিওবি হতে প্রদান করা হবে এবং অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ বা ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাশিয়ান ফেডারেশন হতে ঋণ গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুকেন্দ্রটির জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রয়োজনে সাইটের নিকটবর্তী পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চর হতে আরও ৮০০ একর জমি প্রকল্পের অনুকূলে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভৌত অবকাঠামোসহ সকল ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ যেমন পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, মাটি পরীক্ষাগার ও কনস্ট্রাকশন ল্যাবরেটরি, কংক্রিট বেসিং প্ল্যান্ট, স্টোরেজ ওয়্যার হাউস, পাম্প হাউস, ওয়ার্কশপ, রিইনফোর্সমেন্ট ওয়েল্ডিং ফেসিলিটি, বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা ফেসিলিটি, ফায়ার ফাইটিং ফ্যাসিলিটি, ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং এবং প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। দক্ষ জনবল তৈরিসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সকল যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার ॥ এটি একটি কয়লানির্ভর বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান স্বল্পতার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুত কয়লা হতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকর। এজন্য মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এতে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ ভাগ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল জনকণ্ঠকে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে আবার অর্থ আনার সুযোগও রয়েছে। সভরেন ওয়েলথ ফান্ড গঠনের মাধ্যমেও ইচ্ছে করলে সরকার টাকার যোগান দিতে পারে।

জানা গেছে, সভরেন ওয়েলথ ফান্ড গঠন সংক্রান্ত একটি বৈঠক সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে মেগা প্রকল্পের অর্থায়নে এ ধরনের ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বলে জানা গেছে।

এদিকে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রিসেটেলমেন্ট এ্যাকশন প্লান বাস্তবায়ন কাজে সহায়তা প্রদানের জন্য মাঠ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। গত মার্চ থেকে পেন্টাওসান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি. জাপান প্রকল্পের প্রিপারেটরি ওয়ার্কের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে। গত ৭ এপ্রিল প্রকল্পের প্যাকেজ ৪.১ এর আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের নির্মাণ কাজের জন্য এনজেলিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু হবে। মাতারবাড়ী ১৩২-৩৩ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ কাজের জন্য এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।

মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুত প্রকল্প ॥ মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুত প্রকল্পটি বাগেরহাট জেলার রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) ৩০ আগস্ট ২০১০ সালে ৫০-৫০ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথ একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৫০০ কোটি এবং ইসিএ ১০ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ ভাগ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২ দশমিক ১ ভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। ভূমি প্রক্রিয়াকরণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ঢাল সুরক্ষা প্রর্ভৃতি কার্যক্রমের বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। এছাড়া ইপিসি চুক্তির জন্য সময় নির্ধারণ না হওয়ায় এখনও মূল ইপিসি প্লান্টের কাজ শুরু করা হয়নি। মধ্যমেয়াদে এ প্রকল্পে ১১৪ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার যা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এবং ইকুইটি থেকে নির্বাহ করা হবে।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ॥ গ্যাসের বিকল্প সরবরাহের অন্যতম উৎস হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিকে চিহ্নিত করা হয়। ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হতে পারে। এলএনজি ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের জন্য কাতারের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। এই চুক্তিটি সম্পন্ন হলে এলএনজির প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করা সম্ভব হবে। কক্সবাজারের মহেশখালীর সমুদ্র উপকূল হতে পশ্চিম দিক গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে যার এলএনজি ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এবং রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ৫০০ এমএমএসসিএফডি। প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন টার্মিনাল কোম্পানি কর্তৃক সম্পন্ন করা হচ্ছে। এলএনজি হতে গ্যাসে রূপান্তরের জন্য সমুদ্রের পানি ব্যবহার হবে। তবে এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না।

তবে প্রাক্কলিত ব্যয় হিসেবে এলএনজি আমদানি ও ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালন ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ও ভ্যাট, ট্যাক্স বাবদ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে চালু করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top