সকল মেনু

কেউ শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত থাকবে না

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওআইসি মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানির সাক্ষাৎ -পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো ছেলেমেয়েই শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত থাকবে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলে শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করছি। আর এজন্য সবার আগে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার।

বৃহস্পতিবার গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওআইসির মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি সাক্ষাৎ করেন।

ফল প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ এবং কক্সবাজার জেলার ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ দুই জেলার হাওর ও পাহাড়ি এলাকায় আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। তাই সরকার শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আবাসিক স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের হাওর ও পাহাড় এলাকার দুর্গম স্থানে আমি ঘুরেছি। ওখানকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বুঝেছি। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হাওর এলাকার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় কিছু নির্দিষ্ট স্থানে আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হবে।

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেইন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রত্যেক ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তার সেই উদ্যোগ সফল হতে দেয়নি। ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবই তুলব’, বলে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত রাখবে- এ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই তো আগামীর ভবিষ্যৎ, তারাই আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে এজন্য এখন থেকেই তাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।

উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছেলেমেয়েদের থেকে অনেক মেধাবী। আমাদের শুধু তাদের শিক্ষার সুযোগটা করে দিতে হবে।

এ বছর সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের থেকে ১০টি কমে এবার ২৫টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেদের উন্নতির লক্ষ্যেই মন দিয়ে লেখাপড়া করেছে বলেই তাদের ফল দিন দিন ভালো হচ্ছে।

এইচএসসি পরীক্ষায় তুলনামূলক ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ফল ভালো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, ছেলেদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আজকাল মেয়েরা মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে, ছেলেদেরও পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হবে।

ওআইসিকে সন্ত্রাস দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে ওআইসিকে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের বিবাদপূর্ণ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম বিশ্বের বিবাদপূর্ণ দলগুলোর সংকট নিরসনে ওআইসি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওআইসি মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানির সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো একত্রিত হয়ে তাদের সংকট নিরসনে আলোচনায় বসতে পারে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলিরা নিরীহ নিরপরাধ নারী-শিশু হত্যা করলেও অতীতে দেখা গেছে কোনো মানবাধিকার সংস্থাই এ নিয়ে কথা বলেনি।

তিনি বলেন, আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমগ্র বিশ্বের জন্যই একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ তা যে রূপেই আসুক না কেন তার বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ঘোষণা করেছি।

তার নিজের পরিবারও সন্ত্রাসবাদের শিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা (সন্ত্রাসীরা) ইসলামের নামে সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে প্রকৃতপক্ষে ইসলামেরই বদনাম করছে।

এ সময় সন্ত্রাস মোকাবেলায় ওআইসি মহাসচিব মাদানি বাংলাদেশসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। মাদানি বলেন, যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আÍত্যাগের এই ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ওআইসি’র রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে স্থায়ী ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমত জাহান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমিন মাদানি বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, মুসলিম উম্মাহ এবং ওআইসির বিভিন্ন কর্মসূচি, উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়। অক্টোবরে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে অনুষ্ঠেয় ওআইসির ৪৩তম কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স বৈঠকের বিষয়েও আলোচনা হয়। দু’দিনের সফরে মাদানি ঢাকায় আসেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top