সকল মেনু

নারকেলের তক্তি-চাল কুমড়ার মুরাব্বা খুব পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধু- জানালেন যোবায়দা শামসুদ্দীন

3798_bহটনিউজ২৪বিডি.কম: নারকলের তক্তি,চাল কুমড়ার মুরাব্বা কি যে পছন্দ ছিলো বঙ্গবন্ধুর। ফরিদপুরে আসলেই বঙ্গবন্ধু বলতেন ভাবী এ গুলো শুধু খেলে হবে না আমার সাথে ও দিতে হবে ,বাসায় নিয়ে যাবো। সে ভাবেই বেশী করে নারকেলের তক্তি আর মুরাব্বা তৈরি করতেন যোবাইদা সামসুদ্দীন। বঙ্গবন্ধু তাকে ডাকতেন ভাবী বলে। যোবাইদা সামসুদ্দীন হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর বাল্য বন্ধু মরহুম সামসুদ্দীন মোল্লার সহধর্মীনি। সামসুদ্দীন মোল্লা,বঙ্গবন্ধু এবং ফরিদপুরের এ্যাডভোকেট সরোয়ারজান মিয়া ও এ্যডভোকেট আবু আলম একই সঙ্গে পড়াশুনা করেছেন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে একই সঙ্গে থাকতেন বেকার হোষ্টেলে। চার বন্ধুর মধ্যে আবু আলম কোন রাজনীতির সাথে ছিলেন না। সরোয়ারজান মিয়া  করেছেন মুসলিমলীগ,পাচাত্তরের পর যোগদেন বিএনপিতে ,মারা গেছেন কয়েক বছর আগে।  মরহুম সামসুদ্দীন মোল্লা শুরু থেকেই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সমর্থক জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সে পথেই ছিলেন। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীত্বের লোভ তাকে টলাতে পারেনি। শেষে ক্ষিপ্ত জিয়াউর রহমান সামসুদ্দীন মোল্লাকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। সামসুদ্দীন মোল্লা আওয়ামীলীগের টিকিটে এমএনএ নির্বাচিত হন ’৭০ সালে। ’৭৩ সালের এমপি। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে ফরিদপুরের জেলা গর্ভনর করেছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বঙ্গন্ধুর রাজনীতির পর্বত শৃঙ্গে আরোহন এবং ৭৫ সালের মর্মান্তিক বিয়োগান্তক ঘটনার প্রথম প্রতিবাদী ছিলেন সামসুদ্দীন মোল্লা।  সেই পাকিস্তান আমল থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় সামসুদ্দীন মোল্লার সহধর্মীনি যোবাইদা সামসুদ্দীনের। বঙ্গবন্ধু তখোন দেশের মানুষের মুজিব ভাই । সামুসুদ্দীন মোল্লার ব্যাক্তিগত বন্ধু। রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে গোপন আলোচনা করেন দু’বন্ধু। বেশীর ভাগ আলোচনা হয় সামসুদ্দীন মোল্লার ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরের বাসার বৈঠক খানায়। সে সব গোপন আলোচনায় দুবন্ধুর পাশাপাশি থাকতেন যোবাইদা সামসুদ্দীন। বঙ্গবন্ধু এসেই হাক  ছাড়তেন ভাবী আমার নারকেলের তক্তি আর চালকুমড়ার মুরাব্বা কই? প্লেটে করে সে গুলো হাজির করতেন যোবাইদা সামসুদ্দীন। সামসুদ্দীন মোল্লার টিনের তৈরি ওই বেঠক খানায় যতবার বঙ্গবন্ধু ঢকেছেন চৌকাঠের সঙ্গে কপালে গুতা খেয়েছেন তিনি। প্রতিবারই বঙ্গবন্ধু বলতেন ভাবী দরজাটা আর ঠিক করলেন না। যোবাইদা সামসুদ্দীন হসাস্যে বলতেন ভাইজান একটা গুতা খেয়ে গেলে  হয়তো ভাবীর কথাটা মনে থাকবে। সে জন্যই চৌকাঠটা  ঠিক করি না। একগাল হেসে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলতেন ভাবী তা হলে আমার গুতা খাওয়াই ভালো। ফরিদপুরে আসলে নাস্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পছন্দ ছিলো পদা সাহার মিষ্টি,বিশেষ করে রসগোল্লা। পদা সাহার মিষ্টির দোকানটি এখন আর নেই। দোকানটি ছিলো বর্তমান মুজিব সড়কে হাফেজ বিল্ডিং এর বিপরীতে।
সে সময় ফরিদপুরে পাবলিক কোন টেলিফোন ছিলো না। বঙ্গবন্ধু বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলার জন্য টিএন্ডটি অফিসে ফোন করে বলে রাখতেন মোল্লা সাহেবকে ডেকে আনতে। অফিসের লোকেরা সামসুদ্দীন মোল্লাকে ডেকে আনার পর বঙ্গবন্ধু আবার ফোন করে কথা বলতেন। পাকিস্তান আমলের সে সময় টিএন্ডটি অফিস মানে পাবলিক কল অফিসটি ছিলো রাজেন্দ্র কলেজের দক্ষিন পাশে ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে। বেশীর ভাগ সময় এখানে ডেকে এনে সামসুদ্দীন মোল্লার সঙ্গে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু। ফরিদপুরে আসলে বঙ্গবন্ধু থাকতেন আনাথের মোড়ের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয়। যে ডাকবাংলোটি বর্তমানে ভাড়া দেয়া হয়েছে,এখানে এখন একটি মেডিকেল ডিপ্লোমা স্কুল হয়েছে।
৬৯সালের ঘটনা। একদিন দুপুরের পরে টেলিফোন অফিসের এক পিওন গিয়ে সামসুদ্দীন মোল্লার বাসায় খবর দিয়ে আসে একঘন্টা পরে মোল্লা সাহেবকে টেলিফোন অফিসে  যেতে বলেছেন শেখ সাহেব কথা বলবেন। মোল্লা সাহেব তখোন কোটে গিয়েছেন,যোবাইদা সামসুদ্দীন মোল্লা সাহেবকে খবর পাঠালেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে বাসায় ফিরে সামসুদ্দীন মোল্লা ব্যাগপত্র গুছিয়ে দিতে বললেন ,বাসায় জানালেন বঙ্গবন্ধু তাকে দ্রুত বরিশাল যেতে বলেছেন। বরিশালের ন্যাপ নেতা বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আওয়ামীলীগে যোগ দেবেন কিন্ত এ নিয়ে বরিশাল আওয়ামীলীগের ভেতর ঝামেলা চলছে। বঙ্গবন্ধু চান আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আওয়ামীলীগে যোগদান করুক। সে ঝামেলা সারতে বঙ্গবন্ধু সামসুদ্দীন মোল্লাকে পাঠালেন বরিশালে। সামসুদ্দীন মোল্লা গিয়ে বিরোধ মিংশা করে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কে দলে যোগাদানের অনুষ্ঠান করে ফিরলেন সাত দিন পরে।
স্বাধীনতার পর। ’৭২ সালের ঈদের একদিন আগের ঘটনা। সামসুদ্দীন মোল্লার বাসায় তখোন টেলিফোন লেগেছে। তিনি নির্বাচিত এমএনএ। দুপুর বেলা বঙ্গবন্ধুর ফোন। ফোনটা প্রথমে রিসিভ করেন সামসুদ্দীন মোল্লার ছেলে যোবায়ের জাকির। মোল্লা সাহেব বাসাতেই ছিলেন। তিনি এসে ফোন ধরার কয়েক মিনিট পর ভীষন চিল্লাচিল্লি শুরু হলো। ওপাশ থেকে কি বলা হচ্ছে সেটাতো আর শোনা যাচ্ছে না,কিন্ত এপাশ থেকে সামসুদ্দীন মোল্লা শুধু বলছেন,তুমি শুরুটা করলা কি? আমি এটা পারবো না। তোমার যদি ইচ্ছে হয় তুমি করো। তুমি যাই বলো এটা সম্ভব না। এ ভাবে প্রায় আধা ঘন্টার বেশী সময় চললো উচ্চ স্বরে কথাবার্তা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,ফরিদপুরে দালাল আইনে আটক তাদের কলেজ জীবনের একজন বন্ধুকে ঈদের আগে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করতে। বঙ্গবন্ধু সেদিন কাতর কন্ঠেই শামসুদ্দীন মোল্লাকে বলেছিলেন,দেখ ওরা বন্ধু মানুষ। গুরুতর অপরাধ করেনি,আমরা ঈদ করবো ওরা ভেতরে থাকবে কেমন হয় মোল্লা,তুই ডিসির কাছে গিয়ে ওদের ছাড়িয়ে আন। যোবায়দা শামসুদ্দীন জানতে চাইলেন তা হলে কি করবেন? মোল্লা সাহেব বললেন,ও যখন বলেছে ছাড়িয়ে আনি তারপর সামনা সামনি ঝগড়া করবানে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top