সকল মেনু

আরেকটি বোল্ট ঝলকের অপেক্ষা, পদকে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র

 

আরেকটি বোল্ট ঝলকের অপেক্ষা, পদকে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র

চারদিকে কেবলই বোল্টরব। মাইকেল ফেলপস সাঁতার শেষে বিদায় নিয়েছেন ইতিহাসে নাম লিখিয়ে। অলিম্পিকে এখন মহাতারকা বলতে ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চির উসাইন বোল্ট। রিও অলিম্পিকের সব আকর্ষণ এখন তাকে ঘিরে। যেখানে বোল্ট সেখানেই মানুষের ভিড়। হওয়ারই কথা। ট্র্যাক ফিল্ডের অবিসংবাদিত সম্রাটের গতির ঝড়ই এখন রিও অলিম্পিক গেমসের প্রধান আকর্ষণ। জাদুমাখা তার দু’পায়ের চমক দেখতে মুখিয়ে বিশ্ব। ক্রীড়প্রেমীদের দৃষ্টি এখন অলিম্পিক পার্কে। এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে দামী ও মর্যাদার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার মেডেল ইতোমধ্যে জেতা হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে গড়া হয়ে গেছে এই ইভেন্টের হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। এবার পালা ২০০ মিটারের। ব্রাজিল সময় আজ রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া দিনটাও নিজের করে নিতে প্রস্তুত জ্যামাইকার গর্ব উসাইন বোল্ট। ১০০ মিটার জেতার পর শত বছরের ইতিহাস তো তার নামই লেখা হয়ে গেছে। শুধু বোল্ট কেন? কিংবদন্তির সঙ্গে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন জ্যামাইকার নারী এ্যাথলেট এলেইন টম্পসন। তিনি দ্রুততম মানবী হয়েছেন ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জিতে। এ্যাথলেটিক্সে ৪৭ রকমের স্বর্ণপদকের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান পদকগুলো একে একে নিয়ে যাচ্ছেন জ্যামাইকানরা। চোখ ধাঁধানো ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও ৪ী১০০ রিলেতেও ফেবারিটের তকমাটা সেঁটে আছে বোল্ট-এলেইনদের গায়ে। বিদ্যুত বোল্ট, চমক তো থাকবেই। সঙ্গে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে এলেইন টম্পসনও কি করেন সেটাই দেখার।

আজকের ইভেন্ট নিয়ে মহানায়ক বোল্ট কি ভাবছেন শোনা যাক তার মুখ থেকে। অনুশীলন পরবর্তী গতকাল প্রেস কনফারেন্স বোল্ট পরিষ্কার করে দিলেন, বাকি দুটোতেও লক্ষ্য সোনার মেডেল। তা নাহলে ‘ট্রিপল-ট্রিপল’-স্বপ্ন যে পূরণ হবে না। আমি রিও গেমসে এই লক্ষ্যটা নিয়েই লড়াই শুরু করেছি। প্রথমটা যেহেতু হয়ে গেছে, ২০০ মিটারেও আজ জিততে চাই। আমি ভালভাবেই জানি ১০০ মিটার জয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বিরা আমাকে টেক্কা দিতে মরিয়া, নানা কৌশল নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এটা তাদের মাথার উপর বড় চাপ। আমার কিন্তু কোন টেনশন নেই। একগাল হাসি দিয়ে বললেন, দেখছেন তো কেমন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছি। স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়ে আমি কতটা আত্মবিশ্বাসী। পরিষ্কার ধরে নিতে পারেন রিওতে লক্ষ্য পূরণ করেই ছাড়ব। রিওই হতে পারে আমার ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক। আর শেষ ঝলকটা দেখিয়েই বিদায় নেয়ার চিন্তা করছি।

এ কথা অনস্বীকার্য, গোটা দুনিয়ার মানুষ জ্যামাইকার নাম জানে কেবল উসাইন বোল্টের বদৌলতে। রবিবার যে রেকর্ড গড়লেন তাতে বাকি দুটি ইভেন্টেও স্বর্ণপদকের হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন গতিদানব উসাইন বোল্ট। এখন এ দুটোতেও স্বর্ণ জিতলে, সেই কীর্তিকে কোন মঞ্চে জায়গা করে দেবেন ভক্তরা? উত্তর সহজ, ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের মহানায়ক তিনি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। বেজিং থেকে লন্ডন হয়ে রিওতে সাক্ষী হয়ে যাবেন ইতিহাসে। প্রথম দিন ট্র্যাকে নেমে ঠিকই হ্যাটট্রিক করেই বসলেন বোল্ট। আরও দুটি হ্যাটট্রিকের হাতছানি তার সামনে। এমনিতেই ১২০ বছরের অলিম্পিক ইতিহাসে এমন অভাবনীয় কীর্তি কখনও দেখা যায়নি। এই রেকর্ড অন্য আর কারও নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইস টানা দুই অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। সেই রেকর্ড রবিবার রিওতে ভেঙ্গে দিয়েছেন উসাইন বোল্ট। এতে সর্বকালের সেরা এ্যাথলেট হিসেবে প্রশ্নাতীত ছাপ রেখে দিলেন তিনি। যদিও নিজের গড়া বিশ্ব রেকর্ড ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ড ছুঁতে পারেননি। হয়নি ৯ দশমিক ৬৩ সেকেন্ডের অলিম্পিক রেকর্ডও। কিন্তু তাতে কী? ততক্ষণে অলিম্পিকের সেরার সেরাদের তালিকায় নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেলেন বোল্ট। অবিসংবাদিত সম্রাটের রাজ্যটা আরও বিস্তৃত করতেই প্রস্তুত তিনি। অল্প সময়ের কথায় বোল্ট নিজেই তো জানিয়ে দিলেন, বাকি দুটিতেও তার সোনার পদক চাই-ই চাই। ’পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’ এই কথাটিই হয় তো লিখতে হবে রিও বসে আজ রাতে।

এদিকে গেমস শুরুর সপ্তাহ না পেরুতেই সবাইকে হটিয়ে পদকের লড়াইয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম দু’দিন চীন রাজত্ব করলেও টিকতে পারেনি মার্কিন ক্রুস মিসাইলের সামনে। এক ফেলপস ক্ষেপণাস্ত্রই দিয়ে গেছেন ছয় পদক, যার মধ্যে পাঁচটিতেই সোনা। সাঁতারের দাপটের পর এ্যাথলেটিক্সের স্বল্প পাল্লার দৌড়ে জ্যামকানদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও নারী-পুরুষ মিলে অন্য সব বিষয়ে বেশিরভাগ পদকই জিতে নিচ্ছেন মার্কিনীরা। পদকের ভা-ার সমৃদ্ধ করে দিয়েছেন জিমন্যাস্টিক্সে সিমোন বিলেসও। যাকে বলা হয় জিমন্যাস্টিক্সের মাইকেল ফেলপস। স্প্রিন্ট বাদ দিলে এ্যাথলেটিক্সসহ গেমসের ৪১ রকমের খেলায় সর্বত্রই যুক্তরাষ্ট্রের দাপট। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মোট ৭৫ পদকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র্রের স্বর্ণ ২৬। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনাদের দখলে মোট থাকা ৪৬ পদকে স্বর্ণ ১৭। তৃতীয় স্থানে গ্রেট ব্রিটেনের মোট ৪১ পদকে ৮ স্বর্ণ। পরিসংখ্যান এখনই বলে দিচ্ছে, গেমস শেষ হতে এখনও চারদিন বাকি থাকলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top