সকল মেনু

পাড়া-মহল্লায় মানুষের ঢল ॥ জঙ্গীবাদ সমূলে উপড়ে ফেলার শপথ

download (1)

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যেদিকে চোখ যায় শুধুই শোকের আবহ। পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড-থানা, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পরপরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে চলছে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সর্বত্রই মাইকে বাজছে বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ফাঁকে ফাঁকে দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান। এবার জাতীয় শোক দিবসের দলীয় আয়োজনকে বহুগুণ ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের আয়োজন ও অংশগ্রহণ।

মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোককে শক্তিতে পরিণত করে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কোন উগ্রবাদী কিংবা অসাংবিধানিক শক্তির কাছে মাথানত করেননি। আজকে যখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রক্তাক্ত হয় জঙ্গীবাদীদের বীভৎস উন্মাদনায়, তখন বঙ্গবন্ধুর আত্মা আমাদের ধিক্কার দেয়। তাই জঙ্গীবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের শোক দিবসের শপথ।

দিনভর শোক দিবসের নানা অনুষ্ঠানে বক্তাদের কণ্ঠে এবারের ১৫ আগস্টে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কেক কেটে জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও উঠে এসেছে। বিএনপি নেত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। নেতারা বলেন, ভুয়া জন্মদিন পালন না করায় দেশবাসী মনে করেছিল বিএনপি নেত্রীর বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু পরে জানা গেল, শোক দিবসের কারণে নয়, নেতাকর্মীদের দুর্দিন ও বন্যাকবলিত মানুষের কথা বিবেচনা করে তিনি (খালেদা জিয়া) এবার জন্মদিন পালন করছেন না। এর চেয়ে নোংরা ও হীনম্মন্যতার পরিচয় আর হতে পারে না।

দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শোক দিবসের আলোচনা ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে যে সাম্প্রদায়িকতা শুরু হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জঙ্গীবাদ বিস্তার লাভ করছে। এদের নির্মূল করেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পরিণত করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরীর নেতৃত্বে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

শোক দিবসের আলোচনা সভা এবং কাঙালিভোজ বিতরণকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করার বিষয়ে বলেন, আশা করি উনি ভবিষ্যতেও কোনদিন ১৫ আগস্টে ভুয়া জন্মদিন পালন করবেন না। তবে খালেদা জিয়া বলেননি তিনি জাতীয় শোক দিবসের কারণে জন্মদিন পালন করছেন না। যখন বলবে তখন অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানাব। তিনি বলেন, ’৭১ ও ’৭৫-এর হত্যাকারীরা এখন আবারও ষড়যন্ত্র করছে। তবে কোন ষড়যন্ত্রই বাংলার মাটিতে সফল হবে না। এরা সব সময় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তাই এদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে টুঙ্গিপাড়ায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতার পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা করছে সরকার। আমরা আশাবাদী দ্রুতই তা কার্যকর হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সবাইকে দল-মতের উর্ধে উঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। কারণ জাতির পিতা হচ্ছেন দল-মতের উর্ধে। তাকে সার্বজনীনভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তিনি স্বাধীন বাংলার স্থপতি। কিছু কুলাঙ্গার ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এদেশে যতবার বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই তিনি বাঙালীর হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে স্থান করে নিয়েছেন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বিমানমন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু কোন উগ্রবাদী কিংবা অসাংবিধানিক শক্তির কাছে মাথানত করেননি। তাঁর জীবন, কর্ম ও মৃত্যু আমাদের সেই শিক্ষা দেয়। আজকে যখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রক্তাক্ত হয় জঙ্গীবাদীদের বীভৎস উন্মাদনায় তখন বঙ্গবন্ধুর আত্মা আমাদের ধিক্কার দেয়। তাই জঙ্গীবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের শোক দিবসের শপথ।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও কাঙালিভোজ বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের আদ্যোপান্ত দমন করতে হবে। যারা বাংলাদেশকে কুরে কুরে খেতে চায়, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। এরপর ২১ বছর ধরে তারা খুনীদের পুনর্বাসন করেছে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো শোক দিবসের কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নেয়ায় বার কাউন্সিল সত্যি প্রশংসার দাবিদার। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের ৬৫ বারের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আমরা যৌথসভা করেছি। যেখানে জঙ্গীদের আইনী সহায়তা না দিতে আইনজীবীরা একমত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা করে বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির উত্তরসূরী খালেদা জিয়া তাদের প্রভুদের দেশ পাকিস্তানের আদেশে ১৯৯৩ সাল থেকে ১৫ আগস্টে ভুয়া জন্মদিন পালন করে আসছেন। এই প্রথম তিনি জন্মদিন পালন করলেন না। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত তার বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু পরে জানা গেল নেতাকর্মীদের দুর্দিন ও বন্যাকবলিত মানুষদের কথা বিবেচনা করে তিনি এবারের জন্মদিন পালন করছেন না। এর চেয়ে নোংরা ও হীনম্মন্যতার পরিচয় আর হতে পারে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. আবদুস সালাম। অন্যদের মধ্যে ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গবর্নরসের গবর্নর মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, শায়খ আল্লামা খন্দকার গোলাম মাওলা, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিকেলে রাজধানীর দারুস সালামে বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (বিকেটিটিসি) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিকেটিটিসির অধ্যক্ষ ড. প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত আলী।

নগরীর কাকরাইলে জনপ্রকৌশল অধিদফতর মিলনায়তনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সকলের উচিত তাকে সহযোগিতা করা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top