সকল মেনু

‘বঙ্গ বাহাদুর’র জীবন ঝুঁকিতে!

hati_27700হটনিউজ২৪বিডি.কম : বানের স্রোতে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ভেসে আসা বুনো হাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় এর মৃত্যু হতে পারে। গতকাল সোমবার রাতে হাতিটির এ অবস্থা জানিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাণিটিকে বাঁচানোর সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমে আসছে। গতকাল জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোনাকান্দর গ্রামে শিকলবন্দি অবস্থায় হাতিটি কাদায় পড়ে গোঙাচ্ছিল, উদ্ধারকর্মীদের শত চেষ্টায়ও দাঁড়াতে পারছিল না। সন্ধ্যায় কাদামাটিতে পড়ে গোঙাতে থাকা হাতিটিকে শুশ্রূষা করতে গেলে এর পায়ের আঘাতে মাহুত আবু তাহের গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয় এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে হাতিটিকে এখন কলাগাছ, কলা, আখ, গুড়, বাঁশপাতাসহ পর্যাপ্ত খাবার এবং স্যালাইন ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, হাতিটি উদ্ধারের পর এর খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমতে শুরু করে। আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে। গতকাল সেটি গরমে অস্থির হয়ে কাদায় লুটিয়ে পড়ে। বঙ্গ বাহাদুরকে স্থানান্তরের জন্য গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে ৩টি পোষা হাতি আনার কথা থাকলেও সেখানে মেলেনি প্রশিক্ষিত পোষা হাতি। হাতিটি উদ্ধারের জন্য আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের কাপ্তাই থেকে দুটি এবং গাজীপুর থেকে একটি পোষা হাতি আনা হচ্ছে। তবে একে কোথায় স্থানান্তর করা হবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি।

বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ শেরপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, শনি ও রবিবার সকালে দুবার পালানোর চেষ্টা করেছিল হাতিটি। উদ্ধারকর্মীদের প্রচেষ্টায় এটা পালাতে পারেনি। গতকাল সকাল ১১টার দিকে চার পা বাঁধা অবস্থায় কাদামাটিতে শুয়ে পড়েছে প্রাণীটি। কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ায় হাতিটি আর দাঁড়াতে পারছে না।

পশু চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বুনো হাতিটি দেশের ৫টি জেলার নদীনালা, খালবিলসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ৫-৬ বার ট্র্যাংকুলাইজার গান দিয়ে মেটাল ডার্টে অচেতন করার ওষুধ প্রয়োগ করে উদ্ধার এবং লোহার শিকল ও মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখায় এটা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বন্য প্রাণী পরিদর্শক অসিম মল্লিক জানান, বঙ্গ বাহাদুরকে বশে এনে স্থানান্তর করতে ৩টি পোষা হাতি আনার কথা থাকলেও দেশের কোথাও মিলছে না উচ্চ প্রশিক্ষিত পোষা হাতি। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে একটি এবং চট্টগ্রামের কাপ্তাই থেকে ব্যক্তিমালিকানাধীন দুটি পোষা হাতি আনা হচ্ছে। সাবেক উপপ্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বলেন, বঙ্গ বাহাদুরকে স্থানান্তর করতে পোষা হাতি যেকোনো সময় এসে পৌঁছবে। তারপর পোষা হাতি ও মাহুতের সাহায্যে বুনো হাতিটিকে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটিয়ে ডাঙায় নেওয়া হবে। ডাঙায় নিয়ে হাতিটিকে অচেতন করে ক্রেনের সাহায্যে ট্রাকে ওঠানো হবে। এ জন্য তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা থেকে ক্রেন ও ট্রাক ভাড়া করে রাখা হয়েছে। বঙ্গ বাহাদুরকে কোথায় রাখা হবে তা বন বিভাগের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত গত ২৮ জুন বানের পানিতে ভেসে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে বুনো হাতিটি। এরপর ৫ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে গত ২৮ জুলাই জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আসে হাতিটি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামে হাতিটিকে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top