সকল মেনু

গভীর শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

1471274336_41

অনলাইন রিপোর্টার ॥ সারাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। গভীর শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে গোটা জাতি।

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুই জায়গাতেই লাখো মানুষের ঢল। নেতাকর্মী ছাড়াও শিশু, তরুণ, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ এসেছিল ফুল হাতে। সর্বত্র বিরাজ করে শোকের আবহ।

এদিন ছিল সরকারি ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন ছাড়াও জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ও সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতিহা পাঠ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর স্থানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ৭টায় সেখানে মা, ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কবরে ফুল দেন তারা, করেন মোনাজাত।

সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী সমাধিসৌধের বেদির পাশে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ।

পরে প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও বঙ্গবন্ধু, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এরপর দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শোক দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সকাল ১১টায় সমাধিসৌধ কমেপ্লেক্সে জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা শরিক হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে মিলাদ মাহফিলের মোনাজাতে অংশ নেন।

পঁচাত্তরের রক্তঝরা দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণ করেন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের কূট চক্রান্ত এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। তবে প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

আগস্টের মধ্যভাগের সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী। আর তাইতো সারা বছরের চেয়ে এই দিনটি যেন জাতীর জন্য একটু বেশি বেদনাদায়ক বেশি কষ্টের। আর কষ্টটা বুকে চেপে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে জাতির জনককে, বঙ্গবন্ধুকে।

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৬, ০২:১৯ পি. এম.

– See more at: https://www.dailyjanakantha.com/details/article/210782/%E0%A6%97%E0%A6%AD%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%95-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%95#sthash.WalEBCfZ.dpuf

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top