সকল মেনু

মূলধন বাড়ালেও উড়ছে না ইউনাইটেড এয়ার

 আবারও টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে ইউনাইটেড এয়ার। যদিও কোম্পানিটির ফ্লাইটসহ যাবতীয় কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। তবুও কোম্পানিটি ৬২৯ কোটি টাকা উত্তোলনের পরও ঘুরে দাঁড়াবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এর আগেও কোম্পানিটি ব্যবসায় বাড়ানোর লক্ষ্যে আইপিওতে ১০০ কোটি, রাইট শেয়ারে ৩১৫ কোটি ও নিয়মিতভাবে বোনাস শেয়ারে মূলধন বাড়িয়েছে। কিন্তু ব্যবসায় উন্নতি হয়নি।

জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোন কোম্পানির পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে ওই কোম্পানি রাইট শেয়ার ও পুনঃগণপ্রস্তাবের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন না। এ হিসাবে ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালকরা ৫.০২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করায় কোম্পানিটির রাইট শেয়ার ও পুনঃগণপ্রস্তাবে মূলধন সংগ্রহের যোগ্যতা নেই।

এ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করায় লাভবান হয়েছিল বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা। তবে ইউনাইটেড এয়ারের ক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হবে। এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।

কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারের এনএভিপিএস ১০.৯৪ টাকা থাকলেও কোম্পানিটি এর চেয়ে কমে ১০ টাকা দরে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার টাকার মূলধন সংগ্রহ করবে, যাতে কোম্পানিটিরি এনএভিপিএস কমে আসবে ১০.৫৯ টাকায়। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারদের এনএভিপিএসে লোকসান হবে ৩.২০ শতাংশ বা ০.৩৫ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে সুইফট কার্গো পিটিই, ফনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং পিটিই এবং টিএসি এ্যাভিয়েশনের কাছে শেয়ার ইস্যু করবে। ইস্যুকৃত শেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে সুইফট কার্গো পিটিইর শেয়ার তিন বছর লক ইন থাকলেও ফনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং পিটিই ও টিএসি এ্যাভিয়েশনের ক্ষেত্রে মাত্র এক বছর লক ইন থাকবে। অর্থাৎ এক বছর পরই এ দুই প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে পারবে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর ঝুঁকির পরিমাণ আরও বাড়বে।

একই সঙ্গে কোম্পানিটিকে কুপন বন্ড ছেড়ে আরও ২২৪ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এ অনুমোদনের অর্থে কোম্পানিটি বিমান ক্রয়ের ডাউন পেমেন্ট, ঋণ পরিশোধ, সিভিল এ্যাভিয়েশনের দেনা ও ফি পরিশোধ করবে। যদিও কোম্পানিটি আগের আইপিও ও রাইট শেয়ারের অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।

প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত টাকা দিয়ে ইউনাইটেড এয়ার বিমান ক্রয় ও এ সংক্রান্ত দায় পরিশোধের কাজে ব্যবহার করবে। কিন্তু তাতে কোম্পানিটির ব্যবসায় সম্প্রসারণ নিয়ে? সন্দেহ আছে।

দেখা গেছে, কোম্পানিটি যে হিসাব বছরগুলোর এ্যাকাউন্টসের ওপর আইপিও ও রাইটে মূলধন সংগ্রহ করেছে তার পরের বছর মুনাফা বেড়েছে। এর পরই মুনাফা কমতে শুরু করে।

কোম্পানিটি ২০০৯-১০ অর্থবছরে আইপিওতে টাকা সংগ্রহের পর ২০১০-১১ বছরে ১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা থেকে মুনাফা বেড়ে হয় ৩১ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর ২০১০-১১ বছর রাইটে টাকা সংগ্রহের পরের বছর আরও বেড়ে হয় ৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু এর পর ২০১২-১৩ বছর ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ, ২০১৩-১৪ বছর ৫৮ কোটি ৮ লাখ ও ২০১৪-১৫ বছর ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আর বর্তমানে ব্যবসায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগেও পুঁজিবাজারে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনাইটেড এয়ারের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ইউনাইটেড এয়ার কোম্পানিটি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলেও উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ক্ষতির পরিমাণ হবে খুবই কম। কারণ উদ্যোক্তা/পরিচালকরা এরই মধ্যে তাদের শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিক্রি করে দিয়ে বেরিয়ে গেছেন।

দেখা গেছে, ২০১০ সালে আইপিওতে আসার পর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে ৫০ শতাংশ ও অন্যদের কাছে ছিল বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার। কিন্তু কোম্পানির শোচনীয় সময়ে আসার আগেই উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার ৫০ শতাংশের মধ্যে ৪১.৫৬ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন তাদের হাতে আছে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ। আর বাকি ৯২.৯৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

মুনাফার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউনাইটেড এয়ারকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসে কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা। কিন্তু এখানে এসে তারা তাদের শেয়ার বিক্রয় করে দিয়েছে, যার কারণে কোম্পানিটি মুনাফা নাকি লোকসানে পড়ল তা উদ্যোক্তাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি। যেখানে পুঁজিবাজারে আসার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।

১০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ইউনাইটেড এয়ার ২০১০ সালে আরও ১০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। এছাড়া ২০১১ সালে রাইট শেয়ার ও ২০১০ সালে ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ১০ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৫ শতাংশ, ২০১৩ সালে ১২ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটি মূলধন বাড়ায়। যে কোম্পানিটির বর্তমানে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬৮৭ কোটি টাকায়। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের মালিকানা ৪৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার আর বাকি ৬৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার মালিকানা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি কখনও শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিতে পারেনি। অথচ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সমতার ওপর বোঝা যায় একটি কোম্পানির ভিত্তি কতটা মজবুত। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার পর ইপিএস কোন বছরে ১ থেকে ২ টাকায় যেতে পারেনি।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top