সকল মেনু

নিউইয়র্কে দুই বাংলাদেশি গুলিতে নিহত

8cce85a93205643445dfb9bb9633a0c3-York-02

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে একটি মসজিদের ইমামসহ দুই বাংলাদেশি আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত দুজন হলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আখনজি (৫৫) ও তাঁর বন্ধু তারা মিয়া (৬৪)। অবশ্য স্থানীয় গণমাধ্যমে তারা মিয়াকে ইমামের সহকারী বলা হচ্ছে।

আলাউদ্দিন আখনজি ওজোন পার্ক এলাকার আল ফোরকান জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। জোহরের নামাজ শেষে তারা মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, দুজনকে পেছন থেকে মাথায় গুলি করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। বেশ কাছ থেকে গুলি করা হয়। আলাউদ্দিন আখনজি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তারা মিয়া।

নিউইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর হেনরি সাউটনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তাঁরা ঘটনাটিকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধ’ (হেইট ক্রাইম) হিসেবে বিবেচনা করছেন।

হত্যাকাণ্ডের পেছনে ডাকাতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। কারণ, নিহত দুজনের পকেটে নগদ কয়েক শ ডলার পাওয়া গেছে।

ঘটনার সময় আলাউদ্দিন আখনজি ও তারা মিয়ার পরনে ইসলামি পোশাক ছিল। তাঁদের মাথায় ছিল টুপি
দুজনের নিহত হওয়ার খবর বাঙালি-অধ্যুষিত ওজোন পার্ক এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সেখানে অনেক লোক জমায়েত হয়। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব কাজ করে থাকতে পারে।

পুলিশ কর্মকর্তা সাউটনার জানিয়েছেন, তাঁরা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। হত্যাকারী হিসেবে তাঁরা এক যুবককে শনাক্ত করেছেন। ফুটেজ অনুসারে, হত্যাকারীর পরনে ছিল কালো রঙের গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট। পেছন দিক থেকে গুলি করে সে দ্রুত সরে পড়ে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, ছোট রিভলবার দিয়ে চার-পাঁচটি গুলি করে আততায়ী পালিয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্সহত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আলাউদ্দিন আখনজি মাত্র দুই বছর আগে ওই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসেন। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সপ্তাহ খানেক পরে তাঁর দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা বলছেন, আলাউদ্দিন আখনজি অত্যন্ত জনপ্রিয় ইমাম ছিলেন। তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভও হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট কবি তমিজ উদ্দিন লোদী প্রথম আলোকে বলেন, আলাউদ্দিন আখনজি ইসলামি শাস্ত্রের একজন পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিকমনস্ক মানুষ। শুক্রবারে তাঁর খুতবা শোনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসতেন।

হত্যাকাণ্ডের স্থান হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্সওই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন—এমন একজন স্থানীয় বাংলাদেশি বলেন, তাঁর জানামতে আলাউদ্দিন আখনজি কাউকে কখনো আঘাত করেননি। এই হত্যার পেছনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলামবিদ্বেষী প্রচারকে দায়ী করেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় এলাকায় এক স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত হয়। জমায়েত থেকে মসজিদে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও তোলা হয়। বাংলাদেশি ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ওই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top