সকল মেনু

মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে গোটা যশোর

unnamedযশোর প্রতিনিধি: মৌসুমের সর্বোচ্চ ও বিরামহীন বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে গোটা যশোরের নিম্নাঞ্চল। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে যশোরবাসী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার শত শত চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের, ফসলি জমি ও পুকুর। অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ এখন পানি বন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
শ্রাবণের অবিরাম বর্ষণের এমন পরিস্থিতি গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি বলেও অনেকে জানিয়েছেন। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ড্রেন উপচে রাস্তাঘাট তলিয়ে পানি প্রবেশ করেছে অসংখ্য বাড়িতে।

unnamed
গতকাল বুধবার দিনভর যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের অল্পবিস্তর বৃষ্টিপাতের পর মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিপাতে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে অনেক এলাকা ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণে শহরের খড়কি, রেলগেট, বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়ি পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের।
শহরের বেজপাড়া পিয়ারীমোহন সড়ক এলাকার বাসিন্দা মর্তুজা চৌধুরী জানান, টানা বৃষ্টিপাতে তাদের গোটা এলাকা তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি তার ঘরের ভেতরেও প্রবেশ করেছে। ড্রেনগুলো পরিস্কার না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
যশোরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা সালাহউদ্দিন জানান, তার এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেন আটকে থাকায় পানি নামছে না। ফলে তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
যশোরস্থ বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আষাঢ়ের শুরু থেকেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গোটা শ্রাবণেই চলেছে শ্রাবণধারা। মধ্য শ্রাবণের পর থেকে শেষ দিকে এসে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যশোরে প্রায় ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একদিনের বৃষ্টিপাতের হিসেবে যা গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যশোরের ৮ উপজেলা থেকে যে সংবাদ পাওয়া গেছে তা খুবই আতংকজনক। বিশেষ করে মনিরামপুর, কেশবপুর ও ঝিকরগাছা অঞ্চলের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এছাড়া অভয়নগর, চৌগাছা, শার্শা, বাঘারপাড়া ও সদরের অবস্থাও মারাত্মক আকার ধারন করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার শত শত চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের, ফসলি জমি ও পুকুর। অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ এখন পানি বন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এমুহুর্তে নিরুপন করা সম্ভব না হলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
পৌরএলাকাসহ কেশবপুরের নিন্মাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর, সুফলাকাটী ইউনিয়নের বেতীখোলা, আড়–য়া, কালীচরনপুর, ময়নাপুর, কাটাখালী, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাগরদাঁড়ী, বগা, বিষ্ণুপুর, মহাদেবপুর, মেহেরপুর, গোবিন্দপুর ও বরণডালি, ত্রিমোহিনী, কোমলপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বৃষ্টিতে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে হাজার-হাজার বিঘা জমির ফসল।
যশোরস্থ বিমানবাহিনীর মতিউর ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, বুধবার ভোর ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত যশোওে মোট ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বাধিক। দপ্তরটির কর্মকর্তারা জানান, ভোর থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে। দুপুর একটার দিকে যশোরে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বিকেলে বাতাসের গতি নেমে আসে ২০-২৫ কিলোমিটারে।

unnamed
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এটি জোরালো হতে থাকে মধ্যরাতের পর থেকে। বুধবার ভোর তিনটার দিক থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা অনেক রেবড়ে যায়। সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টিপাত বুধবার সারাদিনই বিরামহীনভাবে চলতে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক শেখ ইমদাদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিতে সবজি, রোপা আমনসহ অধিকাংশ ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। তবে এক দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে সবজির ক্ষতি হবে ভয়াবহ। তাই এখনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব না। উল্লেখ্য দেশের প্রায় ৬৫ ভাগ সবজি উৎপাদন হয় যশোর জেলায়।
কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, যশোরে চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধুমাত্র আগাম শিম আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমিতে। যশোরের বারীনগর, মানিকদিহি, হৈবতপুর, খাজুরা, তীরেরহাট, চুড়ামনকাঠি, শাহবাজপুর আমবটতলা, ও চৌগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ শিমের ফুলে ভওে গেছে। এসব ক্ষেত একদিনের বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, বৃষ্টিতে যশোর শহর ও শহরতলীর অধিকাংশ পুকুর, জলাশয় ও ঘের ভেসে গেছে।
তিনি বলেন, কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কয়েক শত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে, এটা নিশ্চিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top