সকল মেনু

নিরাপত্তা বাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

download অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে পুলিশের টহল বৃদ্ধি, আবাসিক এলাকায় বহিরাগত মুক্ত করা, বহিরাগত তাবলীগ জামাতকে মসজিদে অবস্থান করতে না দেয়া, ভবনগুলোর প্রবেশমুখে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি টিভি) বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ২১শে জুলাই নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত একটি সভায় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ, শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানে হামলা এবং কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের এই উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। ২০১৫ সালে গ্রন্থমেলার শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর দায় স্বীকার করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। পরে তদন্তে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের মাঠে বসে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। অভিজিৎ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে। একই বছর ৩১শে অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আজিজ মার্কেটে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়ের প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আরেফিন সিদ্দিক দীপনকে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের ছেলে। অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর পর দুই বার ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অসীম সরকারসহ বিশিষ্টজনদের হুমকি দেয়া হয়। আল-কায়েদা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ১৩ নামে এ হুমকি দেয়া হয়। এসব ঘটনার পর হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠন কর্তৃক মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার পর তাঁর জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষকের কক্ষের আশপাশে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা করছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সম্প্রতি দেশে জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়।

ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে প্রবেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পূর্ব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের ৪টি টিম সার্বক্ষণিক পাহারা দিলেও এবার আরো একটি টিম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি টিমটি পুরো ক্যাম্পাস চক্রাকারে ঘুরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে জানা যায়। বাকি ৪টি টিমের মধ্যে, একটি ভিসির বাংলোর সামনে, দোয়েল চত্বরে, টিএসসিতে এবং আরেকটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া দোয়েল চত্বর এলাকায় পুলিশ যানবাহনে তল্লাশি চালায়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ক্যাম্পাসে আগে পুলিশের ৪টি টিম কাজ করলেও এখন আরেকটি বাড়তি টিম কাজ করবে। এ ছাড়া নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একটি বাইকে এবং প্রত্যেকটি টিম থেকে বাইকে করে তাদের এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখবেন। তল্লাশির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা তল্লাশি চালায়। তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের কিছু পথ বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মসজিদগুলোতে বহিরাগত তাবলীগ জামাতের অবস্থান নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বহিরাগত কেউ যেন একাধিক দিন মসজিদে অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হল প্রভোস্টদের বলা হয়েছে। গত ২১শে জুলাই ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি হলগুলোর নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো হয়। হল প্রভোস্টদের উদ্দেশ্যে দেয়া এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত কতিপয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আমাদের সতর্ক থাকার জন্য আপনার হলের মসজিদে বর্তমান সময়ে বাহির থেকে আগত কোনো তাবলীগ জামাত যেন না থাকতে পারে এবং বহিরাগত কোনো ব্যক্তি যেন একাধিক দিন মসজিদে অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এ ঘোষণার পর থেকে মসজিদগুলোতে রাত ১২টার পর তালা লাগিয়ে দেয় হল প্রশাসন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাম্পাস ও আবাসিক এলাকার মসজিদগুলোতে তাবলীগ জামাত যাতে না থাকে তা নিষেধ করা হয়েছে।
আবাসিক এলাকাগুলোতে সাবলেট দিতেও নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ এ বিষয়ে বলেন, আবাসিক এলাকা গুলোতে যাদের বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের বাইরে বাসায় আর কেউ থাকে কিনা তা জানার জন্য সবার বায়োডাটা চাওয়া হয়েছে। যদি বহিরাগত কেউ থাকে তাহলে আমরা তা বুঝতে পারবো।
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিগত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পায় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে হিজবুত তাহরীরের এক সদস্যকে আটক করলে তার কাছ থেকে ওই সংগঠনের বেশ কয়েকজন কর্মীর নামের লিস্ট পাওয়া যায়। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী। তবে ওই লিস্টে তাদের ‘ডাকনাম’ ব্যবহার হওয়ায় সহজেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এক শিক্ষক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খোঁজ নিচ্ছেন। পরে তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আরো কয়েকজন শিক্ষক নজরদারিতে রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top