সকল মেনু

অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে ব্রিটেনের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

ব্রিটেন: অনেকটা পয়সা দিয়ে বাজি খেলার মতই অবস্থা। বুড়ো আঙুলের মাথায় চাপিয়ে শূন্যে ছুড়ে দিলেন, কিন্তু কোন পিঠ যে উঠবে তার কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ব্রিটেনের অর্থনীতি এখন প্রতিনিয়ত সেই পথেই হাটছে । ব্রেক্সিটের পর পরই পাউন্ডের দাম গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির মতন নেমে এলো। ৩০ বছরের ইতিহাসে ডলারের বিপরীতে সবচেয়ে কম দামে নেমে এলো পাউন্ড। সেই মন্দা কাটতে না কাটতেই শেয়ার আর রিয়েল এস্টেটের বাজারে দর পতন। ব্যাংকগুলো হা হুতাশ করছে ব্যাবসায় গতি নেই বলে। মোটের উপর বলা চলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটেনের অর্থনীতি এখন খাদের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে, অতল গহ্বরের মুখোমুখি। বছরের শেষ কটা মাসে এই সংকট থেকে বের হওয়া কিংবা আরো গভীর সংকটে পড়া, দুটোরই সম্ভাবনা রয়েছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ফিফটি ফিফটি চান্স। গণভোটের ১৮ মাসের মধ্যে দেশটির অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কতটুকু সেটা নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গবেষণা সংস্থা ‘এনআইইএসআর’(দি ন্যাশনাল ইনষ্টিউট অবচ ইকোনোমিক এন্ড স্যোসাল রিসার্চ)। সেখানেই এসব আশংকার কথা বলেছেন গবেষকরা। আবার প্রতিবেদনটিতে একথাও বলা হয়েছে, ব্রিটেনের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় খুব বেশি দিনের নাও হতে পারে। ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে গবেষনা সংস্থাটি। আগামী বছরের শেষের দিকে এই হার শতকরা ৩ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটা সল্পমেয়াদী সংকটও হতে পারে। মোটের উপর মুল্যস্ফীতির হার চলতি বছরে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ১ শতাংশ বাড়বে বলে মনে করছেন ‘এনআইইএসআর’ মুখপাত্র সিমোন কিরবি। গত ২৪ জুন শুক্রবার গণভোটে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। ব্রিটেনের সরকার ,আইএমএফ, ওইসিডি সহ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যৎবাণী উপেক্ষা করে ব্রিটেনের জনগণ এই রায় দেয়। জেনে কিংবা না জেনে এ ভোটে অংশ নেয়া নাগরিকরা অবশ্য নিজেদের ভুলটাও বুঝতে শুরু করে পরের সপ্তাহ থেকেই। ব্রেক্সিটের পর দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের বিপযর্য়ের মুখে পড়বে বলেই মনে করা হয়েছিল। আর ঘটেছেও তাই। সিমোন কিরবি বলেন,“ আমরা ধারণা করছি চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগ এবং ২০১৭ সালের পুরো সময় ধরে ব্রিটেনের অর্থনীতি ভালো রকমের মন্থর হয়ে যাবে। এমনকি আগামী ১৮ মাসে অর্থনৈতিক মন্দা আরো দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনাও থেকেই যাচ্ছে।” তার পরামর্শ হল এখন মুদ্রানীতিকে আরো সহজ করে আনা। সিমোন মনে করেন মুদ্রানীতির নির্ধারকদের এখন উচিত হবে চলমান মূল্যস্ফীতির প্রতি বিশেষ রকম নজর দেওয়া। এতে করে পরবর্তী মূল্যস্ফীতিকে মোকাবেলা করাটা সহজ হবে। অনেকটা একই সুরে অন্য একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ব্রিটেনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যবসায়ীরা আগামী তিন মাস ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কা করছে। ব্রিটেনের ব্যাবসায়ীদের সার্থ সংশ্লিষ্ট সংগঠন কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাষ্ট্রি (সিবিআই) এক জরিপে এই মত প্রকাশ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০০৯ সাল থেকে চলে আসা ব্রিটেনের ব্যবসায়িক সাফল্যে খানিকটা ভাটা পড়তে পারে। আর এই অনিশ্চয়তার জন্য তারাও ব্রেক্সিটের গণভোটকেই দায়ী করছেন। তবে তারা বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে বেশ আশবাদী। তাদের ভাষায় যতটা দেখাচ্ছে বাস্তব অবস্থাটা ততটা নাজুক নয়। প্রায় শ পাঁচেক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছেন তাদের প্রায় সবারই ব্যাবসা স্থিতিশীল। সিবিআইয়ের হর্তাকর্তাদের একজন রেইন নিউটন স্মিথ বলেন,“ ব্রিটেনের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পগুলো বলেছ তাদের উৎপাদনে ভাটা পড়েনি তেমন। বরং আগের চেয়ে তারা এখন আশাবাদী। উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে তাদের অনেককেই আগের তুলনায় বেশি সংখ্যায় কর্মচারী নিয়োগ করেছে এবং এখন তারা আশাবাদী যে আগামী প্রান্তিকে আরো বেশি ব্রিটেনে উৎপাদিত বিশ্বমানের পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। তবে এত কিছুর পরও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব যে নিশ্চিন্ত তারা সেটা বলতে পারছেন না জোর দিয়ে। বর্তমান মন্দায় ভারী যন্ত্রপাতির পেছনে পয়সা খরচ করতেও মন সায় দিচ্ছে না। বড় বিনিযোগের ব্যাপারে তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। আর এই শংকা আর সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দার জন্য সকলে মিলে দায়ি করছেন ব্রেক্সিটকেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top