সকল মেনু

চাঁদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, চরাঞ্চলের অবস্থা শোচনীয়

index নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর: জোয়ারের পানিতে চাঁদপুরের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বেড়েই চলছে মেঘনা-ডাকাতিয়ার পানি। বুধবার বিকেল ৬টায় ও সন্ধ্যা ৭টার জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার ৫৫ ও ৭৩ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৪.৭৩ সেমি এবং ভাটায় সর্বনিম্ন ৩.৮৩ সেমি। এ তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর নির্বাহী প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়। অস্বাভাবিক জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, জোয়ারে চাঁদপুর জেলার হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার প্রতিটি চর এলাকা তলিয়ে গিয়ে চরের শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। সেখানে রাস্তা ভেঙ্গে স্রোতের মত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চাঁদপুর শহর এলাকা নদী সংযুক্ত খাল-বিল ও ড্রেনগুলো দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে শহরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানির চাপে পুরাণবাজার এলাকার ২নং ওয়ার্ডস্থ পশ্চিম জাফরাবাদের রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। রশিদ আখন্দের বাড়ির সামনের সড়কের ১০ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে সেখান দিয়ে প্রবল বেগে ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। খবর পেয়ে পৌর প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী ক্ষতিগ্রস্ত স্থান দেখতে গিয়েছেন। পুরাণবাজার ঠোঁডা এলাকা দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে প্রবল স্রোতের কবলে পড়ে ডুবে গেছে একটি বালি বোঝাই বাল্কহেড। বুধবার সকাল পৌনে ১১টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। জাহাজের ৪ জন আরোহী সাঁতরে প্রাণ বাঁচায়। চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে জোয়ারের কারণে ফেরি চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ফেরিঘাট মসজিদের পেছন থেকে অনেকগুলো বালুর জিওব্যাগ নদীতে দেবে গেছে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে আমাদের সদর উপজেলার মমিনপুর, পশ্চিম সকদী, চাঁদপুর গ্রাম, হাজরা নানুপুর, মকিমপুর, নিজ গাছতলা, ইসলামপুর গাছতলা, হামানকর্দ্দি, শাহতলী, পাইকদী, ইচলী, ঢালির ঘাট, চরমোয়াশা মৈশাদীতে বন্যার পানি দেখা গেছে। এছাড়া চাঁদপুর শহর এলাকার উত্তর শ্রীরামদী পাইলট হাউজ, মাদ্রাসা রোড, কোড়ালিয়া চর, প্রফেসরপাড়া নদীর পাড়, বড়স্টেশন পাইলট হাউজ, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, বঙ্গবন্ধু সড়ক, বেগম মসজিদের সামনের সড়ক, পুরাণবাজার পূর্ব জাফরাবাদ, পশ্চিম জাফরাবাদ, মধ্য শ্রীরামদী, পূর্ব শ্রীরামদী, নিতাইগঞ্জ সড়ক, মক্কা মিল সড়ক, জাফরাবাদ মাদ্রাসা সড়কসহ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াত করতে দেখা যায়। এ সময় শহর ও গ্রামবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
১১নং ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ কাশেম খান, ইউপি সচিব ছালামত উল্লাহ শাহীন জানান, ইউনিয়নের জাফরাবাদ, সাখুয়া, পশ্চিমপাড় চর মুকন্দি, চরফতেজংপুর, প্রসন্নপুর, হনহর্দি, ইব্রাহিমপুর, খানেপুর, দড়িলামচর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাথঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোনো ত্রাণ সাহায্য এখন পর্যন্ত পায়নি। ঈদগাহ ফেরিঘাটের পূর্বকোণে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেখান থেকে ব্লক তলিয়ে যাচ্ছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, নদী ভাঙ্গন এবং বন্যার পানিতে তার ইউনিয়নের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। পরিবারগুলো উঁচু জায়গা খুঁজছে। অনেকে নৌকার উপর থাকছে। জেলা প্রশাসক, ইউএনওকে সাথে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী রাজরাজেশ্বর চরে গেছেন। সেখানে বানভাসি পরিবারগুলোর মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতিনিধিও ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন।
হানারচর ইউপি চেয়ারম্যান ছাত্তার রাঢ়ী জানান, হরিণা ও গোবিন্দিয়া গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দী। রাস্তা তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় সিআইপি বেড়িবাঁধের বাইরের গ্রামগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পুকুরের চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে। জাল দিয়েও মাছ রক্ষা করতে পারছে না। সাদী মৌলভী বাড়ির রাস্তা উপচে পানি গড়াচ্ছে। সেখানকার ফারুক মাঝি জানান, তার কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান জানিয়েছেন চাঁদপুরের সবগুলো বাঁধ ঠিক রয়েছে। মতলব উত্তর মোহনপুর এলাকার বিভিন্ন স্থান দিয়ে ২০/২৫ ফুট জায়াগার ব্লক দেবে গেছে। এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চিড়ারচরের কাছাকাছি বাংলা বাজার এলাকায় ২০/২৫ ফুট জায়গার বাঁধ বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটিও মেরামত করা হচ্ছে। হরিণার নদী ভাঙ্গন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উজান থেকে প্রচুর পানি আসায় পদ্মা ও মেঘনার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি আরও দুই-তিন দিন থাকার পর উন্নতি হবে। বাঁধ এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর-শরিয়তপুর ফেরি সার্ভিসের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন রুহান জানান, জোয়ারে ঘাটের পন্টুন র‌্যাম ডুবে যায়। এ কারণে তিন ঘণ্টা করে দিন-রাত ৬ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে। নদীতে প্রচন্ড স্রোতের দরুণ ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখার জন্য বিআইডাব্লিউটিসির ডিজিএম ও এজিএম দুই পাড়ের ঘাট পরিদর্শন করেছেন।
চাঁঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের দায়িত্বে থাকা পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান খান জানান, মেঘনার প্রবল পানি আর স্রোতের চাপ শহর রক্ষা বাঁধের উপর থাকলেও আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা যায় নি। মঙ্গলবার সকালে বড় স্টেশন যমুনা রোডের বকুলতলা গাছের গোড়া থেকে প্রচন্ড পানির স্রোতে মাটি সরে গিয়ে কিছু ব্লক দেবে যায়। তাতে ৭/৮ ফুট জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বালু বস্তা ফেলে জায়গাটি মেরামত করা হয়েছে। একেএম তোফায়েল আহমেদ ও ফখরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ তারা ৩ জন পাউবোর এসও শহর রক্ষা বাঁধ মনিটরিং করছেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, রাজরাজেশ্বরে ৫১টি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল ও ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ঢেউটিনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বুধবার মতলব উত্তর এলাকা পরিদর্শন করেন। হাইমচর থেকে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা পাবার পর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন জানান, সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা সমূহের ইউএনওদের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top