সকল মেনু

শোকাবহ আগস্ট মাস শুরু

august_24448হটনিউজ২৪বিডি.কম : আজ সোমবার থেকে শুরু হলো জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় ও শোকাবহ আগস্ট মাস। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ওই কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এ ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিনী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। একইভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এ ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী, আওয়ামী লীগের সে সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

ইমিহাস থেকে জানা যায়, সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে। আর ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।

দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ বলা হয়েছিল ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের রায় কার্যকর করে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। একইভাবে বাঙালির আত্মঘাতী চরিত্রের অপবাদেরও অবসান ঘটেছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকার মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পত্রিকাটি সেদিন সুদূরপ্রসারী মন্তব্য করেছিল। দেশের মানুষ এখন অনুধাবন করতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।

প্রতেক বছরের মত এবারও ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর মাসব্যাপি কর্মসূচি। শোকের মাসের প্রথম দিন গত মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে আলোর মিছিলের মধ্যদিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছে। মিছিলটি ধানমন্ডি ৩২নং সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে যাত্রা করে।

এদিকে আজ সোমবার সকালে কৃষকলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী। এ মাসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন পালন, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস স্ম,রণ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবাষিকী পালন। এছাড়া শোক দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সরকারি বেসরকানি ভবনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনির্মিত করন এবং কালো পতাকা উত্তোলন। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও মন্দির ও গীর্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে এবং দু:স্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে সরকারী কর্মসূচী পালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই কর্মসূচীতে যোগদান করবেন। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল জাতির পিতার মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে।এ ছাড়াও এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ আগষ্ট সকাল ১০টায় ঘটিকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে (রাউন্ড টেবিল হল) ১৫ আগষ্টের প্রতি বিপ্লব ও পরবর্তি বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা। ১২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা। এছাড়াও ১৫ আগষ্ট সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন ও দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরন ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top