সকল মেনু

ইলিয়াছ ও মজনু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

indexখুলনা ও বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর পর এবার আত্মসমর্পণ করল ইলিয়াছ ও মজনু বাহিনী।
এ দুই বাহিনীর প্রধান ইলিয়াছ গাজী (২৭) ও মজনু গাজী (৪৩) তাদের ৯জন সহযোগীসহ এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিএফডিসি জেটিতে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে হেলিকপ্টারে মোংলায় আসেন। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে অস্ত্র জমা দিয়ে বনদস্যু মজনু বাহিনী প্রধানসহ ৯ সদস্য এবং ইলিয়াস বাহিনীর প্রধানসহ ২ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণকৃত মজনু বাহিনীর সদস্যরা হলেন রবিউল ইসলাম (২৮), মো. ইসমাইল গাজী (৫০), মো. এনামুল সরদার (২৭), মো. ইদ্রিস আলী (২৮), মো. আবুল কালাম আজাদ (২০), মো. মজনু শেখ (৪৩), মো. জাহাঙ্গীর মোড়ল (২২) ও মো. বাবুল হাসান (২৪) এবং ইলিয়াছ বাহিনীর সদস্য নাসির উদ্দিন (৩৩)।

তারা ২৫টি অস্ত্র এবং এক হাজার ২০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১১টি বিদেশি একনলা বন্দুক, তিনটি বিদেশি দোনালা বন্দুক, দুটি পয়েন্ট টু টু বোর বিদেশি এয়ার রাইফেল, তিনটি ওয়ান শুটারগান, পাঁচটি সার্টারগান এবং একটি রিভলবার।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বনদস্যুরা যে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক, তারা সেটি বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করেছে। অন্য দস্যুরা এখনও ভুল পথে পরিচালিত হয়ে ভয়ংকর জীবন-যাপন করছে। তারা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসলে তাদের বিরুদ্ধেও র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও নৌবাহিনী আরও কঠোর ও ব্যাপক অভিযান চালাবে।’

তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের শান্তি-শৃংখলা এবং সাধারণ মানুষ যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারে- এ জন্য যা কিছু করা দারকার তা করতে সরকার বদ্ধ পরিকর।’

এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনের দস্যুদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স দেখাতে বলেছেন। এ জন্য সুন্দরবনের সম্পদ, জেলেদের জীবন এবং পর্যকটদের জন্য বনকে নিরাপদ রাখতে সব ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সুন্দরবনের অভিযানকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ইতালি থেকে কোস্টগার্ডের জন্য চারটি জাহাজ আনা হচ্ছে। র‌্যাবের আরো দুটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে, যা শিগগির বাস্তবায়ন হবে। এ ছাড়া নৌ-পুলিশের জনবলও বৃদ্ধি করা হবে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে মৎস্যজীবীদের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে এনে তাদের নির্বিঘ্নে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি এবং দস্যুদের সামাজিক অপতৎপরতা দমন করা। দস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে সরকার তাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা করবে।’

সুন্দরবন এলাকাকে বনদস্যুদের অভয়ারণ্য হতে দেওয়া হবে না এবং এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও খুঁজে বের করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনার রেঞ্জ ডিআইজি এস.এম মনির-উজ-জামান, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা, র‌্যাব হেড কোয়াটারের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম বলেন, ‘ইলিয়াছ ও মজনু বাহিনীর আরো ২৬জন সদস্য বাইরে সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনে এখনো ৬টি দস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে সাগর বাহিনীর আত্মসমর্পণের পক্রিয়া চলছে। গভীর সমুদ্রে নৌবাহিনীর সহযোগিতায় দস্যুদমনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনেও চলমান অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

অপর বনদস্যু রাজু বাহিনীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাহিনী প্রধান রাজু ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তবে তার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দলে যোগ দিয়ে দস্যুতা করছে। তাদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top