সকল মেনু

ঝিনাইদহে নিবরাস ছদ্মনামে ছিলেন!

nirbas1468506655 ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলাকারী জঙ্গী নিবরাস ইসলাম পরিচয় গোপন করে ‘সাঈদ’ নামে ঝিনাইদহ শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, হামদহ সোনালী পাড়ার কমিশনার নজরুল ইসলাম সড়কের ২১১ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। এ নিয়ে ঝিনাইদহের প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নিবরাস ইসলামের সাথে মোস্তফাসহ আরো ৭/৮ যুবক ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সোনালীপাড়া মসজিদের ইমাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া বিভাগের ছাত্র রোকনুজ্জামন তাদেরকে এই বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেন। নিবরাস ওরফে সাঈদ গত ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় চার মাস ওই ভাড়া বাড়িতে ছিলেন।

বাড়ির মালিক সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সার্জেন্ট কওছার আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস নাহার জানান,  তিনি নিবরাসকে সাঈদ বলে জানতেন। গত সোমবার বিলকিস একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধান দলের কাছে নিবরাস ইসলামের ছবি দেখে কথিত সাঈদ বলে শনাক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহের একদল সাংবাদিক কওছার আলী মোল্লার বাড়িতে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিলকিস বলেন, ‘গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন জঙ্গী নিবরাস ওরফে সাঈদ কি না জানিনা।’ কারণ হিসাবে তিনি টিভি দেখেন না বলে জানান। তবে গত সোমবার ঢাকা থেকে আসা টিভি রিপোর্টার যে ছবি দেখিয়েছেন সেই ছবির সঙ্গে তার বাড়ি ভাড়া নেওয়া সাইদের চেহারার মিল রয়েছে বলে তিনি জানান ।

ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার বাসিন্দা স্থানীয় সরকার কেসি বিশ্ববিদালয় কলেজের ছাত্র নওর জামিল বর্ষন জানান, সাঈদ তাদের পাড়ায় চার মাসের বেশি সময় ভাড়া ছিল। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হবেন বলে তাদের কাছে জানান। এ সময় সাঈদ তাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। তিনি অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলতে পারতেন। এ জন্য সবাই তাকে পছন্দ করতেন।

বর্ষন আরো জানান, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গীদের ছবি প্রকাশের পর তারাা তাজ্জব হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে খেলা করা সেই সাঈদই নিবরাস বলে তারা ছবি দেখে জানতে পারেন।

এদিকে জঙ্গী নিবরাসকে সহায়তার দায়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ঝিনাইদহ থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

এরা হলেন- ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার ঠান্ডু মোল্লার ছেলে কাওছার আলী মোল্লা, তার দুই ছেলে ঝিনাইদহ কলেজের ছাত্র বিনছার আলী, নারিকেলবাড়িয়া কলেজের ছাত্র বেনজির আলী, হামদহ সোনালীপাড়া মসজিদের ইমাম যশোরের ঝিকরগাছার নায়রা গ্রামের রোকনুজ্জামান ও শারশিনা মাদ্রাসার ছাত্র আদর্শপাড়া কচাতলার মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের কিশোর ছেলে হাফেজ আব্দুর রব।

গত ৬ জুলাই সন্ধ্যার সময় এদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করেন বিলকিস। তিনি আরো দাবি করেন, ঈদের দিন (৭ জুলাই) তাকেও ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় (৬ জুলাই) একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তার স্বামী, দুই ছেলে, মসজিদের ইমাম ও তারাবির নামাজের হাফেজকে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার শেখ জানান, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তিনি বলেন, এদের কে আটক করেছে, কেন করেছে বলতে পারছি না।

তবে ঝিনাইদহ সদর থানার বিদায়ী ওসি হাসান হাফিজুর রহমান ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সন্দেহভাজন এক জঙ্গী ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

বুধবার বিকাল থেকে একটি বেসকরী টিভি চ্যানেলে ঝিনাইদহ থেকে পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গী আটকের খবর প্রচার করে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় একাধিক সাংবাদিক সরেজমিন তদন্ত করেন।

সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। পাশাপাশি সচেতন মানুষের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে সোনালী পাড়ার সাবেক সেনা সদস্যের ভাড়া বাড়ির ওই সাঈদই যদি নিবরাস হয় তবে তিনি ঝিনাইদহ থাকা অবস্থায় জেলায় কিছু আলোচিত হত্যা সংঘটিত হয়।

এদের মধ্যে রয়েছেন- হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই পুরোহিতসহ রয়েছে খ্রিষ্টান হোমিও চিকিৎসক ও শিয়া মতবাদের এক ব্যক্তি। এই চার হত্যাকান্ডের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রচার করে। যা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সাথে মিল রয়েছে।

গত ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী খুন হন। নিহত আনন্দ গোপালের বাড়ি ও নিবরাস ইসলাম ওরফে সাঈদ যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক কওছার আলী মোল্লার বাড়ি একই গ্রাম বাগডাঙ্গা করোতিপাড়ায়। এ নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মাঝে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকর মন্তব্য র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর ফাকি দিয়ে ঝিনাইদহ শহরকে নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলে সন্দেহ ভাজন জঙ্গীরা। এই অঞ্চলের সাহসী ও উগ্র মনোভাবের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেদের জঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলে।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রিষ্টান হোমিও চিকিৎসক সমির বিশ্বাস ওরফে সমির খাজা ও ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া মতবাদের হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ গত ১ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে স্থানীয় রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top