সকল মেনু

মূল্য বৃদ্ধির সংবাদ ফাঁস: ৩দিনে বড়পুকুরিয়ার কয়লার মজুদ উজাড়

indexরাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর, দিনাজপুর : পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মৌসুমি ক্রেতাদের প্রচন্ড চাপে ৩ দিনে খনির বিক্রয়যোগ্য কয়লার মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হলেও মোটা অংকের লাভের হিসাব গুনেছেন কতিপয় মৌসুমি ভূঁইফোঁড় কয়লা ব্যবসায়ী ও স্বল্পসংখ্যক ইট ভাটা মালিক। বর্তমানে খনি কোল ইয়ার্ডে পিডিবির কাছে বিক্রির জন্য মজুদ ৬২ হাজার মে.টন কয়লা ছাড়া বিক্রয়যোগ্য এক খন্ড কয়লারও মজুদ নেই।
খনি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে ১২০৫ ফেজে’র কয়লা মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ও ১২১৪ নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রস্তুতি কাজের জন্য বড়পুকুরিয়ায় কয়লার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এসময় খনি ইয়ার্ডে প্রায় ৩ লাখ মে. টন কয়লা মজুদ ছিল যা ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশী। এদিকে, ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রতি টন কয়লা ১৩ হাজার ৭শ’ টাকা বিক্রি হলেও আমদানী করা প্রতি টন কয়লার দাম এর চেয়ে অনেক কম (৬ থেকে ৮ হাজার টাকা) হওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লার বিক্রি বাড়ানোর লক্ষ্যে কয়েক দফা দাম কমিয়ে ৮ হাজার ৩০৫ টাকা (ভ্যাটসহ) নির্দ্ধারন করা হয়। এদিকে বর্ষা মৌসুমে (মে, জুন ও জুলাই) কয়লার চাহিদা কম থাকায় এসময় আমদানীকারকরাও কয়লা আমদানী বন্ধ রাখে। তাই কয়লা বিক্রি বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনি কর্তৃপক্ষ রিডাকশন রেটে কয়লা বিক্রি অব্যাহত রাখেন। বর্ষার মৌসুম শেষে পূর্বের (৯ হাজার ৩০৫ টাকা) দরে পুনরায় কয়লা বিক্রি করা হবে। এ খবর প্রশাসনিক মহল থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে বিশেষ করে ১০, ১১ ও ১২ জুলাই খনি কার্যালয়ে মৌসুমি কয়লা ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী মহল ও ইটভাটা মালিকদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ কয়লা মৌসুমি ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা ৩ দিনে ৫০ হাজার ৫০৫ মে.টন কয়লা হাতিয়ে নেন। এতে সারাদেশে ও উত্তরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক ইটভাটা মালিক কয়লা না পেয়ে ফিরে যান। ফুলবাড়ী শহর ও বড়পুকুরিয়া খনি এলাকার সোনালী, উত্তরা, জনতা, পুবালী ও অগ্রণী ব্যাংক শাখায় গত ৩ দিনে ৫০ হাজার ৫০৫ মে,টন কয়লার বিপরীতে ৪১ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৫ টাকা জমা দিয়ে স্থানীয় ৭৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কয়লাগুলো কিনে নেয়। পরবর্তী উৎপাদন মৌসুমে কয়লার মূল্যবৃদ্ধির সংবাদ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকার প্রায় ৫ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো বলে স্থানীয় ইটভাটা মালিকেরা জানান।
খনির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ফে’জ পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকলেও আগামী ২৫ জুলাই পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। হঠাৎ কয়লা কেনার হিড়িক পড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কয়লার চাহিদা কম থাকায় কয়লা বিক্রি কমে যায়। এসময় সাধারন নিয়মে রিডাকশন মূল্যে কয়লা বিক্রি করা হয়ে থাকে। অক্টোবরে মৌসুম শুরু হলে পুনরায় পূর্বের মূল্যে কয়লা বিক্রি করা হবে তিনি উলে¬খ করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক খনির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গতকাল সারাদিন খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে কয়লা কিনতে আসা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হৈচৈ ও ভীড় করতে দেখা যায়।
এব্যাপারে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। খনির একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি পেট্টোবাংলার পরিচালক পদে তাঁর পদোন্নতি হওয়ায় আজ বুধবার বিকেলে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে খনি ত্যাগ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top