সকল মেনু

বেনাপোলে আকাশের নিচে আটকে থাকা হাজার হাজার পাসপোর্ট যাত্রী

indexবেনাপোল থেকে ফিরে যশোর প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহাব মুকুল:  ঈদের পর বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে কাস্টমস ও পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক অনৈতিকভাবে জোরপূর্বক অর্থ আদায় অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নসহ সোহার্দ সম্প্রতি ও ব্যাবসা বানিজ্য বৃদ্ধির লক্ষে ঈদ প্যাকেজে ৬০ হাজার বাংলাদেশীকে ভিসা দিয়েছেন-ভারতীয় হাইকামিশন। এ উপলক্ষে প্রায় ৫৪ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে গেছে। ভারত যাবার সময় বেশিরভাগ পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে এক শ্রেণীর কাস্টমস ও পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোর পূর্বক সর্বনিন্ম ৫ শত টাকা করে আদায় করেছে। এখনও ঐ পাসপোর্ট যাত্রীরা ফিরতে শুরু করেছে।  এই সুযোগে আবার ঐ সকল পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। একই অবস্থা বেনাপোলের ওপার পেট্রাপোলেও। ভারতীয় হাইকমিশন ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি না করে ৬০ হাজার ভিসা দেওয়ায় এ অব্যবস্থা প্রকট আকার ধারন করেছে।
কাস্টমস ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছে ঈদের আগে ও পরে এরকম একটু  হবেই। ওসব লিখেছেন কোন লাভ হয়নি। কারন কাস্টমস কালেক্টর ও পুলিশ সুপারসহ শ্রেণীমতো সবাইকে এই টাকার ভাগ দিয়েছি, আরও দিতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,  বৃষ্টি ও রোদ্রে খোলা আকাশের নিচে ভারত ফেরা কয়েক হাজার যাত্রী অসহায়ভাবে আটকা পড়ে রয়েছে। আটকা পড়ার এই অসহায়ত্বের  সুযোগকে পুঁজি করে অর্থ বানিজ্যো হচ্ছে নির্বিঘ্নে। গতকালও বেনাপোলে পাসপোর্ট যাত্রীদের ভয়াবহ ভিড় ছিলো লক্ষনিয়। কোন সময় বৃষ্টি, আবার কোন সময় প্রচন্ড রোদে খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার নারী শিশু ও পুরুষ। অর্থ আদায়ের জন্য পূর্বের মতো ধীর গতিতে পাসপোর্ট এন্ট্রী করছে কাস্টমস ও পুলিশ। ফলে কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। সৃষ্টি হচ্ছে কথা কাটাকাটি, যা অপ্রত্যাশিত ঘটনার দিকে মোড় নিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ শুনবার বা নিরশনের কোন কর্মকর্তাকে কেউ পাচ্ছেনা। কাস্টম সুপার উত্তম ঐ অনৈতিক কাজের নের্তৃত্ব দিয়েছেন। ইতিপূর্বে কাস্টমস সুপার উত্তম এর অপকর্মের বিষয়ে দৈনিক কল্যাণ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও বিশেষ রফায় রক্ষা পেয়েছেন বলে কাস্টমস এর একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীরা-ঘন্টার পর ঘন্টা চেকপোষ্টে আটকে থাকায় প্রচন্ড গরমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেক যাত্রী ঘন্টার পর ঘন্টা গাছের তলে শুয়ে বসে কাটাচ্ছেন সময়। আবার গুড়িগুড়ি ও মাঝারী বৃষ্টিতেও ভিজে অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে অনেকে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা যাত্রীরা বলেন অনেকবার গেছেন ভারতে এভাবে দুর্ভোগে পড়েননি কখনও। দীর্ঘ লাইন সহ কাস্টমস ও পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিকতার কারনে অনেক যাত্রী পড়ছেন বিপাকে।
দেশের সর্ব বৃহৎ আন্তর্জাতিক স্থলন্দর ও চেকপোষ্ট বেনাপোল থেকে কলিকাতার দুরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে কম খরচে বেনাপোল পেট্টাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে যাওয়া যায় কলিকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। প্রতিদিন স্থল পথে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পাসপোর্ট যাত্রী গমনাগমন করে। তবে ঈদের আগে ও পরে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার কয়েকগুন বেড়ে যায়। শুক্র ও শনিবার বার ছিল রেকর্ড পরিমান যাত্রীর চাপ-তবে ভারতীয় হাইকমিশন সহ দু দেশের কর্তৃপক্ষ ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি না করে ৬০ হাজার ভিসা দেওয়ায় বেড়েছে যাত্রীর চাপ-এমনটাই জানান যাত্রীরা। জনবল বৃদ্ধি সহ যাত্রী ছাউনির দাবী জানান এসব ভুক্তভোগী যাত্রীরা। যাত্রীদের গমনাগমন সহজ করতে ও যাত্রী সেবায় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা করতে দেখা গেছে দিনভর।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই পাঁচ হাজার ৭৭ জন, ২ জুলাই ছয় হাজার ৫৫২ জন, ৩ জুলাই পাঁচ হাজার ৮২ জন, ৪ জুলাই চার হাজার ৯২২ জন, ৫ জুলাই চার হাজার ৫১৪ জন, ৬ জুলাই চার হাজার ৫৫৭ জন, ৭ জুলাই তিন হাজার ৮৪৭ জন, ৮ জুলাই তিন হাজার ২০৪ জন এবং ৯ জুলাই আট হাজার ১০২ জন যাত্রী বেনাপোল দিয়ে পারাপার হয়েছেন। রোববার দুপুর পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৫ জন যাত্রী পারাপার হয়েছেন বলে জানান চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক জিয়াউল হক জিয়া।

বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ওসি ইকবাল মাহমুদ বলেন, পাসপোর্ট যাত্রীদের অভিযোগ অতটা সত্য নয়। ইমিগ্রেশ ও কাস্টমের কাজ ধীর গতির বিয়য়টি তিনি স্বীকার কওে রেগে গিয়ে বলেছেন, আমি আর কত সামাল দেবো। এ বিষয়ে কাস্টমস কালেক্টর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাসপোট যাত্রীরা বলেছেন, এক্ষুনি কাস্টমস কালেক্টর ও পুলিশ সুপার দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বাদবাকিরা উপকৃত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top