সকল মেনু

ভোলার চরফ্যাশন হাসপাতাল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা

index এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ভবনটি বিগত বছর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পরিত্যক্ত ঘোষণার পর রোগীদের আবাসিক সংকট চরম আকার ধারণ করার ফলে ইনডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এ সমস্যা বিগত ১ বছর যাবৎ হওয়ার কারণে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম দূর্ভোগের মধ্যেও জীবন বাঁজি রেখে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট চরফ্যাশন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পুরাতন  ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হলেও মেরামত ব্যাতীত ভবনের পরিবর্তন ঘটেনি। পুরাতন ভবনে শিশু কর্ণার এবং নারী ওয়ার্ডের ২৭টি শয্যার পাশাপাশি বর্ধিত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ২টি শয্যা ছিল। এছাড়া পরিত্যক্ত এই ভবনের নিচেই প্রশাসনিক সব কর্মকান্ড চলে আসছে। পুরাতন ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে শিশু কর্ণার, নারী ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীদের জায়গা হয়েছে বারান্দা আর সিড়ির নিচে। পলেস্তার খসে একের পর এক দূর্ঘটনার পর গত বছর আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের আশ্রয় হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে নবজাতক, শিশু, নারী আর পুরুষ রোগী এবং স্বজনদের ভীরে গিজগিজ করছে হাসপাতাল করিডোর। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব আর দর্শনার্থীদের পদচারনায় অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি যে কোন সময় মাথার উপর ছাদ ধ্বসে পড়ার আশংকা নিয়েই চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছে রোগী, স্বজন আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার সকালে সরজমিন পরিদর্শণ কালে দেখা গেছে, বারান্দা আর সিঁড়ির নিচে এখানে সেখানে বিভিন্ন বসয়ী রোগীরা সারিসারি রোগীরা বিছানা পেতে শুয়ে-বসে আছে। নারী-পুরুষ ছাড়াও শিশু ও নবজাতকরাও আছেন যত্রতত্র শয্যা পেতে থাকা রোগীদের কাতারে। নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস। বৃষ্টির পানি যেমন রোগীদের বিছানাপত্র ভিজিয়ে দিচ্ছে, রোদের উত্তাপও বাড়তি কষ্টের উদ্রেগ করছে। সিঁড়ি আর বারান্দা ধরে চলাচলকারী দর্শনার্থী আর স্বজনদের আসা যাওয়ায় রোগীর শয্যা আর দর্শনার্থীদের ভীর একাকার হয়ে আছে। ছাদ আর ভীমের ফাটল দিনে দিনে বেড়েছে। সিলিংয়ের ছাদ ভেঙ্গে রড বেড়িয়ে আসছে। পলেস্তারের বড় বড় টুকরো খসে পড়ে আহত হয়েছে রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মরত কর্মচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ৭ লাখ মানুষের পাশাপাশি নিকটতম দূরত্বের কারণে প্রতিবেশী উপজেলা লালমোহন, মনপুরা এবং পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সীমান্ত গ্রামের রোগীরাও এখানে ভীর করছে। ফলে বর্ধিত রোগী সামাল দিতে নির্ধারিত ৫০ শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা আছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে রোগীদের সীমাহীন দূর্ভোগে হাসপাতাল জুড়ে বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে।
চর মানিকা থেকে আসা ইনডোর রোগী গর্ভবতী স্বপ্না বেগমের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, মহিলা ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং বেড সংখ্যাও কম হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। মাহিনুর বেগম জানান, আমরা বেডও পাইনি তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায় বিছানা পেতে নিয়েছি।
চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. মাহাবুব কবির জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও পৌর সভার ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট প্রকট। নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া এবং সুইপার সংকট সীমাহীন। চিকিৎসক শূন্যতা সহনীয় পর্যায় থাকলেও একজন চিকিৎসকের অভাবে এক বছরের বেশী সময় ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী  মায়েদের সিজার অপারেশন বন্ধ রয়েছে। সরকারি ঔষুধ সরবরাহও জনসংখ্যা অনুপাতে একেবারেই নগন্য। চলমান এসব সমস্যা এখন গৌন হলেও মুখ্য বিষয় হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবন। খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যে এই সংকট দূর হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। ফলে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
সহকারী সার্জন সামসুল আরেফীন রানা জানান, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে প্রতিদিন ৫শ’-৬শ’ রোগী সেবা নিচ্ছেন এবং দৈনিক গড়ে নূন্যতম ৮০ জন রোগী ভর্তি অবস্থায় হাসপাতালে অবস্থান করছেন। কখনো কখনো ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১শ’ সীমা অতিক্রম করে। বিশাল সংখ্যক রোগী, দর্শনার্থী আর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুর হুমকি মাথার উপর রেখেই ঝুঁকিপূর্ণ ছাদের নিচে অবস্থান করতে হচ্ছে। মাথায় আছড়ে পড়ছে ছাদ-এমন আশংকা মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য ১১ কোটি ৭৫ লাখ  টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। দ্রত ভবনটি নির্মাণ করা না হলে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় চরম সংকট দেখাদিতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top