সকল মেনু

রমজানে ‘ইফতারের’ ফজিলত

ramadan1467176063-290x181হটনিউজ২৪বিডি.কম : আজ বুধবার মাহে রমজানের ২৩ রোজা। ইতিপূর্বে আমরা সাহরির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ ইফতারে করণীয় ও এর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব।

রোজার অপরিহার্য একটি অংশ ইফতার। এটা সাহরি খাওয়ার মতোই এবাদত এবং রাসুল (সা.) এর সুন্নত। সূর্যাস্তের পরপরই দ্রুত ইফতার করতে হবে। খেজুর, খোরমা ও পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।

হাদিসে আছে, হযরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রোজায় ইফতার করে, সে যেন খেজুর কিংবা খোরমা দিয়ে ইফতার করে। কারণ, তা হচ্ছে বরকত। আর তা না হলে পানি দিয়ে করবে, তা পবিত্রকারী।’ (জামে তিরমিজি, ২য় খণ্ড, হাদিস- ৬৯৫)।

কখন ইফতার করতে হবে সে প্রসঙ্গে হাদিসে রয়েছে, আমিরুল মুমেনিন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন যখন রাত্র সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে, দিনও এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সায়িম তথা রোজাদার ইফতার করবে। (সহিহ বুখারী)।

হাদিস মতে, যখন সূর্যাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায় তখন ইফতার করে নিতে হবে। তখন আর আপনাকে সাইরেন কিংবা আযানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

ইফতারির সময় হওয়ার আগ থেকে ইফতার নিয়ে বসে থাকা এবাদত। কিন্তু ইফতারির সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করে নিতে হবে। আমাদের অনেকেই ইফতারির সময় হওয়ার পরও অহেতুক বিলম্ব করে থাকেন। মূলত: বিলম্বে ইফতার করা উচিত নয়। এতে মাকরূহ হবে বরং দ্রুত ইফতার করতে রাসুল (সা.) এর নির্দেশনা রয়েছে।

হযরত সাহল ইবন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, লোকেরা যতদিন যাবত ওয়াক্ত হওয়া মাত্রই ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। (সহিহ বুখারী)।

ইফতার তাড়াতাড়ি করা রাসুলের কাছে প্রিয় এমনকি স্বয়ং আল্লাহর কাছেও প্রিয়।
হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে সেই বেশি প্রিয় যে ইফতার তাড়াতাড়ি করে। (তিরমিজি, ২য় খণ্ড, হাদিস-৭০০)।

এই হাদিসে ইফতারে তাড়াতাড়ি মানে হচ্ছে, ইফতারের সময় হওয়ার পরপরই ইফতার দ্রুত করা। ইফতারের সময় হওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি করে খেয়ে ফেলা নয়।

রমজানের ইফতার রোজাদারদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নেয়ামত। হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি বড় খুশি রয়েছে। একটি প্রভুর সাক্ষাত আরেকটি ইফতারের সময়। (সহিহ বুখারি)।
প্রকৃত অর্থে প্রকৃত রোজাদার ইফতারের সময় দিনের সব ক্লান্তি ভুলে সওয়াবের উদ্দেশ্যে খুশীমনেই ইফতার করেন।

ইফতারের আরেকটি বড় ফজিলত হচ্ছে এসময় রোজাদারের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তখন আপনি খালেছ নিয়তে যা চাইবেন তাই প্রভুর দরবারে কবুল হবে। রোজার ইফতার বান্দাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় এমন একটি দোয়া থাকে যা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খণ্ড, হাদিস- ২৯)।

আরেক হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। এক. রোজাদারের (ইফতারের সময়), দুই. ন্যায় বিচারক বাদশাহর এবং তিন. মজলুমের। এ তিনজনের দোয়া আল্লাহ পাক মেঘ থেকেও অনেক উঁচুতে তুলে নেন এবং আসমানের দরজা তাদের জন্য খুলে দেন।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, আমি আমার সম্মানের শপথ করছি, আমি অবশ্যই তোমায় (দোয়াকারী) সাহায্য করবো, যদিও কিছু দেরিতে হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, হাদিস- ১৭৫২)।

রোজাদারকে ইফতার করানোও সওয়াব। হাদিসে আছে, হযরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য কিংবা পানি দ্বারা কোনো মুসলমানকে রোজার ইফতার করালো, ফেরেশতাগণ মাহে রমজানের এসময়ে তার জন্য ইস্তিগফার করেন। আর হযরত জিবরাইল (আ.) শবে কদরে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। (তাবরানী আল মু’জামুল কবীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদিস-৬১৬২)।

আরেক হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে পানি পান করাবে আল্লাহ তা’আলা তাকে পান করাবেন। সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত কখনও পিপাসার্ত হবে না। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড, হাদিস- ২৩৬৫৩)।

আরেক হাদিসে আছে, হযরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।

এভাবে ইফতার করানোর সওয়াব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
ইফতারের আগে কিংবা পরে দোয়া পড়া বাঞ্ছনীয়। দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি লাকা ছুমতু ওয়া বেকা আ’মানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)।

আল্লাহ আমাদের সঠিক সময়ে ইফতার করা এবং অন্য মুসলমানদের ইফতার করানোর তওফিক দিন… আমীন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top