সকল মেনু

মূল্য তালিকা নেই, নেই কোন অভিযান

indexরাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। বস্ত্র বিপণিগুলোতে মালিক ও কর্মচারীদের ব্যস্ততা এতই বেড়ে গেছে যে, তারা কোন ফুরসত পাচ্ছেন না। হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতা সামলাতে। রমযানের প্রথম দিন থেকে ১৫ রমযান পর্যন্ত ঈদের বাজার তেমন জমে না উঠলেও ১৭ রমযানের পর থেকে ঈদের বাজারে কেনা কাটার ধুম পড়েছে। সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে তৈরী পোশাক, জুতা-সেন্ডেল, কসমেটিক সামগ্রীর দোকানগুলোত। তৈরী পোশাকের দাম এত বেশী নেয়া হচ্ছে যে, সেখানে ছিন্নমুল ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা তাদের সাধ্যের মধ্যে কোন কিছু কিনতে পারছেননা। বাধ্য হয়ে তারা ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছুটছেন।
পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের তাজনগর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দরিদ্র গৃহবধু হাসনা বেগম জানায়, স্বামী নেই, দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ছেলে মেয়েদের জন্য ঈদের জামা কাপড় কিনতে গিয়ে দাম বেশী হওয়ায় বাজার থেকে ঘুরে এসেছেন। তিনি বলেন, টাকার অভাবে হয়তো ছেলে মেয়ের জন্য এবার ঈদের জামা কাপড় কেনা হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোন বস্ত্রে নির্দ্ধারিত মূল্য লেখা নেই। বিক্রেতা যেমন খুশি তেমন দাম চেয়ে বসেন। ক্রেতার সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও ছেলে-মেয়েদের কাপড় কিনতে পারা যাচ্ছেনা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ব্যবসা নয়, ক্রেতার গলা কাটার জন্যই তারা ফাঁদ পেতে বসে আছেন। প্রতি বস্ত্রে সর্বাধিক শতকরা ২৫ ভাগ মুনাফা রাখা হলেও ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকত সবকিছু। তিনি আফসোস করে বলেন, আমাদের মত অসহায়, গরীব মানুষদের কথা ভাববার (ভাবার) সময় কার আছে?
সরকারী চাকুরে ক্রেতা মাহবুব আলী বলেন, এসব বস্ত্র দোকানদারের বিরুদ্ধে কখনও কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। লাগামহীনভাবে এরা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ঈদের বাজারে সবচেয়ে বেশী প্রতারণার শিকার হচ্ছে। মাহবুব আলীর মতে অধিকাংশ মানুষ বছরে মাত্র একবার কাপড়ের বাজারে যায়। আর সেটি হলো ঈদকে সামনে রেখে। তাই তাদের কাপড়ের দাম সম্পর্কে ধারণা থাকে খুব কম। এই সুযোগটি নেয় ব্যবসায়ীরা। তারা শিকার ধরার জন্য ওঁৎ পেতে থাকেন। মাছের বাজার ও কাঁচাবাজারে দ্রব্যমূল্য টানানোর নির্দেশ থাকলেও এসব কাপড়ের দোকানে কোনটিতে মূল্য তালিকা নেই। তালিকা টানানোর জন্য তথা যৌক্তিক মূল্যে কাপড় বিক্রির কোন নির্দেশও নেই। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ক্রয় মূল্যের ৫ থেকে ১০ গুণ অধিকদামে থ্রি পিস, লেহেঙ্গা এবং শিশুদের সব ধরনের বস্ত্র বিক্রির নামে ক্রেতাদের গলা কেটে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কোন অভিযান নেই, আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া প্রশাসনিক কর্তৃৃৃৃপক্ষ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে অথবা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাতে প্রতারণা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে ক্রেতারা অভিমত দেন।
আজ শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পার্বতীপুরের বস্ত্র বিপণিগুলোতে শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী পুরুষের পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের নানা প্রকারের বাহারী পোশাক বেশী দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ভারতের তৈরী পোশাক বলে ক্রেতারা জানান।
অন্যদিকে পোশাক বিক্রেতারা জানান, ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলের কারনে সেখানকার নায়িকা ও মডেল তারকাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। অধিক মূল্যে তৈরী পোশাক বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন ব্যবসায়ী মুখ খুলতে রাজি হননি।
ঈদের বাজারে বস্ত্র বিতানগুলোতে সব ধরনের ক্রেতা প্রতারিত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, অভিযোগটি তিনি জানতে পেরেছেন। এব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top