সকল মেনু

ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে

indexএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: বিদ্যুতের উৎপাদকেন্দ্র ভোলায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। রমজান মাসে এবং তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এ জেলার গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেলার ৭ উপজেলাতেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এখানে বিদ্যুৎ আসে আর যায়। আবার বিনা নোটিশেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন সাধারণ গ্রাহকরা। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৭ ঘন্টা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ফলে টানা ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল পুরো উপজেলা।
একদিকে পবিত্র মাহে রমজান, অন্যদিকে প্রচন্ড গরমে আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়েন ওই উপজেলার হাজার হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। রমজানের ভেতরেও গ্রাহকদের অবগত না করে আকস্মিকভাবে টানা ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক লিটন চৌধুরী।
তিনি বলেন, এমনিতে এখন প্রচন্ড গরম। এর মধ্যে কোন মাইকিং ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ  রেখে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে ফেলা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের খাম-খেয়ালীপনা ছাড়া আর কিছুই না।
একই উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক কবির চৌধুরী বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৬/৭ ঘন্টা উপজেলায় বিদ্যুৎ ছিলনা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে শুক্রবার বিকেলে বেরাহানউদ্দিন উপজেলা বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলী আবুল কালামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ভোলা সদরেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এখানেও বিদ্যুৎ আসে আর যায়। বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ভোলা সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকায় গ্যাসভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবা গ্রামে গ্যাসভিত্তিক ২শ’ ২৫ মেগাওয়াট সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রসহ প্রায় আড়াইশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করার পরেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে সাধারণ গ্রাহকরা। এতে করে বিদ্যুতের হাজার হাজার গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা আরো জানায়, ভোলায় ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিভিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)’র বিদ্যুৎ লাইনটি জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি-বাতাসের অজুহাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখে।
ভোলা শহরের কালিবাড়ি রোড এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক অমিতাভ অপু বলেন, মেঘ দেখলেই  ভোলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য মেঘের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ গ্রাহক আবু তাহের বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেলা ভোলায় বিদ্যু বিভ্রাট মেনে নেয়া যায়না। বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারির কারণে ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
ভোলা শহরের হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক এডভোকেট জহুরুল ইসলাম খুসবু  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোলায় প্রায় আড়াইশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপিত হলেও আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। তিনি আরো বলেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে বিদ্যুৎ আসে আর যায়। রমজান মাসেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে গ্রাহকরা রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিভিয়শন কম্পানি (ওজোপাডিকো) ভোলার নির্বাহি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, বাতাসের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যায়। ফলে ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনটি জরাজীর্ণ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ লাইনটি আন্ডারলাইন হলে এ সমস্যা থাকবেনা।
এ বিষয়ে ভোলার গ্যাসভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রয়েছে। তবে, ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ লাইনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।
উল্লেখ্য, ভোলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট। যা উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম। যাও উৎপাদন হয় তাও সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়না। যার কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি থেকেই যায়। তাদের কোন উপকারেই আসেনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top