সকল মেনু

গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের কাজ থমকে দাঁড়িয়ে আছে !

5fa4fe5a-e8a7-41c4-a704-d98d45dc6774 আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কাজ শুধু একটি ছোট সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এরই মধ্যে আরও সুখের খবর মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোলা থেকে পাইপলাইনে খুলনায় গ্যাস আনার প্রক্রিয়া চলছে। অচিরেই এই কাজ শুরু হবে। এই গ্যাস পাইপলাইন খুলনা ভাল্ব স্টেশনে যুক্ত হয়ে আন্তগ্রীড সংযোগ চালু হবে। ফলে এ অঞ্চলে শুরু হয়ে যাবে বৈপ্লবিক কর্মযঞ্জ।
ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনা জেলা শহরগুলোতে ভাল্ব স্টেশন, স্টাফ কোয়াটার, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। শুধু ভেড়ামারার কাছে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপ লাইন পারাপারের স্থান নিদ্ধারন করলেই ১ মাসের মধ্যে ১০০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাকি থাকবে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস সরবরাহ উদ্বোধন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ হলে সম্ভাবনাময় শিল্প কলকারখানার বিকাশ ঘটার পাশাপাশি দেশের এই বিরাট অংশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে। এ জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যত দ্রুত সম্ভব এই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হবে। সেই লক্ষ বাস্তবায়নে নেয়া প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়নের বদলে নানা কারণ দেখিয়ে বারবার আটকে রাখা হচ্ছে। কি কারনে আটকানো হচ্ছে তা এই প্রকল্পের পরিচালক বলছে না।
তথ্যানুসন্ধানকালে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হতে ঝিনাইদহ ও যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ মাঠ, সড়ক, খাল ও ছোট নদী পর্যায়ে শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে পাইপ লাইন পদ্মা নদী অতিক্রম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পটি দ্রুত বস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। ২০২১ সালের মধ্যে মাঝারী আয়ের দেশ বিনির্মানের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়া খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে বলে ব্যবসায়ী, শিল্প ও কল-কারখানা মালিকরা জোর দাবি জানিয়েছে।
সুন্দরবন গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে কর্তৃপক্ষ বলেছে গত প্রায় ২ বছর আগে দীর্ঘ প্রত্যাশিত গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের মাঠ, সড়ক পর্যায়, ছোট নদী ও খাল অতিক্রমের পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়। শুধু বাকি রয়েছে পদ্ম নদী ক্রসিং। পাবনার ঈশ্বরদি থেকে ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পাইপ লাইন বসানোর পর তা সরাসরি নওয়াপাড়া ও খুলনা শিল্প অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। একইভাবে এই পাইপ লাইনটি মংলা হয়ে ভোলার শাহবাজপুরের গ্যাস ব্লকের সাথে সংযুক্ত করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা ছিলো। মোট ১৬৫ কিলোমিটারে ২০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প যথা নিয়মে একনেকের সভায় ৫৩১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে বলা হয়েছে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কি কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। বহু অনুনয় বিনয়ের পর প্রকল্প প্রকৌশলী আবুল কাশেম অফ দ্যা রেকর্ড বলেছেন, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ ব্রীজের কারনে নদীর তলদেশে এত বেশি পরিমানের পাথর রয়েছে যে, নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ লাইন আনা সম্ভব নয়। আবার লালন শাহ ব্রীজের উপর দিয়ে পাইপ লাইন আনতে দিবেনা সেতু কর্তৃপক্ষ। এখন বাধ্য হয়ে লালন শাহ ব্রীজ থেকে একটু ভাটি থেকে পাইপ লাইন পদ্মা নদী অতিক্রম করবে। এ ক্ষেত্রে চুড়ান্ত অনুমোদন এখনও মেলেনি এ জন্য গ্যাস সরবরাহ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
বৃহত্তর যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া জেলার অথনৈতিক চেহারা বদলে দিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রতিশ্রুত এই গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সর্ব মহল থেকে বারংবার দাবি জানানো হয়েছে।
বড় ও মাঝারি শিল্প কারখানার মালিকরা বলছে, অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হলে অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত হিসাবে চিহ্নিত এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন যেমন তরান্বিত হবে তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে এ অঞ্চল সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এডিপি’র অর্থায়নে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে পেট্টো বাংলার গ্যাস বিপনণের নতুন প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয় বিভাগীয় শহর খুলনায়। কিন্তু গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে তারাও কোন ধারণা দিতে পারছে না। তবে তারা বলছে, দ্রুত গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। শিল্প-কারখানা মালিকরা বলছে কত দিনে এ সমস্যা সমাধান হবে তা বলা খুব কঠিন। বৃহত্তর এই তিন জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ ও তারই প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
তারা বলেন, দ্রুত গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধ এই তিন বৃহওর জেলায় ব্যাপক গতি সঞ্চারিত হবে। এ অঞ্চলের জুট, টেক্সটাইল, সুগারমিল, ট্যানারী, ইট ও মটরশিল্প, কেবল ইন্ডাষ্ট্রিসহ অসংখ্য বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পরিচালনা ও স্থাপনা কর্মকান্ডের পথ প্রশস্ত হবে। শুরু হবে এ অঞ্চলে এক বিশাল কর্মযোগ্য। সৃষ্টি হবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। জাতীয় অর্থনীতির চাকা সম্মুখে ঘুরবে পুরো মাত্রায়।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে শিল্প কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষে অবিলম্বে এই অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ কোটি জনতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top